বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০০৯

রঁদেভু


"টেবিলের কোণে মেয়েটি বসে ছিল"
এই দৃশ্যটা বানিয়ে আমি দ্বিধায় পড়ি
সেখানে সে বসে ছিল, কি ছিল না
এমন সন্দেহ আমাকে দোটানায় ফেলে।
আবার, আমি দেখেছি এমন দৃশ্যের পেছনেও
কেউ কেউ ঘোলা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকে;
মেয়েটি একাই বসে ছিল, বাঁকানো পিঠ টেনে ধরে।


আমি চুলের পাশে উপবৃত্তাকার কাঁধ দেখি
ওড়নার প্রান্তে শাদা পায়রার ভার দেখি,
প্রথাগত চোখ খুলে ভাঁজের নিভৃতে মেলে দেই
কোমল উরুতে খিলখিল হেসে গড়িয়ে দেই মার্বেল
মেয়েটি সুস্মিতা, কিছু মনে করে না।
মার্বেলেরা মেয়েটির কোল ঘেঁষে থাকে
জমাট কোমল স্নেহমেদে লুকোচুরি খেলে
পায়ের নখে গেঁথে যায়।
এর পরে স্যান্ডেল তুলে সে চলে যাবার পর
আমি রেস্তোরাঁর রসুইঘরে পৌঁছে যাই,
তেলমাখা গলিত বাবুর্চি আমাকে স্যালুট দেয়
আমি আন্দাজে হেঁটে এসেছি জেনে সে ও বোকা ওয়েটারটি বিস্মিত হয়
অন্ধরাও নিঁখুত হতে পারে এমন প্রমাণ পাওয়া গেল!


বাবুর্চির চৌকো ছুরিতে আমার আপাত-অনিচ্ছুক মাংসেরা
প্রক্রিয়াজাত হতে থাকে
মেয়েটি ফিরে এসে টিপ্‌সের ঝুড়িতে চোখ দুটো ফিরিয়ে দেয়।





সোমবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০০৯

মঙ্গলালোকের ডাক

নাহ্‌, বুড়োটার বুড়ো হাড়ে কোন মায়া-দয়া নাই। সারাজীবন গাদা গাদা কী সব লিখেছে! মাথা মন হৃদয় সব উল্টে পাল্টে দেয়া ব্যাপার-স্যাপার। আজকে যেমন। আমার এভাবে কিছু করার প্ল্যান ছিল না, এমনকি আমার এই গানটা শোনার কথাও ছিল না। আমি এমনিতেই তাঁর গান কম শুনি। অনেক বেশি মনোযোগ দাবি করে বলে আমি তাকে এড়িয়ে চলি। শুনলে মুগ্ধ হই বলে, ভাবালুতায় পেয়ে বসে বলেও এড়িয়ে চলি। এরকম আরো নানাবিধ আবেগজনিত বিপ্লব ঠেকাতে আমি বুড়োর গান শুনি না।


আজকে একটা গান শুনেছি। পিয়ানোতে টুঙটাঙ করছে আর একটা মেয়ে গাইছে। একটু পরে আরেকটা ছেলেও যোগ দিল। শুনতে শুনতে কী মোহে পেয়ে বসলো, কী কান্না গলায় মাছের কাঁটার মতো আমাকে আজকে গেঁথে দিল! দুর ছাই, এরকম আবেগে বুক ভাঙার কোন মানে নাই, কোনই মানে নাই।






আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর | |


মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,
বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে | |


বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,
করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে | |


স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ,
কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে | |

শুনতে হলে এখানে ক্লিক করুন!

রবিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০০৯

ছন্নছাড়ার পেন্সিল


এভাবে একদিন আমার কথাও শুকিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় আমি মূক।
হাসিও মুছে যেতে পারে হঠাৎ পিপাসা পাওয়া রাতে
এমনকি আমি বোধহীন হতে পারি, এ ঘটনাও অসম্ভব নয়
নিউরনে স্ফুলিঙ্গ থেমে গেলে আমি অরূপাক্ষ নদে ভেসে যেতে চাই।
***





কাঠবেড়ালীর চকিত চাউনি আমার লঘুপায়ের সঞ্চারণে বিশ্বাস করে না।
বহু আগের স্মৃতি তাকে বাকলের গুঁড়োয় লুকিয়ে ফেলে
পাশে কিছু ব্যাধের শর পড়ে ছিল।
***





চোখের তীর খুলে এসো, আমি বিঁধে ফেলার আগে কিছু ভাবিনি!
***





এরকম প্রজননে আমার ক্লান্ত লাগে সত্যি,
বিধাতাহীন দেশে জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে ধীরে।
***





