বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০০৯

চুয়ান্নের বাইশে অক্টোবরঃ কবি!

০.
আর কিছুদিন যাক না এমন আরো একটু আশা
এই পৃথিবীর মানুষগুলো বুঝবে আমার ভাষা।



এমন একটা গান আছে।




১.
মাঝে মাঝে কাকতালীয় ঘটনা ঘটে আমাদের জীবনে। কেন ঘটে সেটা আমরা বুঝতে পারি না বলেই হয়তো সেগুলো কাকতালীয়। আমার বিশ্বাস, সবকিছুই একটা বৃহত্তর নকশার অংশ। এখানে 'বিশ্বাস' কথাটা বলার কারণ এই যে এটা আমি প্রমাণ দেখাতে পারবো না। অসংখ্য ঘটনা তুলে আনতে পারি যেগুলো কাকতালীয় ঘটনার পেছনে কারণটাকে ব্যাখ্যা করবে। এবং এটা বুঝিয়ে দিবে যে এগুলো ঘটেছে একটা বৃহত্তর উদ্দেশ্যসাধনে। তবে তাতে পুরোপুরি বিষয়টা প্রমাণ হয় না। কেবল একটা কুযুক্তির উদাহরণ হয়ে ঠা ঠা করে হাসতে থাকে।


আমি প্রায়ই আজে বাজে উপমা ব্যবহার করি। এটা নিয়ে আমাকে অনেক কথা আর প্রশ্ন শুনতে হয়। এরকম উদ্ভট উপমা কেনো খাপ-না-খাওয়া চেহারা নিয়ে ঝুলতে থাকবে। বেশিরভাগ সময়েই আমি নিজের কাজকর্মের ব্যাখ্যা দিতে পারি না, লেখার তো আরও পারি না। তবে উপমার ব্যাপারে আমরা একজন বেখাপ্পা কবিকে চিনি যিনি অনায়াসেই আমাদের কাছে অনুমতি পেয়ে যান বিদঘুটে উপমা যথেচ্ছা বসিয়ে দেবার...


তার সাথে আমার পরিচয়ের শুরুতে আমি তাকে খুব বেশি পছন্দ করি নি। শৈশবের অভ্যাস মানুষ সহজে ছাড়তে পারে না, সেটা পাঠের অভ্যাসের বেলায় আরো বেশি খাটে। ছড়াটে-ছন্দ আর মাপা মাপা মাত্রা মাথায় কাঁথার মত সেলাই হয়ে গেছে। যখন বৃষ্টি পড়তো তখন 'জল পড়ে, পাতা নড়ে' -এভাবেই ভাবতাম আমি। গ্রামে বেড়াতে গেলে নদীর পাড়ে বসে "আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে" ভুস করে শুশুকের মতো ভেসে উঠতো। তারপরে আমি বাংলা মাস হিসেব করে মেলানোর চেষ্টা করতাম-- এখন আসলে বৈশাখ, তাই নদীতে হাঁটু জল। তারপরে আরেক কবি এসে বললেন, সবাই বেশ সমান, নর এবং নারী। আমি ছোট ছোট কিশোর চোখে বোঝার চেষ্টা করি, কেন আমার পাতে বড়ো মুড়োটা পড়ে আর বোনের পাতে লেজ! এভাবে আমি অভিযোজিত হই, আমার সামাজিকীকরণ ঘটে।


এই পর্যায়ে আমার সাথে সেই বেখাপ্পা কবির পরিচয় হয়। তিনি বেশ মৃদুমন্দ, মোটেও সুরেলা নন। আর নিদারুণ দারুণ কাঠখোট্টা। তার নদীটার নাম ধানসিঁড়ি, তার পাখিটি হলো কালো শালিখ! আর বিদঘুটে উপমায় তার জুড়ি নেই- মাঠের ঘাসের মাঝে তার প্রেমিকার চুল আর ঘাম মিশে থাকে, প্যাঁচার ডাকের ভেতরে জীবন (নাকি মরণ) থরে থরে জমে আছে নাকি! এতোটা বিক্ষুব্ধ রচনায় স্বভাবতই মন বসেনি, হাতে পেতে দুয়েকটা কবিতা যা পড়লাম, ছন্দ মেলে না ঠিকঠাক। তারপরে দেখি মাত্রার নাম সনেট (এ কি বিদেশি গোলোযোগ!)। দূরে সরে গেলেন ম্রিয়মাণ কবি চুপিচুপি। দোর্দণ্ড প্রতাপে ফিরে এলেন ছাড়পত্র নিয়ে অভিযাত্রিক কবিগণ। তার সাথে আমার ফের দেখা আরো অনেক বছর পরে। ... কাকতালীয় নিয়ে বলছিলাম, আসলেই সবকিছু একটা নির্দিষ্ট ছকেই ঘটে বুঝি। তিনি যখন আবার ফিরে এলেন, তার সাথে পরিচয়ের উদ্ভাসে আমিই ভেসে গেলাম। চোখের ওপরে যেন রঙিন কাচ আটকে ছিল, যা দেখছিলাম সব সেপিয়া-পয়েন্টে ঈষৎ বাদামি হয়ে ছিলো। তিনি এসে সেই কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলেন।


