মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৫

শাহবাগ

মাঝে মধ্যে অবাক হইয়া ভাবি শাহবাগ যেন জোঁকের মুখে নুন হইয়া গেছে!
প্রায় তো দুই বছর হইতে চললো। তেরো সালের ফেব্রুয়ারি থেকে-
এখন অব্দি কম তো গালি খায় নাই শাহবাগ। নিরীহ মাসুম চৌরাস্তার মোড়টারে
কী পরিমাণ এবিউজের শিকার হইতে হইলো - ভাবলেই মায়া লাগে।
কে না তারে গালি দিছে! কাদের মোল্লার পুত্র থেকে গোলামাজমের পুত্র,
লন্ডনের বড়ো গণতন্ত্র থেকে ব্যারনেস ভার্সি,
কমেডি সার্কাস জাতিসঙ্ঘের নাভি পিল্লাই পর্যন্ত
অভিশাপের পর অভিশাপ দিয়া ভরাইয়া দিছে।
(আমার মতে বিদেশিগুলান ঠিক মতো ভরাইতে পারে নাই
তাগোর ভাষা বিদেশি আর আমরা ফকিন্নির পুত ইংরিজি বুজি না)
তারা একটু ওপরে থাকেন আর দেবতাগো মতো মিষ্টমধুর গালি দেন।
সোজাসাপ্টা কইতে পারেন না। এই খামতিটা পুষায় দিছে বঙ্গপুঙ্গব চ্যালাচামুণ্ডা।

প্রথমে গালি দিল রাজনীতিবিদ, শাহবাগ তাগোর কথা শোনে না।
পলিটিকাল গালি যদিও পলিটিকালি কারেক্ট হইতে হয়
তাই সেডা বেশি দিন গায়ে লাগে নাই।

তারপর গালি দিল মাদ্রাসাত্থোন আসা অপগণ্ডরা।
বান্দররে নাকি ছাইড়া দিলে পবিত্র ঘরেও দরজা-জানালা
ভাইঙ্গা মুইতা রাখে। এই গল্পখানা মনে পড়লো মে মাসের পাঁচ তারিখ।
রাইতের আন্ধারে বান্দরের গণহত্যা! কী কমু সেই বিভীষিকার কথা! থাউক...

তারপর সবকিছু শান্ত হইয়া আসলে রাজনীতিবিদরা গিয়া কইলো
"বহুত হইছে এলা ক্ষান্ত দেও", বইলা শাহবাগ ভাইঙ্গা দিল।
আমরা বুঝলাম গালি অপেক্ষা লাঠি অধিকতর শক্তিশালী।

কিন্তু... এর পরে আইলো কিন্তু পার্টি। ল্যাখক কোবি কিন্তু পার্টি।
এই পার্টির সদর দফতর মতিচুরপাড়া। ফোন দিয়া এডিটর
কয় ভাই একটা ল্যাখা দ্যান, কয় আপা একটা ল্যাখা দ্যান।
হাইয়ে ল্যাখে, ফাল্গুনিতে ল্যাখে। ঘুরায়া প্যাঁচায়া দুই চারটা
কলামিস্টও ল্যাখে। শাহবাগরে গালাইতেই হইবো।
হেতিরে গালাইয়া শুয়াইয়া দেও।
শাহবাগ এইসব দেখে হাসতে হাসতে দুইটা পাদ মাইরা দিল।
সে সুগন্ধে মতিচুরপাড়া গন্ধ গন্ধ হইয়া গেল।

শেষ রাতে ঘুম ভাইঙ্গা গেলে বারান্দায় গিয়া দাঁড়ায়া ছিলাম।
বৈদেশের হাড়কাঁপানি শীতে আন্ধারটা মিশমিশা হইয়া থাকে।
তারপর আস্তে আস্তে সূর্যটারে উঠতে দেখলাম। ভাবতেছিলাম,
"প্রায় তো দুই বছর হইতে চললো"। ভাইবা মনটা উদাস হইতেছিল।

তখন দেখি ওই দূরে দুই বছরের গান্ধাগালির জামা গায় দিয়া শাহবাগ মিটিমিটি হাসতেছে

সোমবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৫

আত্মজৈবনিক

এবং কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলে খেয়াল হলো যে কবিতা লিখি না
মাথার ভেতর এই খেয়াল মাটিতে পড়ার আগেই আমি দুই ভাগ হয়ে
তর্কে নামলাম। এক ভাগ বলে ওঠে হয়তো আপ্নে কখনই
কবিতা লিখতে পারতেন না। শুনে অন্য ভাগ তেড়ে আসে,
বেশি বুঝেন ইচ্ছা হয় না তাই লিখি না নাহলে দেখিয়ে দিতাম।
আমি দুই ভাগের তর্ক শুনি, কমলার জুস খাই
জুস বেশ তেতো লাগলে ভাবি একটু চিনি মেশালে মন্দ হতো না।

অর্ধেক আমার সাথে বাকি আধখানা আমি
গলার রগ ফুলিয়ে চেঁচিয়ে-
একাকার, তর্ক চললো কয়েকশ’ বছর

তারপর টের পাই এ তর্কে নষ্ট সময় – নষ্ট জীবন – নষ্ট আয়ু
ভেতরে তখন দুই ভাগের জোড়াতালি লাগে, সেলাই করে দেই।
দুই ভাগ মিলে এক ভাগ হয়ে কবিতা না লেখার কারণ লিস্টি করতে বসে-
লিস্টিতে যোগ হয় উদয়াস্ত ব্যস্ততা
লিস্টিতে যোগ হয় একটু বুড়িয়ে যাওয়া
লিস্টিতে যোগ হয় স্নায়বিক চাপ
লিস্টিতে যোগ হয় প্রবাস-জীবন
লিস্টিতে যোগ হয় চিরচেনা নিরর্থকতা
লিস্টিতে যোগ হয় ভিন্ন পরিবেশ

লিস্টিতে ঢুকে পড়ে খাবি খাওয়া মাছের মতো একটি উপমা
লিস্টির তলে জমতে থাকে গ্রোশারির লিস্ট
লিস্টির আগে চলে আসে ট্যাক্স রিটার্নের ডেডলাইন
লিস্টিটাকে ওয়ালেটে রেখে ভুলে থাকার চেষ্টা করি।

কবিতা অনেকটা পূর্বজন্মের মতোন,
বিদ্যুচ্চমকের গতিতে ফিরে আসা স্মৃতির গাঁইতি শাবল