ব্লাউজ সেলাইয়ে অরণী টেইলার্সে ভীড় জমে,
কারিগরের বউ খুব বোকা মেয়ে!
***





তুমি জানো যে
শরৎ খুবলে নিয়ে গেছে আকাশের মেঘ,
তবু এই শীতে এসেও নিনির্মেখ
চেয়ে থাকো কুয়াশার রোদে।
***





কাজল হিসেবে প্রশ্ন মেখে আসা এক সুচতুর ছল
কারণ সব প্রশ্নের জবাব বিধাতাও দিতে পারে না!
***





ধর্মতত্ত্ব
না, হাওয়া-কে আপেল খেতে
প্রলুব্ধ করেনি আদি সাপ
এ সবই শুধু
তথ্যের নির্জলা জালিয়াতি।


আদম খেয়েছে আপেলকে।
হাওয়া খেয়েছে আদমকে।
আদি সাপ খেয়েছে হাওয়াকে
কালোতম অন্ত্রের ভেতর।


বিধাতার কলহ-আহ্বান শুনে
আদি সাপ শুধু ক্রূর হেসেছিল
স্বর্গের মাঝে মধ্যাহ্ন-ভোজ
হজম করতে করতে।


[মূলঃ টেড হিউজ]
***





আমি সৎ নই, অনুভূতির ব্যাপারে স্বার্থ বুঝি
এবং স্বার্থের চেয়েও বেশি লালসা বুঝি
তোমার স্তনে দাঁত গেঁথে ফেলার আগে
আমি অনেক নারীবাদী ছিলাম।
***

শুক্রবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০০৯

ঘুম

ড্রয়ারে ঘুমিয়ে ছিল তামাটে নীলচে শার্ট, সিল্ক বুননে সুতোক্রমে রঙের ঢেউ মেলে।


"অনেকদিন পরা হয় না" ভেবে হাতে টেনে নিতেই ঝুরঝুরে স্মৃতিকণা অলস সকালে ঝরে গেল। হাতার কাছে কাগজ-গন্ধী ঘোলাটে রোদ স্মিত হাসি দিয়ে হাত নাড়ে, আর আমি বিনিময়ে বোকা বোকা হেসে দেই! অনেকদিন পরে এভাবেই চোখাচোখি ঘটে গেল চকিতেই। সকালেই ওম-কম্বলের সুখ ছেড়েছি, লঘুপায়ে সরে গেছে ক্লান্ত মাকড়শা কিংবা ক্ষয়া-রাত জাগা থাইকাঁচ। হলুদ কুয়াশাও আড়মোড়া ভাঙে, কারণ নিজস্ব অভিবাসন সেরেছে পৃথিবী অন্য কোথাও অনন্য রাতের শহরে।


"স্যাটারডে-২৪" গায়ে মেখে বসে থাকে রূপসী ক্যালেন্ডার।

বুধবার, ২১ জানুয়ারী, ২০০৯

প্রকৃত অনুভূতির চরিত্র বিষয়ক

বিষাদকে একটা চরিত্র ধরা যাক। ধরা যাক তার হাত মুখ নাক চোখ গলা গ্রীবা চুল সবই আছে। তার সাথে আমার প্রায়ই দেখা হয়। পথে, ফুটপাতে, রিকশা ঠিক করার সময়ে, পাবলিক বাসে ঝুলতে ঝুলতে ঘামে ভিজভিজে হতে থাকলে। মাঝে মাঝে পরিচিত ঘরে ফিরে জুতোজামা খুলতে খুলতেও তার মুখ দেখি। সে এসে বসে থাকে বিছানার প্রান্তে। চুপচাপ। বেশি জ্বালায় না। আগে অনেক বিব্রত করতো। এখন আমিও ঘাগু হয়ে গেছি। ওকে আলটপকা চিৎপটাং করে দিতে পারি। তখন দেখা যায় সে থতমত খেয়ে বেকুব হয়ে গেছে।


হর্ষকেও আরেকটা চরিত্র দেই। সে বেশ ধুরন্ধর-গোছের। সবটুকু সময়ে আসবে না। মাঝে মাঝে দেখা দিবে। খুব অপ্রত্যাশিত কোন সময়ে একেবারে চমকে দেয়ার মতোন। মাঝেমাঝে তাকে টের পেতে সমস্যা হয়। মজার ব্যাপার, বিষাদকে আমার যতটা ভয় লাগে, যতটা আমি সন্তর্পণ সজাগ হয়ে থাকি কখন কোন চোরাগোপ্তা আক্রমণ করবে সে, ঠিক সেরকম আতিথেয়তায়, আমি হর্ষের জন্য অপেক্ষা করি। কখন সে আমাকে উন্মাতাল আবেশে মাতিয়ে দিবে। দিনের সূর্যরশ্মির মতো অকৃত্রিম প্রবাহে আমার চরাচর ভাসিয়ে দিবে।