এই কাজটি তিনি খুব সুচারুভাবেই করেছেন, বেশ "সহজ" উপায়ে। আসলেই এটি সোজাসরল-- আমি বুঝলাম।
"আমার এ গান
কোনোদিন শুনবে না তুমি এসে-
আজ রাত্রে আমার আহবান
ভেসে যাবে পথের বাতাসে-
তবুও হৃদয়ে গান আসে!
"

বয়ঃসন্ধি কেটে গেলে যেভাবে ঘুম ভেঙে যায়, দুই বেণি ছেড়ে ক্লাসের শীর্ণ মেয়েটি যখন একটা বেণি করে আসলো প্রথম সেটা আমার নজর এড়ায়নি। চোখ খোলাই ছিল, সেখানে মেয়েটির ওড়নার প্রান্ত হু হু করে মগজে সেঁধিয়ে গেলো। সেসময় কানের পাশে তিনি মৃদুস্বরে বললেন এই মেয়েটি তোমার গান কোনোদিনই শুনবে না। তবু তুমি পৃথিবীর কানে, নক্ষত্রের কানে কানে গান গাইবে। এ যেন এক মহান নিরুপায় শাস্তি-- তোমাকে এই গান গাইতেই হবে। সেদিন রাতে আমার ঘুম হলো না, তিনি বড়ো জ্বালালেন। দু'চোখে মণিমুক্তোর মতো দৃশ্যগুলো ভরে দিতে লাগলেন। দেখলাম পঁচিশ বছর পরে আবার আমাদের দেখা হয়েছে। মেয়েটি মধ্য চল্লিশের ভারি শরীর, পাতলা হয়ে আসা চুল নিয়ে সেদিন সামনে দাঁড়ালো। আমিও বুড়িয়ে গেছি, হাতের উল্টোপিঠের দাগগুলো মুখের ভাঁজে ভাঁজে, চোখের কোনায় কোনায় উঠে এসেছে। আমাদের মাঝে কোনো ভণিতা নেই- কৈশোরের নির্মলতা হারালে মানুষ কেমন অথর্ব আর ক্ষয়াটে হয়ে যায়, সেই চেহারা নিয়ে কবি দাঁড়ালেন সামনে, আমাদের মাঝখানে। হলদে তৃণ আর কুয়াশা ভরা মাঠের মাঝে আমি মেয়েটির মুখোমুখি দাঁড়ালাম। কবির চোখে দিব্যি দেখলাম, ম্রিয়মাণ মুখে কী তীব্র জ্বলজ্বলে আলো!






২.
এই কবির জীবন এবং কবিতা নিয়ে বহু বহু কথা হয়েছে। গত সত্তুর বছরে কবি বুড়িয়ে গেছেন, মরেও গেছেন অন্যমনস্ক হাঁটতে হাঁটতে। তার কবিতাগুলো বার বার বইয়ে বাঁধাই হয়ে সকলের বাসার শেলফে জায়গা করে নিয়েছে। তার কবিতার সবচেয়ে বেশি ব্যবচ্ছেদ হয়েছে, খাতায়, পাতায়, পত্র-পত্রিকায়, আড্ডায়, আলোচনায়, ভাষণে, বক্তৃতায়। কবি বেঁচে থাকলে কী করতেন? অথবা তিনি যখন বেঁচে ছিলেন, তখন কি ভাবতেন তিনি মরে গেলে তাঁকে নিয়ে এমন মেতে উঠবে পুরো একটা জনপদ? তার জন্যে কাতর রাতগুলো নির্ঘুম কাটবে কোনো কিশোরের। মধ্যবয়েসী একজন কেউ প্রবল হতাশ রাতে ঘরের বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাবে, আর সেই গনগনে ফুলকিতে দেখবে একটা প্যাঁচা তীক্ষ্ণ তাকিয়ে আছে! তখন তার মনে পড়বে একজন কবি ছিলেন যার কাছে এই প্যাঁচা কত অবলীলায় মানুষের উপমা হয়ে গেছে! আমার সাথে তার পরিচয়ের পর থেকে বারবারই আমার মনে হয়েছে এই কথাগুলো তিনি ভাবেন নি। এমন অসীম কল্পনাপ্রবণ মানুষটি হয়তো কখনোই ভাবেন নি যে তিনি কতজনের মনের কান্না আর চোখের হাসির ঝিলিকগুলো হুট করেই বাইরে নিয়ে আসতে পারবেন তার লেখা কবিতাগুলো দিয়ে। কবিতাগুলো নিরীহ এবং আড়ম্বরহীন সাজ নিয়ে অনেকদিন কাউকে নাড়া দেয় নি সেভাবে। অনেকেই বোঝেন নি হয়তো, এরকম নিভৃতে বসে এমন কবিতাও লেখা যায়।


