রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৪

অন্যজীবন

মাঝে মাঝে মনে পড়ে এ সব অর্থহীন। মানবজন্মের কোন উদ্দেশ্য নেই। কেন জন্ম, কেন বিচলতা - তার ব্যাখ্যা নেই।

যখন মানুষ ধীরে ধীরে চাষবাস শিখে নিচ্ছিল, তখন বিভিন্ন নদনদীর তীরে ডেরা বাঁধছিল। ছোট জীবনের ছোট ছোট স্বপ্ন ছিল তার। সেই স্বপ্ন খুন হতে সময় লাগে নি। সভ্যতার মুঠি এসে সেইসব স্বপ্নের শ্বাসরোধ করেছিল। স্বপ্ন মরে গেলে মানুষ মরে যায়। তাই তার ভেতরে জন্ম নিলো রূপকথা। যে রূপকথা বলে যে তার জীবনের অর্থ আছে, আছে উদ্দেশ্য। সে জন্মেছে এই পৃথিবীতে তার পদচিহ্ন রেখে যেতে, নিরন্তর কর্মের মাধ্যমে কিংবদন্তীসম কীর্তি রেখে যেতে। যদিও সেই কীর্তির কিছুই সে দেখে যেতে পারবে না - সেই সত্যটি রূপকথা বেমালুম চেপে যায়। চেপে যায় অসংখ্য মানুষের ভিড়ে তার ব্যর্থ হবার সম্ভাবনার কথা। চেপে যায় যে পথ চলতে চলতেই সে মরে যেতে পারে, কোন কিছু করে ফেলার আগে, একদম হুট করেই। এমনকি যদি সে খুব কীর্তিমানও হয়ে ওঠে, বা জীবদ্দশায় নিজের কর্মের প্রতিদানও পায়, তারপরেও গন্তব্যের শেষে তার জন্য আছে অবধারিত মৃত্যু। যে মৃত্যু ক্ষমাহীন, নিষ্ঠুর, অবিবেচক। মৃত্যুর সময় কোন কীর্তি, কোন ক্ষমতাই তাকে বাঁচাতে পারবে না। এমনকই পারবে না সে মুহূর্তে বিন্দুমাত্র শান্তি দিতে।

এই রূপকথার ক্ষমতা অপরিমেয়। বুদ্ধিমান মানুষকে সে খোকা-ভুলানো মায়ায় বিভ্রান্ত করে রাখে। কিছু কিছু উদ্ভট পাগল হয়তো ফাঁকিটা ধরতে পারে, কিন্তু সভ্যতা তাদেরকে পাগল তকমা দিয়ে রেখেছে আগেই। এ যেন এক ফুল-প্রুফ সিস্টেম। তাই পাগলদের কথায় না ভুলে মানুষ বুঁদ হয়ে থাকে অলীক রূপকথার স্বপ্নে।

কিন্তু মাঝে মাঝে এমনই কোন অদ্ভুত সময়ে রূপকথার ঘোর কেটে যায়। অলীক পর্দার আড়াল সরে দগদগে ক্ষতের মতো সত্য সামনে চলে আসে। সে সত্যের চাপে দুমড়ে মুচড়ে যায় চারপাশ - সাজানো ঘরদোর, গোছানো জীবন। সভ্য জগতের শেখানো সূত্রের হিসাব মেলে না। প্রশ্ন উঁকি দেয় - হয়তো এই সভ্যতার বাইরেও অন্য জীবন আছে।  যে জীবনের নিয়ম অন্যরকম। যে জীবনে রূপকথা শেখানো হয় না, অলীক বিভ্রম সর্বদা মুড়ে রাখে না। সে জীবনের নগ্নতা সৎ। নিরর্থকতা সেখানে নিত্য-নৈমিকতা।

কে জানে, হয়তো জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়ানোর ক্লান্তি নেই বলে সে জীবন রূপকথাচর্চিত জীবনের চেয়ে বেশি "অর্থপূর্ণ।