আরেক চরিত্র দুঃখ। না, কোন সাদামাটা দুঃখ নয়, যেগুলো আমি রোজ দেখি, পাই, আত্মপীড়নের সুখের মত উপভোগ করি। তারা নয়, সেগুলো নয়। দৈনন্দিন সেসব দুঃখ খর্বাকৃতি বামনের মত অনেকটাই যাপনের অনুষঙ্গ। মাঝে মাঝে একটু'র জন্যে বাস মিস করে আধা ঘণ্টা দেরি হওয়া, অফিসে ঢোকার ঠিক আগেই ঝুপঝুপে বৃষ্টিতে ভিজে একসা হওয়া, অফিস ছুটি একটু আগে একগাদা কাজ এসে হাজির হওয়া, ফেরার পরে বাসার ইলেকট্রিসিটি না থাকা, ঘুমানোর আগে টের পাওয়া যে এমাসের বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়নি আর সেটা কালকেই দিয়ে দিতে হবে, আর দিয়ে দিলেই অনেকগুলো টাকা বের হয়ে যাবে- এরকম ছোটখাট দুঃখেরা মশারির মাঝে গুপ্তচর মশার মত বসবাস করে।


আমার মনোযোগ অন্যরকম দুঃখের দিকে। তিনি বড়ো ভয়াবহ খদ্দের, ঝোলাভর্তি ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে আসেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই অবিবেচকের মতো একটার পর একটা বাণে আমাকে জর্জরিত করে। অশ্বত্থামা মারা গেছে শুনে দ্রোণাচার্যও এতটা রেগে ছিল না! তাঁর রুদ্ররূপে আমার কেবলই মায়ের মুখ মনে পড়ে! এরকম দুঃখের সাথে মৃত্যুসাধ আর গ্লানি আর বিষণ্ণতা মিশে থাকে। এরকম দুঃখদের তোড়ে আমি ভেঙে যেতে থাকি, দুমড়ে যেতে থাকি, ক্ষয়াটে হয়ে উঠতে থাকি, বিলীন হয়ে নামতে থাকি। আমার চেহারা আর আচরণেও তাদের গভীর ছাপ পড়ে যায়। যে কেউ, চেনা-অচেনা বা রাস্তার পেরিয়ে যাওয়া মানুষ, আমাকে দেখলেই বুঝে ওঠে আমি সেই দুঃখবোধে বুঁদ হয়ে আছি। নেশার মতোই আমার ধমনীতে তারা খোড়ল কাটছে।


আমি জানি না ঠিক কীভাবে মানুষ দুঃখবোধ কাটিয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত আমরা নখের আঁচড়ের মত আক্রান্ত হই, সেই অবস্থা কী করে উপশমিত হয়, এভাবে 'সেরে ওঠা'র প্রক্রিয়াটা কেমন তা বুঝে উঠতে চাই আমি। আশে পাশের অনেক স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াই আমি বুঝি না। কীভাবে একটা গাছ ক্ষুদ্র চারা থেকে লকলকিয়ে বেড়ে ওঠে, কীভাবে ঋতুরা নিয়মিত বিরতিতে ফিরে ফিরে আসে, কীভাবে পিঁপড়ের সারি টের পায় যে ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে, এরকম আরো হাজার প্রাকৃতিক নিয়মের পেছনের কারণ আমার অজানা থাকে। তাতে কিছু যায় আসে না কারণ এসব প্রক্রিয়া আমাকে ছাড়াও সুন্দর চলেছে, আমি চলে যাবার পরেও সুন্দর চলবে। আমার জীবনেও তারা নীরবে প্রচ্ছন্ন-প্রভাব খাটিয়ে যাবে অজান্তেই। তবে দুঃখবোধ কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা আমার বুঝে নেয়া দরকার। খুব জরুরি না হলে আমি এভাবে ভাবতাম না।


বিষাদ বেশ চালাক। আজকাল আমাকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে পর্যুদস্ত হতে দেখে সে ক্রূর হাসে। ঠা ঠা করে খ্যাক খ্যাক করে হো হো করে হাসে। আর মাঝে মাঝে উন্মাদের মত লাফিয়ে আমার ঘাড়ে চড়ে বসে। আমাকে গলাধাক্কা দেয়। নির্মমভাবে লাথি কষায় আমার পাঁজরে। আমি বিষাদের ওপর তীব্র ক্রোধ অনুভব করি। "শালা কুত্তার বাচ্চা! শয়তান! শুয়োরের বাচ্চা!" এরকম গালি ছিটকে ছিটকে প্রস্রাবের মত বের হতে থাকে। অধিক যন্ত্রণায় মানুষ কেমন পশু হয়ে যায়, তাই না? পাশবিক মাংশ ঢেকে রাখা সভ্য-ভব্যতার খোলশটা খসে পড়ে। গোঁ গোঁ করতে করতে আমি উঠে দাঁড়াই।