মৃত্যু খুব প্রিয় বিষয় ছিলো কবির। ঘুরে ফিরে বারবার তার লেখায় চলে এসেছে গহীন কালো শীতল মৃত্যু। এবং তিনি কাতর হন নি। তিনি কখনই বলেন নি, 'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে'। আবার মৃত্যুকে আহ্বানও করেন নি। তারপরেও মৃত্যু তার কাছে প্রিয় ছিলো। এবং প্রিয় জিনিসের ব্যাপারে আমাদের একটা বাই-ডিফল্ট আবেগ কাজ করে। অনেক ভীড়ের মাঝে আমরা যেমন হুট করেই আপনজনের চেহারা খুঁজে পাই, তেমনি তার কবিতায় খুঁজলে তিনি কেবল মৃত্যুর চেহারাই দেখতেন। একটা বিষয় খুব বেশি ঘনঘন আমাদের জীবনে ঘটতে থাকলে সেটার অসাধারণত্ব মিইয়ে যায়। আটপৌরে হয়ে পড়ে বার বার তার আসা-যাওয়া। অতিথিকে আমরা যেভাবে আদর-আপ্যায়ন করি, সে বসার ঘরে খাটিয়া পেতে ঘুমুতে শুরু করলে সেটা অচিরেই ম্যাড়মেড়ে হয়ে যায়। সে কারণেই মৃত্যুর মত বিশাল বিনাশী ব্যাপারটিকে তিনি ভেঙে চুরে কাঁথা-বালিশ বানিয়ে ফেললেন। ঘাস, পাতা, জানালা, দেয়াল, শিশির, জোছনা, এমন হাজারো অসংখ্য উপাদানের মাঝে টুকরো টুকরো করে মৃত্যু মিশিয়ে দিলেন। আমরা পড়ার সময়ে খেয়ালও করি না, সর্‌সরে ময়াল সাপের মতো মৃত্যুছায়া পুরো পঙ্‌ক্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।


এভাবে মৃত্যুকে টেবিল-চেয়ার বানিয়ে ফেলার আরেকটা সুবিধা আছে। অপার্থিব অনুভূতিগুলো খুব সহজেই এই সব উপাদানের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। মনে হয় সবাই মিলে একটা স্ট্র দিয়ে মিষ্টি জুসের মতো মৃত্যুকে শুষে খেয়ে ফেলছে! কী অদ্ভুত কল্পনা, তাই না? জীবনের সকল উপাদান যখন তুচ্ছ হয়ে যাবে, আমাদের দপ্‌দপিয়ে দৌড়ে চলা কণিকা যখন ক্লান্ত হয়ে গতি থামিয়ে দিবে, ধুকপুকে হৃৎপিণ্ড অতি ধীরে স্তব্ধ হবে আর শৈত্যের প্রবল থাবা এগিয়ে আসবে, তখন হুট করেই আমার কবিকে মনে পড়বে। মৃত্যু খুব কঠিন কিছু তো নয়! জন্মানোর পরমুহূর্তেই হেঁচকি তুলে চিৎকার করে কেঁদে ওঠার চাইতেও সহজ শ্লথগতিতে চোখের তারার আলো ফুরিয়ে যাওয়া। এলোমেলো হাঁটতে গিয়ে হুট করেই ট্রামের সাথে ধাক্কা খাওয়া। এভাবেই মৃত্যু আসে। আমাদের স্তব্ধ করে দিতে, আমাদের জীবনের সবটুকু আলো নিভিয়ে দিতে।




