সোমবার, ৩০ মে, ২০১১

মনে হয় করতলে আছি

রেখেছি বিমূঢ় শোক – পুরে মুঠোর ভিতর
প্রায় দু’মাস, এতদিনে এই শোকটুকু,
ফোঁটায় ফোঁটায় জমে ওঠা স্থিরচঞ্চল জল
হয়ে গেছে, মুঠোবন্দী করে রেখেছি, স্পর্শে
টের পাচ্ছি কোমল শোকের স্পন্দন – করতলে
নানাস্থানে যাই, কারো সাথে পরিচিত হলে
বিব্রতবোধ করে মুঠোহাত এগিয়ে দেই,
হাত মেলানোর প্রথাপালন দুষ্কর হয়ে পড়ে,
ব্যক্তিগত শোকের খবর কেন সদ্যপরিচিতকে দিব?
দৌড়ুতে দৌড়ুতে বাসে উঠি, সাবধানে
আমার কলার মুঠো পাকড়ে টেনে তোলে
কনডাক্টরের শক্ত বলীয়ান হাত – সে’যাত্রা বেঁচে যাই
ভাগ্যিস মুঠো খুলে শোকাংশ বিলিয়ে দেই নি বাসের হাতলে
বাসায় ফিরলে জামা খুলতে কষ্ট হয়, এক হাতে কষ্টেসৃষ্টে
খুলে নিতে পারি শার্টঃ বহিরাঙ্গের ধুলো ও কয়লা,
ঘরের মানুষেরা কিছু বলে না, মেনে নেয়
মুঠো করা হাত দেখে কিছুটা মূক ও অপরিচিত বনে যায়
এভাবে শোকের পালন এ’জনপদে বিরল
অনেকেই আগ্রহী হন, কৌতূহলে বেড়ালের মত
গা ঘেঁষে আসেন। হে একান্ত শোক আমার!
অজান্তেই আমাকে বিখ্যাত করে তুলছো,
আমি কৃতজ্ঞ আমি নতজানু তোমার সাহচর্যে,
অনেকের কাছে আমি আরাধ্য হয়ে উঠছি
মাঝে মাঝে তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুঠোর ঘ্রাণ নেই
গা শিউরে ওঠে এই অতলান্ত শোকস্পর্শে
বুঝিবা আমার হাতটুকু ধীরে ধীরে অবাস্তব হয়ে গেছে
কিংবা শোকটুকু মিলিয়ে গেছে বাষ্প হয়ে -
অ নে ক আ গে ই
আমি ভুলেভালে মুঠো বন্ধ করে ভ্রমে বুঁদ
শিওর হতে পারি না, ডিলেমার কর্কট ক্রমশ
মুঠোগামী আমি ভয়ে তাড়িয়ে দেই তাকে,
“ভাগ্‌ শালা জোচ্চর কনফিউশন, ভাগ্‌ এবেলা!
জারিজুরি করে শোকে ভাগ বসাবি,
জানি তোর দুরভিসন্ধির অলিগলি!”
প্রায়ই ভাবি এ’দুঃসহ ভার ফেলে দিব আজই
মুঠো খুলে ধুয়ে নিব কলের শীতল জলে
হাত মেলে দেখব কোন শোকের ছায়াও নেই
মনে হবে পুরোটাই মনের মস্ত এক ভুল ছিল
মনে হবে পৃথিবীতে আমার কোন শোক ছিল না
তারপর মনে হবে হয়তো ছিল কিছু কোনও এক কালে
ভুলে গেছি সেইসব একান্ত ব্যক্তিগত শোক
খামাখাই কবরের মতো স্মৃতিচিহ্নের দরকার নেই বলে
এই হাতটি নতুন পেয়েছি বলে মনে হবে আমার
তারপর পুরনো আটপৌরে হাত, সেই বন্ধ করা মুঠো
ও শোকসন্তপ্ত করতলের শোকে আমি আবারও মুঠো বন্ধ করে ফেলবো…

সোমবার, ১৬ মে, ২০১১

অহেতুক যা কিছু


ক্লান্ত সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরে শার্ট খুলে দেখি
পিঠে বড়ো বড়ো করে "বেকুব" লেখা
সারাদিন ঠারে ঠুরে চাপা হাসি আর হাহাহিহি
পিঠে ও মুখে আছড়ে পড়েছে নির্বিকার
শার্ট খুলতেই দু'কাঁধ ভেঙে এলো অশ্রু
ঘামে ভিজে পিঠের ওপর লেখাগুলো অক্ষয়
খুব চাপা স্বরে জ্বলজ্বল করছে!