এক নাগাড়ে দুঃখ আর বিষাদের সাথে যুদ্ধ করি। মাঝে একটু হর্ষ এসে ফিক করে হেসে আমার দিন-রাত-দিগন্ত-দেহ ঝলমলিয়ে যায়। তারপরও অবিশ্রান্ত আঘাতে আমি ক্লান্ত হতে থাকি মনে মনে। এরকম লড়াইয়ের শেষ আমার মৃত্যুতেই, এই বোধটা আমার কোষের মাতৃকায় ঢুকে যায়। পেরেকের ধারে সেই চিন্তাটা আমাকে কষ্ট দিতে থাকে। নিরর্থক মনে হয় তাবৎ লড়াই, সকল ক্রোধ। বেমালুম ফাঁকিবাজি মনে হয় এই নিঃশ্বাস, এই হেসে ওঠা, এই চুমু-দীর্ঘশ্বাস-সঙ্গম-রাত্রিযাপন-দিনপালন। শূন্যতার আসল অর্থ আমরা জানি না বলেই ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে বাঁচি। একবার ঝলক দিয়ে দেখা দেয় নিরতিক্রম্য ব্যর্থ সমাপ্তি। তখনই চট করে বুঝে যাই এখানে সুখের নামে, দুঃখের নামে, বিষাদ কিংবা হর্ষের নামে আমাদের জীবনের বেচাকেনা হয়ে যায় চোখের পলকে, আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই।


ছলকে এক ফোঁটা পানি বেয়ে নামে পাপড়িমূল থেকে। এত বিষাদাক্রান্ত যাপিত জীবন আমাকে কাঁদাতে পারেনি, কিন্তু দূর্লঙ্ঘ্য এই অর্থহীনতা আমাকে উন্মূল করে দেয়। জানি, এই জীবনের মাঝে দুঃখ-বিষাদ-হর্ষ চরিত্রেরা আমাকে মনে রাখবে না। তাদের সাথে মিতালির জীবন একরকম কেটে যাচ্ছে। মৃত্যুর পরেও তারা এই নশ্বর পৃথিবীর বুকে অন্য মানুষের হৃদয় খুবলে খুবলে খাওয়ার সময়ে এক পলকের জন্যেও আমার কথা মনে করবে না।

সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০০৯

আর্থ্রোপোড-ভার্টিব্রেট মিথোস্ক্রিয়া

মশা কামড়াচ্ছে। পিন্‌ পিন্‌ করে কয়েকটা মশা ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার রুমটাতে। আমি হাত বাড়িয়ে চটাশ চটাশ করে মারার চেষ্টা করেছি কয়েকবার, মরেনি। আমার লক্ষ্যভেদ করার প্রয়াস খুবই হাস্যকরভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সম্ভবত হস্ত-চক্ষুর সমন্বয় করার ব্যাপারটিতে আমি খুবই খারাপ। একটু পরে চটাশ চটাশের কারণে লাল হয়ে যাওয়া হাত টেবিলে মেলে রেখে আমি মশা-মারার হাল ছেড়ে দেই, এবং এই সুযোগে দুয়েকটা মশা আমার হাত-পায়ে দ্রুততার সাথে কামড় দিয়ে দেয়।


সবেগে নাড়া খেয়ে তারা হুল ফুটানোর পরবর্তী রক্তপানের ক্রিয়াটি করতে পারে না। আমি সূঁচবেঁধা ব্যথাটুকু ছড়িয়ে যেতে দেখে নিরুপায়ের সান্ত্বনা হিসেবে এটা চিন্তা করি যে, যাক্‌, রক্ত তো খেতে পারেনি! তবে ধীরে ধীরে হাতের এবং পায়ের মশা-কামড়ানো জায়গাগুলোতে একটা অস্বস্তিকর চুলকানি এবং তৎপরবর্তী অদম্য ইচ্ছাটি সয়ংক্রিয়ভাবে আমাকে অস্থির করে তোলে। এরকম অবস্থায় দপ্তরের পোশাকী ভদ্রতাকে পাশ কাটিয়ে আমি নখের মাহাত্ম্য প্রমাণ করার জন্যে খশখশ করে হাত-পায়ের হুল-বাসস্থান চুলকাতে থাকি। রক্ত বাঁচানোর তৃপ্তির তখন লেশমাত্র বাকি নাই।