কবির সাথে প্রথম পরিচয়ে মনে হয়েছিলো তিনি বেশ ম্রিয়মাণ। এই চিন্তাটা কতটা অপরিপক্ক ছিলো, তা এখন মনে পড়লে হাসি পায়। আমি একটা নতুন তথ্য জেনেছিঃ অনেক সময় খুব মৃদু স্বরে বলা কথাগুলো সবচেয়ে জোরালো শোনায়, আর উচ্চকিত স্লোগানের চাইতেই তীব্র অনুরণন তৈরি করতে পারে। কবিতায় যতো নিয়ম কানুন বানানোর চেষ্টা হয়েছে, এই কবির লেখার পরে সেগুলো মোটামুটি হাস্যকর প্রস্তাবনা হয়ে গেছে। সবারই মনে হয়েছে এভাবেও কবিতা লেখা যায়। চমক কাটতে সময় লাগেনি, তারপরের সময়টুকু কেবল এই কবির জন্যেই স্তবকে স্তবকে ভরে গেছে। পরে জানলাম এই অনুভূতিটার নাম- আধুনিকতা। প্রথা, সংস্কার এবং জোয়ালের মতো চেপে বসা সমাজে আমরা প্রতিনিয়ত যেভাবে ক্ষয়ে যাই, যেভাবে আমাদের ভেতর থেকে মৃত্যুর চেয়েও নিষ্ঠুরভাবে জীবন চুরি হয়ে যায়, সেখানে এই কবিই পথ দেখালেন। তার কথাগুলো আমার কাছে নতুন সত্যের মতো ধরা দিলো। অন্ধকার প্রবল হলেও আমার মনে হয়, সেখানে তিনি পাশেই আছেন। আমার কানের কাছে মৃদুস্বরে বলছেনঃ
"আবার আকাশের অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে :
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।
যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়েছে উঠছে।...

...ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস -
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
পর্দায়, গালিচায় রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ,
রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ!
তোমার নগ্ন নির্জন হাত;
তোমার নগ্ন নির্জন হাত।
"







কবি মারা গেলেন চুয়ান্নের বাইশে অক্টোবর। আজকে থেকে ঠিক পঞ্চান্ন বছর আগে। ট্রামের চাকার সাথে যেই চিত্রকল্পগুলো হারিয়ে গেলো, যে পঙ্‌ক্তিগুলো নির্বাসনের নির্দেশ পেলো, সেগুলোর জন্যে আমার অনেক রাতেই মন খারাপ হয়ে যায়। তারপরে অন্ধকারেই কল্পনা করি, কবির হাত মৃদু আমার কাঁধে এসে বন্ধুর মতো ছড়িয়ে আছে। তার মুখ অস্পষ্ট এবং ঘোলা। আমার চোখে অশ্রু। আমার মুখে একচিলতে হাসি। কেউ দেখছে না। কারণ ঘর অন্ধকার।

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০০৯

টেবিলের চারপাশে

টেবিলে বসে ছিলো একাকী চায়ের কাপ
পাশের পিরিচে ছাইয়ের দাগ, অথবা পিঁপড়ের লাশ
টেবিলের চারপাশে এলোমেলো চেয়ার নির্ঘুম-
যারা চলে গেছে তাদের জন্যে নীরবতা সেখানে আজ।(১)


(কোরাস)
আমাদের যেদিন গিয়েছে চলে, যাবার আগে যায়নি তো বলে
সেদিন কি একেবারে গেছে হারিয়ে, হৃদয়ের সীমানা বহুদূর ছাড়ায়ে||


আমরা জেনেছি পৃথিবীর দিনরাত মানুষের জন্য নয়
পিরিচের ঘূর্ণিতে ছিটকে যাবে জলবিন্দুর স্রোত
মিছে প্রেম, মিছে কথা, শুধু অযথা আলাপে মশগুল
যারা ছিলো টেবিলের পাশে, তারাও জানেনি "সবই ফুরাবে"।


(কোরাস)


সেখানে যেসব একা একা রাত ভরে ওঠে রোদ হাসিতে
বন্ধু-খেলায় মেতেছে যারা, তাদের চোখে হর্ষ জল
তোমরাও রেখে যাবে চিহ্ন অসীম, চায়ের পিরিচে
টেবিলের চারপাশে এলোমেলো চেয়ারে নির্ঘুম।


(পুনঃ১)
(কোরাস)





