একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে আবুল কালাম আজাদকে বাংলাদেশের সংবিধানের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে ফরিদপুর এলাকায় খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সহ অসংখ্য কুকীর্তির জন্য দায়ী এই বাচ্চু রাজাকার। পাকিস্তানি আর্মির সাথে মিলে যুদ্ধের সময় নিরীহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে এই কুখ্যাত অপরাধী। তার শাস্তির রায় শুনে মনে যে অভূতপূর্ব আনন্দ হলো তা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। এক ঘুম দিয়ে উঠলাম, এখন মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা মাথায় আরো কিছু ব্যাপার চিন্তা করার সময় এসেছে।
১। বাচ্চু রাজাকার পলাতক। রাজাকারদের দোসর-রাষ্ট্র পাকিস্তানে। তাকে ধরা হবে এই খবর পেয়ে সে পালিয়েছে। এখন তাকে ধরে আনা হউক। পাশাপাশি এটাও চিহ্নিত করা হউক যে কে বা কারা তাকে পালাতে সাহায্য করেছিল। রাজাকার ও রাজাকার-সমর্থক কারো ঠাঁই এই দেশে থাকা উচিত না।
২। এই রায়ের বিপরীতে আপিল করবে আসামিপক্ষ। সেই আপিলের সময় ৩০ দিন। তারপরে সেইটাকে আবার খণ্ডন করা হবে। আমার চাওয়া এই আপিল সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। কোন জামাত-শিবির বা তাদের ভাবসমর্থক যেন বলতে না পারে যে তারা সুযোগ পায় নাই।
৩। এই রায়ে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য দলীয়ভাবে জামাতকে দায়ী ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। সুতরাং জামাতের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মামলা করে বিচার করার সময় এসেছে। উল্লেখ্য ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালেও বেশ কয়েকটি দলের বিচার হয়েছিল। (তথ্যটি পেলাম একরামুল হক শামীমের কাছ থেকে। তাকে ধন্যবাদ।)
৪। বাচ্চু রাজাকার টিভিতে ধর্মীয় উপদেশের অনুষ্ঠান করতো। তাকে এই সুযোগ করে দিয়েছিল এটিএন বাংলার মালিক মাহফুজুর রহমান, এবং পরে এনটিভির মালিক মোসাদ্দেক আলী ফালু। মাহফুজের দুর্নীতি ও পীড়ন নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। ফালুও কী চিজ, কত টাকা দুর্নীতি করেছে, সবাই জানে। এখন সময় এসেছে শক্ত হাতে এদের বিরুদ্ধে আইনী প্রচারণা শুরু করার। রাজাকারের পৃষ্ঠপোষকদের একে একে ধরা উচিত।
৫। জামাতের বর্তমান অবস্থা হলো তারা বিএনপির সাথে মিশে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চেষ্টা করছে। অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে মিশেছিল। এই অ্যামিবাসদৃশ বর্ণচোরার দল ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগের সাথে মিশতে পারে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নাই। এখনই সময় এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। যুদ্ধাপরাধী বিচারের পাশাপাশি জামাতের ধর্মভিত্তিক বদমায়েশি থামানো দরকার। এটা সহজেই অনুমেয় যে তারা ধর্মানুভূতির দোহাই তুলে পাব্লিক সিমপ্যাথি পেতে চাইবে। কিন্তু এই খুনী ও ভ্রষ্ট দলটির ব্যাপারে এখন সতর্ক না হলে পরে সমূহ বিপদ হতে পারে। এমনিতেই এরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
৬। জামাতের পাশাপাশি কিছু বুদ্ধিবেচা বুদ্ধিজীবীদেরকেও ধরার সময় এসেছে। একজন হলো আসিফ নজরুল, ওরফে নজরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক, যে মতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধী নন এমন বক্তব্য দিয়েছিল। এছাড়াও নানা সময়ে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে তার মহা আপত্তি। এটা ঠিক না, ওটা ঠিক না, এহেন নাকিকান্না সে প্রায়ই টক-শোগুলোতে কেঁদে বেড়ায়। আদালত নিয়ে এমন অপমানজনক কথা বলায় তাকেও বিচারের সম্মুখীন করা উচিত।
৭। আরেকজন অপরাধী আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ট্রাইব্যুনালের বিচারকের প্রাইভেসি লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়া উচিত। বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে সেও।
৮। সবশেষের পয়েন্টটা সংরক্ষিত তাদের জন্য, সেইসব ভবিষ্যত-দেখে-ফেলা জাতির কর্ণধারদের জন্য, সেইসব হাস্যকর জ্ঞানীর জন্য, সেইসব ডাইকোটামি-কপচানো রিকনসিলিয়েশন-থিওরির প্রবক্তাদের জন্য, সেইসব 'আসল যুদ্ধাপরাধী' খোঁজা গরুচোরগুলোর জন্য, সেইসব কাব্যচর্চা-উপন্যাসচর্চা-সাংবাদিকতাচর্চা করা পাকিস্তানপন্থীদের জন্য। তাদের দেখে আজ হাসছি। অনলাইনে তাদের তুবড়ি ছোটানো পূরীষগুচ্ছ আজ থেকে এতিম হলো। এইসব কুবুদ্ধিপনার জঞ্জাল একদিন শেষ হবে, ধুয়ে মুছে সাফ হবে। আমি সেইদিন এদেরকে নিয়ে আর মাথা ঘামাবো না।