২.
অনেক নীচে লোকটিকে শার্ট-প্যান্ট জাবড়ে জাবড়ে চুলকাতে দেখে আমার খুবই ভালো লাগে। রক্ত খেতে না পারায় খুব খারাপ লাগছিল। সবেমাত্র নল ঢুকিয়েছি, একটা চোঁ চোঁ টান দেবার আগেই ব্যাটা এমন ঝাঁকুনি দিল, যে ছিটকে পড়ে গেলাম। হুলটা চামড়ার ভেতরে ঢোকানো ছিল। ঝাঁকিতে ব্যথা পেয়েছি, এখন টন্‌টন্‌ করছে! একটু উড়ে ওপর থেকে দেখলাম যে লোকটা খুব দ্রুততায় নড়াচড়া শুরু করেছে। মনে বেশ তৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ল, রক্তপান না করতে পারার অশান্তি আর ক্ষুধাটাও এখন আর গায়ে লাগছে না!


তবে ক্রমশ ক্ষুধাটা বাড়ছে। খুব ইচ্ছা করছে লোকটার কলারের কাছে বের হয়ে থাকা চামড়ায় গিয়ে বসি। মনকে বুঝালাম দিলাম, ব্যাটা তো ব্যস্ত আছে চুলকানোতে, এইফাঁকে গিয়ে চট করে দু'টান...






পরিশিষ্টঃ
ঘাড়ের কাছে আবারও পরিচিত তীক্ষ্ণহুল টের পেলে আমি ডান হাত সপাটে চালিয়ে দেই। চটাশ!






ভাগশেষঃ
হাতের সাথে ভেজা ভেজা চটকানো মশা-মৃতদেহ উঠে আসে।

বৃহস্পতিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০০৯

একদিন ভোর দেখার রঙ আমাকে মেরে ফেলবে না


গ্রাফিতি-ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম বিবিধকোণ ছকত্বকী ফুটপাত সেখানে পদছাপেরা ক্ষণস্থায়ী এবং ধুলিকণার নিবিড় নিবাস আমি হাঁটছিলাম অথচ সেখানে আমার ছাপ পড়ছিল না


প্রসারিত হাতের রেখাগুলো কুঁচকানো আমার দিকে তেড়ে আসে "ভিক্ষা দে" চাপা ক্রোধ "দিবি না কেন" আমি কররেখার মতোই কুঁকড়ে যাই "দে" অলৈঙ্গিক শৈথিল্য কামড়ে ধরে তলপেটের চিনচিনে ব্যথায় "দিবি না" ওই হাত অনেক জীবন সয়েছে ইঁট-চাপা-মুখে ভ্রষ্টাচার গিলেছে এখনও হাত বাড়াচ্ছে আমার দিকে "সুশীল ভণ্ড ভিক্ষা দিয়ে যা" আমি রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ডোবা নালা পেরিয়ে যাই আইলের এপাশে কর্কশ চোখেরা জ্বলজ্বল শ্বাপদী-তীরে আমাকে বিঁধি ফেলে


আঁধার পেরিয়ে বাতাসে উড়ি ওড়ার শব্দে রাস্তায় বিছানা পাতে নীল অপরাজিতা কিংবা বেগুনি কলমীফুল আমি উঁচু থেকে দেখি ফুটে আছে হলুদ আলোর রানওয়েতে উড্ডীন জাহাজে করে দমফাটা বেলুনদের বুকে নিয়ে উড়ে যাওয়া চোখহীন মানুষ পৃথিবীর অপরপ্রান্তেও চোখ বুঁজতে পারে না ক্ষুধা ক্লেশ সঙ্গমক্লান্ত শরীরেরা প্রসবিত কোমল সনেটেরা


আমার ফিরে আসাতে মেদ জমে থাকে ভার হয়ে থাকে প্রলম্বিত ছায়া শরীরে সময়ের ছাপ পড়ে যায় ফেরার পথে তীক্ষ্ণ পোঁচে কেটে যায় আদিগন্ত জলজ রাজপথ গলিত প্রিজমে আমি চোখ মেলে আতিপাতি বিচ্ছুরণ খুঁজি লাশ খুঁজি গুপ্তক্রোধ খুঁজি বিপন্নতর রোমকূপ খুঁজি যেখানে নিভৃত গ্লানি জন্ম নেয়
আমি জানি এরকম কষ্টের কোন ব্যাখ্যা নেই সূত্র নেই প্রকরণ নেই এত নেই নেই তবু কষ্ট আছে কারণ ছায়ার গায়ে বিষাদ-রহিত ওম জমে থাকে না একাকীত্বের জন্যেও ডাক পড়ে পৃষ্ঠপোষকের যুদ্ধের জন্যে সীমানা-ভাঙার অপরাধের চেয়েও জরুরি তোমার চোখ জিব হাত চুল কেটে পুড়িয়ে দেয়ার জান্তবতা