***
উৎসর্গঃ হেম, তোকে।

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০০৯

এলোমেলো বসে থাকা

এলোমেলো বসে থাকা- এরকম একটা উপমা শুনেছিলাম, বা পড়েছিলাম কোন এক গল্পে বা কবিতায় বা উপন্যাসে। অথবা আমাকে কেউ শুনিয়েছিলো শব্দ তিনটা কয়েক বছর নাকি কয়েক মাস আগে। শব্দ তিনটা অনেক সময় বলে সবাই, কিন্তু এভাবে একসাথে বলে না। এলোমেলো হয়ে যায় সবাই, এলোমেলো জীবন কাটায় অনেকেই, এলোমেলো দিনরাত পাড়ি দেয় কেউ কেউ। আবার চুপচাপ বসে থাকে, স্থির হয়ে বসে থাকে, নয়তো হয়তো কেবল বসেই থাকে সবাই বা কেউ কেউ। কিন্তু এলোমেলো বসে থাকে বিশেষ কোন মানুষ। এলোমেলো বসে থাকা কেমন সেটা আমি জানতাম না। আমাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। শ্লেটের ওপরে খড়িমাটির চক দিয়ে যেভাবে মাতামহী "স্বরে-অ" লেখা শিখাতেন, -এর গোল পেট টেনে টেনে আঁকতে হতো, কারণ তা প্রায়ই ভুল হতো আমার, মিশে যেতে চাইতো -এর কালো মাথার সাথে। তাই আমি ঈষৎ কাঁপাকাঁপা হাতে চক টেনে টেনে "অ" লিখতাম। এভাবেই শিখতে হয় অপরিচিত প্রণালী, নিয়মে, অধ্যবসায়ে, একাগ্রতায়। কিন্তু আমি কখনো এলোমেলো বসে থাকতে শিখি নি। এমনকি শব্দগুচ্ছটাও আমার অপরিচিত ছিল অনেকদিন। তবু শব্দজোড়া শুনেই আমার মাথায় একটা ছবি তৈরি হয়ে গেল।


আমি তারপর থেকে সেই ছবিটির মতো এলোমেলো বসে থাকার চেষ্টা করতাম। এখনও অবসরে করি। কেউ যদি আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে, তাহলে কি সে অবাক হবে? তার কি মনে হবে এটাকে এলোমেলো বসে থাকা বলে? নাকি তার মনে হবে আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই বসে আছি, আমার বসে থাকায় কোন নতুনত্ব নেই, নেই অগোছালো বিন্যাস। তাই আমি একা একাই নিবিড়ভাবে চেষ্টা করতে থাকি কতটা নিখুঁত করে এলোমেলো বসে থাকা যায়।


এভাবে বসে থাকলে আমার মাথায় বিচ্ছিন্ন চিন্তাগুলো আসতে থাকে। একেবারে গোছানো-চিন্তা কোন কাজের নয়, সেটা আমাকে পাগল করে দেয় না। পড়ার সময়ে, পরীক্ষায় আগে আমি গোছানো-চিন্তা করি। তাতে করে আমার লক্ষ্য স্পষ্ট থাকে। কিন্তু এলোমেলো বসে থাকার কোন উদ্দেশ্য তো নেই, কারো উদ্দেশেও এই বসে থাকা নয়। এ' শুধু আমার জন্যেই, একান্ত আপন। সেজন্যে আমি এভাবে বসে থেকে রাজ্যের কথা ভাবি। ফড়িঙয়ের মতো দুরন্ত হয়ে ওঠে মগজের কোষ, সিন্যাপ্স- যাবতীয় জৈব-রসায়ন। আমি তখন জুলফি বেয়ে ঘাম কেমন ধীরে ধীরে নেমে আসে সেই কথা ভাবি। আরও ভাবি, বুড়ো আঙুলে চটকে দিলে ঘামের কণার স্রোতটা থেমে যাবে। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে অবশিষ্ট-ঘাম লেপ্টে থাকবে। আর হাতের বুড়ো আঙুলেও কিছু কিছু চলে আসবে নির্ঘাত; আমি সেই হাত জামায় মুছে ফেলবো। ঘামের চলন কতো বিবিধ, বহুবিধ!


