সোমবার, ২ জুলাই, ২০০১

স্বপ্নেরা কথা কয়

স্বপ্নেরা টুপটাপ ঝরে পড়ে হৃদয়ের কার্নিশে
শত কোলাহল যেন স্তব্ধতায় লীন হয়ে যায়
শুধু শোনা যায়, স্বপ্নপতনের ধ্বনিত প্রতিধ্বনি
বাতাসে ঝলসে ওঠে কাতর আর্তনাদ।
প্রেয়সী বাতাস-- তার বুক চিরে যায় চকিতে
হাহাকার মিশে থাকে কনে-দেখা আলোয়
দিগন্তের রেখা মুছে যায় নির্ভুল প্রণয়ে
আর সূর্যের সাথে তার নিবিড় মিলনে।

চরাচর মিশকালো,
হায়েনার চোখ জ্বলে রাস্তায় রাস্তায়
সূর্য ডুবেছে কেন? জানো কি তুমি?
আজ বিকেলের রোদ মরে গেছে
কুকুরের পঁচা-গলা লাশ যেখানে পড়ে আছে।
আকাশের টুকরো টুকরো নেমে এসেছিল
নগরীর প্রান্তে, যেখানে অরণ্য ঘুমিয়ে রয়।
দেখনি তুমি-- মাথার উপরে প্রচণ্ড আকাশ নেই--
আছে তার কঙ্কাল। আকাশের পাঁজরের
হাড়ের ফাঁকে কালো শূন্যতা মুখ ভ্যাংচায়।
অরণ্য আদিম আর নিষ্পাপ থাকেনি
বাতাস তখনো যেন ধর্ষিত হয়নি।
টেট্রন-পলিয়েস্টার, থার্টি ফাইভ- সিক্সটি ফাইভ
কাপড়ের ছেঁড়া টুকরো পড়ে থাকে।

ঘাসেরা বিবর্ণ যেখানে,
কিশোরী ধরণী যখন চুপচাপ প্রলাপ বকে।
তার বুকে শুয়ে থাকে নরমাংস
যার হৃদয় আজ চিরে ফালাফালা
এলোকেশী? তার এলোমেলো চুলগুলো
আমার মুখে জড়িয়ে থাকে, যেন ভেজা গোলাপ।
রাত বাড়ে অরণ্যে, সিক্ত শিশিরের পদশব্দ।
আজিকার বিকেলের মেয়ে--কারা যেন তার
হৃদয়টাকে ছিঁড়ে নিয়েছে।
বুকে তার জমাট বাঁধা আধাঁর হারায়--
নখের আঁচড় আর রক্তের শুকোনো দাগ....
সেখানে ঘাস মাটি প্লাবনে ভেসে যায়
এলোকেশী পঞ্চদশী---
তার রক্তের কুলুকুলু ধ্বনি... শুধু রক্ত বয়ে যায়
এলোকেশী বিস্রস্ত!

বিস্রস্ত সেই প্রতিবিম্ব ঢেকে দেয় আঁধার
এলোকেশী তবু পড়ে রয়।
ঘুমাও তুমি, যেন কতকাল পরে আমি
তোমায় দেখি সেই আঁধার কালো অমানিশায়
রাত বাড়ে অরণ্যে, হলদে হলদে পঞ্চমীর চাঁদ
হাসিমুখে উঠে আসে এলোকেশীর পায়ে।
যেন চুপি চুপি চুমে যায় তার পায়ের ভাঙা নুপুর।

স্বপ্নেরা টুপটাপ ঝরে যায় হৃদয়ের কার্নিশে।