খুব সাধ হয়ত একদিন ভোর দেখার রঙ আমাকে মেরে ফেলবে না

মঙ্গলবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০০৯

"ফুটনোট অফ এ মেমো"

...পানিতে হাত দিয়েই শিউরে উঠলাম। ঠাণ্ডা পানি! হাতে স্পর্শ করা মাত্র ছ্যাঁৎ করে লাগে। সরিয়ে নিতে ইচ্ছা করে সাথে সাথে। কল থেকে বরফ-ভাঙা পানি নেমে আসছে। আমি তারপরেও হাত পানির মধ্যে পেতে রাখি। আঙুলগুলো ডলে ডলে তেল আর খাদ্য ধুয়ে ফেলি।


আমার অফিসে ক্যান্টিনে ফোন করলে, খাবার দিয়ে যায় রুমে। একটু আগে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম, কী আছে? বললো, চিকেন বিরিয়ানি আছে। খেতে খেতে মনে হলো অনেকদিন বিরিয়ানির ক্ষিদে জিভে লেগে ছিল। টের পাইনি। এরকম আরও অনেক ক্ষুধা জিভে লেগে আছে হয়তো। মাত্র তিন ইঞ্চি লম্বা আর ইঞ্চি দেড়েকের মত মোটা অঙ্গে কত স্বাদ জমে থাকে। হালকা ঝোল মাখানো, তেলভাজা নরম ভাতগুলো হাতে মেখে একটুকরো মুরগীর মাংশের সাথে মুখে চালান দিচ্ছি। ভেতরে জিভের নড়াচড়ায় মিশে যাচ্ছে, পিষে যাচ্ছে দাঁতে।


খাওয়া শেষে হাত ধুতে গিয়েই স্বাদ মুছে গেল জিভ থেকে। বদলে চামড়ায় শৈত্য গেঁথে গেল। হাত মুছলাম। মুখের কাছে নিয়ে একটু ভাপ দিলাম। কিছুতেই কিছু হয় না। আসলেই, কত অজানা জড়-স্পর্শও আমাদের স্টিম্যুলেট করতে পারে এভাবে!...

শনিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০০৯

চক্র

তোমাকে গড়ছিল কেউ,
জঠরের ভেতরে মাতৃকা মিশিয়ে আঠালো স্নেহে
তুমি ভ্রূণ থেকে স্বচ্ছ অভ্রশরীরে বেড়ে ওঠো
অপত্যকোষে মায়ের মায়া শুষে নাও নাভিমূলে
উষ্ণতরলে ডুবে তুমি গোলাপি-স্বপ্ন গড়ো!


প্রসবের শোকে তুমি প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদো
বিকট জান্তব পৃথিবীর বাতাস তোমাকে গিলে খেতে
দ্রুতগতিতে ছুটে আসে
সজোরে জাপ্‌টে ধরে
খর-আঁচড়ে তোমার নতুন ত্বকে দাগ ফেলে দেয়!


প্রবলশোকও মানুষ কাটিয়ে ওঠে- এমন নিয়ম মেনে নিয়ে
তুমি বেড়ে ওঠো,
অঙ্গহানি ছাড়াই তোমার শৈশব কৈশোর কেটে গেলে
তুমি খানিকটা নীরবেই, গর্ভস্মৃতি ভুলে যাও
পরিবর্তে, খানিকটা নিয়মেই, তুমি ধর্ষকাম পৃথিবীকে ক্ষমা করে দাও।


তারপর নিখুঁত-বুননে তোমার ফেলোপিয়ানেও জমে
সমূল-জাইগোট, আদিবিন্দুপ্রাণ!
ধারণের তীব্রস্বাদে তুমি ব্যাপ্ত হও চেতনায়
মাতৃকণায় একইভাবে মিশিয়ে দাও মায়া।


তারপর একদিন হৃদয় ছিঁড়ে একটুকরো ভালোবাসা বেরিয়ে এসে তোমাকে পূর্ণ করে দেয়!

বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০০৯

রিপুহত্যাযজ্ঞ

১.
...দুপুর গড়িয়ে চলে এলেও ঘেরা-পর্দা ঘরে সবুজ-আঁধার, বিনম্র; চলাচল করে। আমি ওঘর থেকে এলোমেলো ঘুম পায়ে এসে একটু হকচকিয়ে যাই, দেখি অন্ধকারের সবুজ মায়া তখনও যা টেবিলের প্রান্তে লেগে ছিল। আমাদের ঘরের একাকী রসনা-টেবিলে কিছু বোনা-কাপড়ের ম্যাট চকচকে-কাঁচ গেলাশেরা মিনারেল বোতলে ভরা মমতা-জল উদভ্রান্ত আর বিষন্ন বসে থাকে। এ ঘরে এলেই তারা সবাক-সশব্দ হয়ে ওঠে, কিশোরীর ঋতুমন্ত হয়ে ওঠার মতো তাদের কোমল ব্রীড়া, গোপন কান্না আমার নখাগ্রে মিশে যেতে থাকে। আমি ইতস্তত দ্রুততায় ঈর্ষা-কাম-ক্রোধ-লোভঃ প্রথাগত রিপুসমূহ লুকিয়ে ফেলি তারা ভয় পেতে পারে ভেবে...