প্রতিদিন একটু একটু করে ময়লা হই
ভিতরে ও বাইরে ময়লা জমে যায়
অবলীলায় অনায়াসে, দিনে রাতে
ময়লাগুলো অযথা অমায়িক অতিথি
রাত একটার পরে ভালো লাগতে থাকে
ময়লা ঘুমিয়ে পড়ে ভিতরে ও বাইরে।




তোমাকে চেনার চেষ্টা চলেছে চারদিন
চারদিন ঘড়ির কাঁটা স্থবির ছিলো, হরতালে
হরতালে জমাট হয়েছে তার সূক্ষ্ণ চাকা
চারদিনে ঘোলা জল স্থির হয়ে ক্রমশ
সুন্দরী স্বচ্ছ সৌম্য হয়ে উঠেছে
মিউজিয়ামের লোকেরা এসে হিসেব করছে
এই জলটুকু আগামিকালকেই প্রদর্শনী যাবে!
চারদিনে তুমি নাগরিক হয়ে গেছো, কর্দমের ফুল...

মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১১

ভোরের ভালোবাসা

ভোরের ব্যাপারটাই ডেঞ্জারাস। কেন বললাম?

যে প্রতিপক্ষকে দেখা যায়, জানা যায় যে সে আক্রমণ করবে, তার সম্বন্ধে সতর্ক হওয়া যায়। কিন্তু যে চুপিসারে আসে, নিঃশব্দে হরণ করে, তাকে কীভাবে ঠেকাবো? কোন উপায়ে সতর্ক হবো?

ভোরের সময়টা ও'রকম। ধীরে ধীরে চুপিসারে এসে উপস্থিত হয়। কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই। খালি কিছু পাখপাখালি জেগে ওঠে সমস্বরে। ওদের কিচির মিচির আমি শুনতে পাই না অনেক সময়, জানালা বন্ধ থাকলে। তবে আজ ভাগ্যক্রমে টের পেলাম। জানালার বাইরে বড়ো বড়ো গাছ। এখন নাম জানি না বলে আফসোস হচ্ছে। পাখিগুলো ডেকে দিলো, ডাক দিলো অমল সুরে। ঘুম ভেঙে জড়তা নিয়ে তাকিয়েছিলাম!

ভোর এসে বোকা বানিয়ে দিলো। কমলা কমলা ভোর। দুয়েকটা একলা একলা পাখি উড়ছে, ডানা ঝাপটানি কম। মনে হয় ওরাও সকাল সকাল উঠে খুব আড়মোড়া ভাঙছে। ডানা ঝাপটানোর ব্যস্ততা নেই। শহরও পাখির মতো। অস্থিরতার আগে কয়েক মুহূর্ত থমকে আছে। তারপর শেকলের মতো, হাঁপরের মতো যান্ত্রিক চলন শুরু হয়ে যাবে।

আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। এই সময়টা উপভোগ করতে ইচ্ছা করে। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে ঘ্রাণ পাই মৃদুমধুর। পাতার ঘ্রাণ। ফুলের ঘ্রাণ। কাল রাতে ছেড়ে রাখা শার্টটার ঘ্রাণ।

চোখ বন্ধ করতেই শব্দ পাই নানারকম। রিকশা নেমেছে বোধহয় একটা, টুং করে বাজিয়ে গেলো। টুইটুই করে উঠলো এখটা পাখি। ক্রোচক্রোচ শব্দ করছে আরেকজন। জানালার পর্দায়ও খসখসে সকালের শব্দ হচ্ছে। ভোর এসে গেলো।

দেখো, ...
আমাদের জীবন ঠিক এই মুহূর্তের পরে একদম অর্থহীন!







