মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১১

বিনির্মাণ

মাঝে মাঝে কোলাহল মুখ ফিরিয়ে নেয় জলের প্রবাহের মতো শব্দের ঢেউ এলোমেলো যত্রতত্র হঠাৎ খুলে যায় স্রোতমুখ তার অন্যদিকে কোন অন্য মানুষের দিকে
কোলাহলে পিঠ রেখে অন্ধকার দেখি
গাঢ় বিশুদ্ধ অন্ধকার জ্বলছে মেরুদণ্ডহীন
লতানো গাছের মতো নমনীয়, নতজানু
জড়িয়ে আছে বিদ্যুল্লতা
একা একা তীব্র মৌন
নেই আপত্তি নেই অভিযোগ
নেই পুরানো হিসাব মেটানোর দায়
একটা ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরে ফটফট করতে করতে পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে উঠে দেখি ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে দুইজনে দেয়াল ভাঙছে। দুম দুম করে কেঁপে উঠছে দরজা জানালা মেঝে - এমনকি এলিভেটরের কাঠামোও! কাঁপতে কাঁপতে হাতড়ে একটা অবলম্বন খুঁজি। আশেপাশে কোন চেয়ার কিংবা শক্ত কোন বাক্স, ভর দিয়ে একটু কাঁপুনি সামলে নিবো। ফর্সা তন্বী দেয়ালে কালো লোহার ছেনির আঘাতে চাপড়া চাপড়া প্লাস্টার খসে পড়ছে। সিমেন্টের গুঁড়ো, ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে বাঁকাত্যাড়া ইটগুলো বেরিয়ে আসছে। দাঁতাল শুয়োরের মত হাসছে। দুইজনে পিটিয়ে দরজার পাল্লাগুলো খুলে ফেলছে। দরজা কপাট হাট হয়ে গেল - বেআব্রু। দেয়ালে গাঁথা দুয়েকটা পেরেক, ছবি ঝুলেছিল হয়তো সেখানে। সেগুলো নেই। শুধু ছবির ফ্রেমের কালো দাগ। হাতুড়ির বাড়িতে তুবড়ে গেল...
সুইচবোর্ড খুলে গেল, পিভিসি পাইপের ভেতর জড়ানো লাল-নীল তার। অমন তারগুলো গলায় জড়িয়ে কোন কোন মেয়ে যেন ঝুলে পড়েছিলো। মনে পড়ে না আর। মৃত্যুর খাতার চাপা পড়া পৃষ্ঠা হারিয়ে ফেলেছি।
রাজমিস্ত্রিদের গায়ে কালো জামা। এই বাসায় ফ্যান নেই, জানালাগুলো চোরের ভয়ে বন্ধ আর গুমোটে ভরে আছে ঘামের নোনা গন্ধ। পিছলে পিছলে চকচকে ঘাম মুছে তারা হাতুড়ি চালায়। দেয়াল ভাঙছে, চাঙড় চাঙড় ইট খুলে আসছে দেয়াল থেকে। দুম দুম শব্দের ঢেউ আমার বুকের মধ্যে ভরে যায়। সারাদিনমান একলা হয়ে যাই আর ভাঙা দেয়ালের মত চোয়াল - বয়ে বেড়াই মৃত্যুর আদুরে আবছায়া, হাতুড়ির মত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য যার।

অবচেতন

আর ওই ঘন সুদূরের ঘ্রাণ
দেখ মিশে গেছে ঘাসের শিরায়,
বিমর্ষ স্মৃতি
ঘ্রাণ খুলে নাও।
অমূল্য সুতোয় বেঁধে রাখো, রাখো যতনে,
গোপনে, রাখো নিদ্রা চিরন্তনে।
স্বপ্নের ভিতর যে বাড়ি, যে ঘর,
যেখানে মৃত্যু ও তাবত ক্লান্তি নেই,
সেখানে স্মৃতিগুলো অমল ধবল
সেখানে তুমি কখনো যাবে না।
তুমি ভেবে নিবে বিলুপ্ত কাল
কিংবা অতীত বিস্মৃতি
ভেবে নিবে তারা নেই - সেখানে বা অন্য কোন খানে
তোমার বিভ্রান্তির ফুল খুব অমলিন ফুটে থাকবে!