২.
...সারাদিন বাইরে ঘুরে আমি রিপুগুলো ঘষে ধারালো ক্ষুরধার করেছি হা হা করে হেসেছি অস্ত্র বাগিয়ে চিরেছি বাগান, ফুল আর কোমল ঘাস। ঘরে ফিরে ক্ষুধার্ত দাঁতাল শুয়োরের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে দরোজা-জানালা ভাঙচুর করি ধূলো ওড়ানো কার্পেট চষে গেরস্তের জামা, চাকরের চুরি করা ট্যাঁকে গোঁজা টাকা, ছেলেটার টিফিনের বাক্স আছড়ে ভাঙতে থাকি। ভুল করে বেখেয়াল উন্মত্ততায় যেই এঘরে এলাম, রসনা-টেবিলের কিশোরী-তৈজস আমাকে নিরস্ত্রনির্মূলনখদন্তহীন করে দিল!...

সোমবার, ৫ জানুয়ারী, ২০০৯

সহোদর-মায়া

আমার জ্ঞান থাকতে থাকতেই ধারালো চাপাতির কোপে ডান হাঁটু থেকে আলাদা করে ফেলল আমার পা-টাকে। রমিজ। রমিজ আর সোবহান। সোবহানের পাশে আরো কেউ ছিল (মনে পড়ছে না)। রমিজের হাতে চাপাতিটা ধরা ছিল। কোপানোর ঠিক আগে ঝিকিয়ে ওঠা আলোয় দেখেছি রমিজের হাতের শিরাগুলো ফুলে উঠছে। সাঁ--ঝুপ! একটা শব্দের পরে আমি টের পাই পা আলাদা হয়ে গেছে। কাটাপ্রান্তে লাল লাল মাংস আর রক্ত। মোড়ের দোকানে পিজা বলে যা বিক্রি হয় পনেরো টাকায়, সেটার মতো লাগছে দেখতে। ওটার চারপাশে পোড়াটে-হলুদ রঙের রুটি থাকে। মাঝে কিলবিলে মাংশ-পিঁয়াজ, উপরে একটু সস, আর চিজের গুঁড়া মিশানো থাকে। আর মাঝখানে, ঠিক মাঝখানে একটা লাল টুকটুকে টমেটো। কোনটার মাঝখানে এক স্লাইস ডিম থাকে।


আমি ঠিক জানি না কেন আমার পিজাগুলোর কথা মনে পড়লো। রোজ অফিসে যাবার সময়, বা বাসায় ফেরার সময়ে, বা ছুটির দিনে বাইরে বেরুলে, যে কোন দিনই, দোকান খোলা থাকলেই, আমি পিজাগুলো দেখি। অভ্যাসবশত ঘাড় ঘুরিয়ে হেলানো ট্রেতে রাখা কতিপয় নিরীহ পিজা মুখ ব্যাদান করে চেয়ে থাকে। দোকানী মোলায়েম পান-খাওয়া দাঁতের হাসি দেয়। রমিজের কোপে আমার ডান পা আলাদা হয়ে গেলে আমি থকথকে একটা পিজা দেখতে পেলাম।


খুব জোরে চিৎকার করলে একসময়ে স্বর বুজে আসে। তারপরে আর ডেসিবেল রেঞ্জে থাকে না শব্দ। আমি এত জোরে চিৎকার দিলাম, জীবনেও দেই নাই এমন! তারপরের দুইদিন, যখনই জ্ঞান ফিরেছে, আমি এমন জোরে চেঁচিয়েছি, তারপরে একসময়ে জ্ঞান হারাইছি। পরে অবশ্য আর লাল পিজা দেখতে পাইনি। ওখানে ত্যানা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে কেউ। কে দিয়েছে জানি না।


দিনে দিনে ও জায়গাটা শুকিয়ে গেছে। কাল কুঁচকে যাওয়া চামড়া ছাড়া কোন অনুভূতি নাই। আমার খুব খারাপ লাগে মাঝে মাঝে, পিজাটা দেখতে সুন্দর ছিল! খালি পা নাড়ালে থাইয়ের মাংশ কেঁপে কেঁপে ওঠে, ডান পায়ের বাকি অংশের অভাবে তিরতির করে কিশোরী বালিকার মতো কাঁপতে থাকে। হায়! তার খেলার পুতুল কেড়ে নিয়ে গেছে কেউ!...