তারপরে আমি আরো কত কথা ভাবি এভাবেই বসে বসে। নিয়মবিহীন ভাবনার সুবিধা হলো কাঠবিড়ালির মতো ডালে ডালে লাফিয়ে চলে যাওয়া যায়। মাথা ব্যথা করছে, মাথার ভেতরে রক্তের নাড়ির মতো দপ্‌ দপ্‌ করে উঠছে এক একটা ধাক্কা। ব্যথাগুলো কি চিন্তার কারণে জন্ম নেয়? এই যে দুর্গম এলোমেলো ঘুরছি মগজের কোষে কোষে, তারা হয়তো নিউরনে খবর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। দৈনন্দিন পরিচিত চিন্তার বাইরে তারা বেশি যেতে চায় না। মানুষের মতোই তারা হয়তো অভ্যস্ততা ভালোবাসে! তাই আজ আমার অলস অত্যাচারে তারা বিরক্ত, নাজেহাল, ব্যথিত। এজন্যে এখন সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে স্নায়ুর রাজপথ দিয়ে, ব্যাপন একটা সুচারু প্রক্রিয়া। এলোমেলো বসে থেকে পায়েও ঝিঁঝিঁ ধরে গেলো। অসাড় হয়ে আসছে পায়ের আঙুল, আঙুলের ডগায় একটা কালো পিঁপড়া পিলপিল করে ঘুরছে- অস্থির! আমার চিন্তার মতোই এলোমেলো তার চলন। পিঁপড়াচলনের পথরেখা কেমন হবে? অমিত সম্ভাবনাময় সঞ্চারপথ। আগে থেকে তো বোঝার উপায় নেই পিঁপড়াটা ঠিক কোন দিকে যেতে পারে। আর বোঝা যায় না বলেই যে কোন দিকে চলাচলের এই বিপুল আশ্বাস নিয়ে নিশ্চয়ই পিঁপড়াটি ভাবনায় জর্জর। আবার নাও হতে পারে। হয়তো এমন কষ্টকর চিন্তা যাতে করতে না হয় এজন্যে পিঁপড়ার মগজ খুব কম। একদিকে কম পেলে আরেকদিনে বেশি থাকে। পিঁপড়ার পা অনেকগুলো, ছয়টা পায়ে তরতরিয়ে অসীম সম্ভাবনাময় পথে সে হাঁটছে, চারণভূমি আমার পায়ের নিঃসাড় বুড়ো আঙুল।


অনুভূতিশূন্য হতে পারাও একধরনের সক্ষমতা। এই গুণ সহজাত নয়, অনুশীলনজাত, অভিজ্ঞতাসঞ্জাত। আমি সেটার অনুশীলন করি না, অনেকে করে, আমি তাদের মুখের রেখার সরলীকরণ দেখে মুগ্ধ হই। দুঃখ-তাপে অবিচলতা দেখে আমার সমীহ জন্মায়। প্রচণ্ড বিপদে বা দূর্যোগে তাদের ইস্পাত-কঠিন স্নায়ু দেখে ভক্তিতে আমি প্রায় মাটিতে মিশে যাই। মাটিতে মিশে যেতে যেতেই আমি দেখি আমার শরীর কালো হয়ে উঠছে। রক্ত শুকিয়ে গেলে কালো হয়ে যায়? বোধহয়। শীতলপাটির মতো কালো মাটি সম্ভবত শুষে নিয়েছে রক্তকণা, শ্বেত, লোহিত ইত্যাদি। নিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই, আমি ব্যবসা করতে চাই না তাই লাভের বা লোকসানের চিন্তা নেই। এই সকল নেই নেইয়ের মাঝেও মাথার ভেতরে সূক্ষ্ণ চিল-চিৎকার ব্যথা এখনও সরব! মাটিতে শুয়েই ঘাড় এদিক-ওদিক হেলিয়ে আমি ব্যথাপাচার করে দেয়ার চেষ্টা করি। মাটি সব নিলো, রক্ত-ঘাম-শ্লেষ্মা-ত্বক। খালি আমার এলোমেলো বসে থাকার ভঙ্গিটা নিলো না! আমার ক্রমচলনের মগজকীট নিলো না! আমার পায়ের ওপর ঘুরে বেড়ানো পিঁপড়া নিলো না!

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০০৯

দৃশ্যকর্মী

১,
বড়ো বেখাপ্‌ ঝুলে আছো ছয়তলার ওপরে বিমর্ষ
তবু হাসিমুখ, দেখি তোমার। ঝুলে থাকা থোকা থোকা
হাসিমুখ। রোদে ঝলসে গেছে সেইচোখমুখ, হাসি।
উল্টোবাদুড় ঝোলা হয়ে দুলছো সরল দোলক।
দেখতে লাগছে বেশ, হাসিটি উল্টে গিয়ে বিষণ্ণতা ঝুলছে


বিষাদের ধর্ম নয় তেমন স্থির, সুতরাং ঝুলে ঝুলে নেমে
আসছে রোদার্ত-ক্ষোভ আর ভয়াটে মোমজ জল,
অশ্রুজল। অভিকর্ষ বড়ো প্রয়োজন, প্রিয়তম আকর্ষণটি
উলম্ব।
তাই ঝুলে ঝুলে অশ্রু নামে, হাসি নামে না- উড়ে যায়
সেভাবেই ওঠা কিংবা নামা মেপে মেপে ছয়তলা থেকে
তুমি নেমেই উঠে যাচ্ছো বেশ! তরতর সুপার-হিউম্যান...