===============




কয়েকটা বেহুদা লাইনঃ
রাত চারটে বাজলে একসাথে সবগুলো ডিজিট বদলে যায়
দেখো তিন হয়ে ওঠে প্যাঁচানো চার,
সাপের মতো শরীর গড়ে ওঠে গোলগাল তিনের
আরো দেখো পাঁচ আর নয় পাশাপাশি ছিলো
সুখে দুখে স্বল্পকাল
এক ঝটকায় উবে গেলো তারা শূন্যে মিলায়ে গেলো শরীর
দুটো শূন্য চলে এলো ধপ্‌ করে
দৃশ্যগুলোই তো বদলে গেলো একেবারে!

সোমবার, ২ মে, ২০১১

দু'ফোঁটা জীবন

===================================



শোরগোলের বিকেলে
মন্থরার গলা শুনি কালো রাস্তায়
বাছাইকৃত সুতীক্ষ্ণ হর্ন
বেজে গেল সস্তায়,
দুমড়ে গেল মূক পাখির ডানা


দ্রুত-ছোটা দৃশ্যের
শকট থামিয়ে
পাখিটাকে তুলে নেই
তখনও তার স্পন্দন
টের পাই হাতের তালুতে


বিকেলের রোদ থেকে
দু'ফোঁটা জীবন,
আমি তাকে দেবো ভেবে
দৃশ্যের পর দৃশ্য
অবলীলায় চুরি করি


দৃশ্যের ভেতর বিকেল বিকেলের ভেতর ঘোলা সূর্য ঘুমিয়ে...

রবিবার, ১ মে, ২০১১

ম্যাপ

"তার সাথে কী কী কথা হয়,
সেগুলো জরুরি নয়",
- এই ভেবে মনকে প্রবোধ দেই,
কালো চাঁদ
দেখি নি বলে বোকা বোকা সাজি
মনের কাছেই
তার কথা কারে কারে বলি,
সকলে তারে তো
চিনতে পারে না সহজে
বলতে গিয়েও
চুপ করে কিছুই বলি না
গুছিয়ে বলাও
মস্ত আর্ট। আমি কিছুই পারি না
আর্ট কালচার
সকলে দেখে তাকে যেভাবে
আমি দেখি কালো চাঁদ
ভিন্ন কালো মেঘ স্থির ও নিষ্কম্প
ওখানে যেতে গিয়ে পথ ভুলে যাই,
অন্ধকারে পথের ধারে
দোকানগুলোতে দেখি
নির্দেশনা দিতে ব্যগ্র, দোকানের
খরিদ্দার অনেকেই, মৃদু হেসে
অন্ধকারে পথ দেখায় "ডানে ঘুরে বামে"
নির্দেশনায় সন্দেহ হয়
কালো চাঁদ কোথায় পাই তারে
সন্দেহে চোখ বুঁজে আসে
চোখ বুঁজতেই দেখি পথ
আলো আলো হয়ে গেছে
কালো মেঘ সরে গেছে ধীরে
তার কথা কারে কারে বলি,
গুছিয়ে বলতে গিয়ে চুপ থাকি
দেখি চুপ করে থাকাও
মস্ত বড়ো আর্ট। শিখে যাই অনায়াস

দর্শক

রাত্রি গভীর হলে বারান্দা খুঁজি। বারান্দা নেই বলে
নিদেনপক্ষে চাই জানালা, প্রেয়সীর মত জালিবদ্ধ হোক
ক্ষতি নেই। অন্ধকার বাইরে রেখে পিঠে রেখে আলো
জানালায় দাঁড়াই, ছায়া পড়ে। পোড়ে। বাইরে দুয়েকটা
আলো নিভে গেল, অনায়াসে কেঁপে গেল গাছের শরীর
পাতলা কুয়াশা নেচে গেল। মুহূর্তে ঘর হয়ে গেল
শিশুকাল - উঠানে ছড়ানো মার্বেল-চাদর, মুছে গেলে
ভেদ ও বিভ্রম, আমি হাত বাড়িয়ে মার্বেল ছুঁই
বড়ো হয়ে যাই। ছোট হতে চাই। কামনা করি রাত ও
কুয়াশা আমার ঘরে এসে নেচে যাবে।