তারপরে আমি ডান পা ছাড়াই চলতে শিখে গেছি। একপায়ে বিভিন্ন কাজগুলো করতে শিখে গেছি, যেগুলো দুই পা না হলে করাটা খুবই কঠিন। মানুষ খুব অভিযোজন-ফিলিক, খাপ খাওয়াতে জুড়ি নাই। তবে মাঝে মাঝে রাতে খুব পিপাসায় কাঠ গলা নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে বুঝে উঠতে সময় লাগে আমি গুদামঘরে আছি না নিজের বিছানায়। আমাকে চারদিন একটা গুদামঘরে আটকে রেখেছিল। সেই ঘোর প্রচ্ছন্ন দুঃস্বপ্নের মত দিন-রাত ফিরে আসতে চায়। জ্বলন্ত উনুনের পাশে খোলা হাঁপরের মত শ্বাস নিই। আমি অনেকটা জোর করেই নিজেকে প্রবোধ দেই, না, তুমি নিজের ঘরেই আছ। কাঁথা সরিয়ে হাত বুলাই কাটা জায়গাটায়। শুকিয়ে গেছে একদম।


কয়েকদিন ধরে আমি চকবাজারে ঘুরছিলাম। এক হাতে ক্র্যাচ ধরে হেঁটে হেঁটে পরখ করে একটা দা কিনেছি। তারপরে দোকানের পাশেই বসে থাকা ধার দেয়ার কারিগর দিয়ে খুব ধারালো করেছি। লোকটা একবার বলেছে, "ভাই, ধার হইছে খুব!" আমি তাকে থামিয়ে আবারও ধার করতে বলেছি। তীক্ষ্ণ ধারালো দা-টা কাগজে মুড়ে ছালা পেঁচিয়ে বাসায় আনলাম। তারপরে খাটের নিচে রেখে দিয়েছি সন্তর্পণে। সাহস হয় নাই। আমার সাহস অনেক কম। মায়াও সেই তুলনায় বেশি। অদ্ভুত মানুষ আমি! দাঁড়িপাল্লার মত দু'পাশে সমান সাহস, সমান মায়া হলে এতদিনে সেরে ফেলতাম কাজটা।


কয়েকদিন খুব ভালো ঘুম হলো। দা-টা স্বপ্নেও আমাকে ভরসা দিত। ঘুম ভেঙে নিজের ঘরকে গুদাম মনে হবার আগে মনে পড়ে যেত খাটের তলে একটা দা আছে। কাঁধের ওপর বড় ভাইয়ের হাতের মত দায়ের শীতল বাঁকানো ফলা আমাকে সাহস দিত।


কিন্তু অল্প কিছুদিন পরে সেই হাতটাও কাঁধের ওপর থেকে নেমে গেল। এখন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলে আমি আর ভরসা পাইনা। আমি আসলেই একটা ভীতুর ডিম! ভয় কাটাতে দা-টাকে তুলে বালিশের পাশে নিয়ে শুইতাম। এতে করে যদি ভয় কমে! কিন্তু আমার পক্ষে এই অসমতা আর টেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না হয়ত...


গুদামঘরকে যেদিন আবার কল্পনা করলাম, যেদিন আবার স্বপ্ন দেখে হাঁসফাঁস করতে করতে, ডাঙায় তোলা মাছের মত খাবি খেতে খেতে উঠে বসলাম, যেদিন রমিজের হাতের শিরা কিলবিলিয়ে আমার ডান পায়ের দিকে আবার ছুটে এল, আমি শ্রবণোত্তর চিৎকারে ঘুম ভেঙে উঠে বসে বালিশের পাশে রাখা দা টেনে নিয়ে এক কোপে আমার বাম পা কেটে আলাদা করে ফেললাম।


সাঁ--ঝুপ!
--- --- ---

শনিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০০৯

অপরূপরূপকী

অর্কেস্ট্রার মতো উন্মাতাল ভাঙন,
ত্রিধাপ্লাবন! জেগে ওঠে মৃতজড়কোষ
প্লাস্টিক-গলন-
সূত্রানুসারে ঘটছে ক্রমশ...


আমরা মানবিক-বৈজ্ঞানিক-বোধ
ঘনীভূত করি তাবৎ শঙ্কা কাটাতে
চিকন সাপ-
ভয়ঙ্কর নকশা কাটা খোলস
দেয়ালে চিত্রণ-কলা শিল্পরূপ!


বরফ-কামড়ে উন্মূলপ্রায়
কোমল বিশ্বাসসমূহ ছিঁড়ে ফেল্‌
শকুনচোখো-মানব
ব্রাভেদী জিভে মাখ্‌ নিরক্ত বিষাদ
করোটি-রেটিনা-মেডুলা জুড়ে দে।




***