২,
বোঝা গেলো নিচ থেকে দেখা সবই কালো কালো লাগে
আলোবার্তা চলাচলের পথ রাজপথ থেকে দূরে, সেই ট্র্যাকে না পড়লে
কি-ছু দে-খা যা-য় না। কি-ছু চো-খে প-ড়ে না।
অন্ধ লাগে নিজেকে। তাই মনে হয় উপরে উঠি,
উপরে উঠলে পুলক পুলক। অর্গ্যাজমের ঝলক।
মাখো মাখো তরলিত মেঘ,
সুশীল ঘাম মোছো সুগন্ধিটিস্যুতে, ভিজে নমোনমো নরোম হয়েছে সেটি
গুটিয়ে ফেলে দাও ঘামসমেত- আস্তাকুঁড়ে। পাশে আস্তাবল ঘোড়ার গন্ধ আসে
তীব্র গন্ধস্রোত নাকের ভেতরে অযৌন-বাসা বাঁধে
হরিৎ!
এবং আমাদের গলি উপগলিতে নালি উপনালিতে থকথক করে ক্লান্তরমণ।

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০০৯

Antinoüs

দেখা গেলো প্রচুর রোদ। রোদে সেজে গেছে পাতা ও পথ। পথের পাশে পাথর। এসব ভালো লাগে না। জড়বৎ। এদের কোনো ঘটনা নেই। এবং সে কারণেই দুর্ঘটনাও নেই।
নেই বিপদ, আপদ, ঝঞ্ঝাট বা নিরাপত্তাবোধ। একেবারে বোধহীন শিশুও হয় না। তার চেয়েও অথর্ব এগুলো, চারপাশের উপাদানগুলো।


আমরা কেনো তবে এগুলোকে এতটা মূল্য দেই? এতটা নজর দেই। মানুষের দিকে তাকাই না, মেয়েটার জামা দেখি, জামার ওপরে লাল-নীল ফুল দেখি, জামার নিচে ঘনমেঘ দেখার শখ জাগে। শখের নাম সাধ, যেমন অভিলাষ, যেমন খায়েশ, অথবা যেমন কামনা।


ফুটপাতে হেঁটে গেলে রেলিং দেখি- ওখানে হাতের স্পর্শ করেছিলো কে? কারা যেন ওখানে ঠেশ দিয়েও দাঁড়িয়েছিল প্রতিদিন, বহুক্ষণ! আমাদের জানার আগ্রহ এত কম। তারপরে গাড়িগুলো চলে যাবে আমরা দেখবো হাস্যমুখি টেইল-লাইট। আর ট্র্যাফিকের ময়লা সবুজ পুলিশ। বৃষ্টি নামবে এবং তিনি বর্ষাতি খুলে ছাতার নিচে দাঁড়াবেন। আমরা দেখবো আর ভিজবো।


উপাদান ভুলে এখন বৃষ্টিকে ভালো লাগবে। ভিজে গেলে শব্দটা 'সিক্ত', শুনলে সব শীতল হয়ে আসে। বৃষ্টিও জড়- তবু তাকে নিয়ে কবিতা লেখা চাই। কেন। কেন। চাওয়ার কোনো শেষ নেই বোধহয়। তবে চাইলেই পাওয়া ঠিক নয়। পেলে লোভ বাড়ে। লোভের লেজে করে মেয়েগুলো ফিরে আসে।


এই লেখার মাঝে আমি পুরুষ হয়ে উঠি বারবার। মেয়েদের কথা চলে আসে। কেনো আমি ছেলেদের কথা লিখি না। সুপুরুষ ছেলেরাও সুন্দর, তাদের নিয়েও লেখা যায় তো! আমার লিঙ্গের ছায়া কেন শব্দের গায়ে পড়বে? শিশুদের কথাও তো লিখি বেশ, তারা রোদে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে পুরুষেরা কেন রোদে যাবে না? তারা তো কালোই।


রোদগুলো চেনা গেছে। অন্তর্গত আঁধারের ছায়ায় এতক্ষণ চেনা যাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো ধাঁধাঁনো আলো। আলোতে সব রঙ থাকে বলে ভাবিনি লাল, কি নীল, কি সবুজ বা হলুদ হাসছে! এখন আঁধার সরিয়ে দেখি বিচিত্র বিভিন্ন রঙালো। নারী বা পুরুষ বা শিশু সকলে এসে গেছে আমার চোখের মাঝে। গোল গোল চোখের মাঝে তারা সকলে হাসিমুখে সেঁধিয়ে যাবে গতকাল থেকে আজ বা পরশুতক।


তারপর, অনেকদিন বাদে বৃষ্টি নামবে। নামার পরে আমরা সকলে কেঁদে ফেলবো। লিরিসিস্টগুলো ছাগলের মতো কেন বৃষ্টিকে আকাশের কান্না বলেছিলো? বেকুবি উপমা ছাড়াও তো জড়কে চেনা যায়। আকাশ কেন কাঁদবে। আকাশের কি লিঙ্গ আছে! অ্যামিবা কাঁদে না, এমনকি অণুজীবেরাও হর্ষবোধে ডুবে না। তবে আকাশ কেনো কাঁদার মতো নির্লজ্জ অধিকার পাবে।


বরং আমরা কাঁদি। ভ্রূণপর্ব থেকে কান্নার শুরু জলজ মাতৃকায় হাবুডুবু কেঁদেছি আমরা, জরায়ুঘর থেকে সেই অশ্রু হারিয়ে মায়ের শরীরে মিশে গেছে। তারপরে মায়ের চোখেও পানির ফোঁটাগুলো শিশুর মতো গড়িয়ে নামছিলো। আমাদের মা তখন কেনো কাঁদতেন রাত জেগে?


অদ্ভুত মাতৃকা শুকিয়ে গেলে আমাদের অশ্রুরেখা করতলে জমা হয়। সেখানে অনেক রোদ। না! সেখানে অনেক আঁধার।




***
নোটঃ Antinoüs-এর সম্বন্ধে আরো জানতে এখানে এবং এখানে দেখুন।

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০০৯

পতনের খবর বিষয়ক বিভ্রম

| | ট্রেনের চাকার সাথে সে পড়ছে | |
এটাই সংবাদ ছিল। শিরোনাম ও সংবাদটি একটি লাইনেই
বিবৃত। পরের কথাগুলো অজরুরি, অনুক্ত। শুধু খবরটি জানা গেলোঃ
সে পড়ছে।
ঘূর্ণায়মান চাকার ভেতরের আঁকিবুকি মুছে গেছে
দ্রুতগতিতে- আর সে পড়ছে, পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে
পড়ে যাচ্ছে মাটিতে। চোখে দেখা দৃশ্যঃ সে উঠে আসছে
চোখ বলে এক, মন বলে ভুল। পতনের শব্দ নির্ভুল।
শব্দহীন।
যে ব্যথাগুলো আজীবন পতনের সাথে জড়িত,
তারা জানেও না কবে প্রথম এই অযাচিত পতন,
ত্বকের গহীনে বসবাস শুরু করেছে। কেবল প্রতিক্রিয়ার মতো
ফুটে ওঠা বা জেগে ঘুমিয়ে থাকা, মরণঘুমের ভান।
ক্রিয়ার পরিচয় তখনও জানা যায় না, প্রতিক্রিয়া বুঝে বুঝে ক্রিয়া
চিনতে হয়, সময় সময়। এই পরিচয়পত্রটি ছাড়াও
বেশ ভুলে থাকা যায় এমন স্বরূপ, মাছের মত।


-ক্রিয়াপদ জ্ঞাত ছিল। ডিজওর্ডারমূলক। তা খানিকটা বৈসাদৃশ
মনে হয়।


এই জ্ঞাত শব্দের শরীরে পতনের রাশি রাশি সূত্রাবলি লেখা ছিল
দু'ইঞ্চি কলামের খাতায়, পাতায়
পাতা ঝরে যাওয়া শোক, গাছের কাঠের ভেতরে জমে থাকে।
আমাদের শরীরেও পতন জমে, গাছের মতোন গোল গোল চক্রাকার বর্ষরেখা জমা থাকে। খুলে দেখো, কি চমৎকার মনেৎ! ছবিতে ভুল থাকে না তোমরা জানো, তারপরেও কেন সন্দেহ এতো, সূত্রাবলি নিয়ে? স্বৈরাচারী নির্দেশ-মোতাবেক এসব ঠিক আছে, সত্য আছে। ঘন গভীরে খুঁজে দেখো, পতন ও ক্রিয়ার মাঝে কোনো মিথ্যা নাই।


তার পতনের সাথে আপেক্ষিক, আমরা, তুমি, আমি, সকলে ক্রিয়াপদ হয়ে ঝুলে আছি। হয়তো? আবার এমন সন্দেহমূলক অব্যয়! আমাদের পতন সম্বন্ধে আর কেউ নিশ্চিত নয় বলে ধরে নেয়া যেতে পারে তোমরা স্থির আছো। পড়ছো না এবং তাকিয়ে তাকিয়ে জুলজুল করে তার পতন দেখছো।