রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১১

হঠাৎই দুইটা লেখা...

(একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায় বলেই আমার চারপাশে গল্প জমে থাকে। চারপাশে গল্পের চরিত্রেরা ঘুরে বেড়ায়, খেলে বেড়ায়। তাদের অনুনয় বিনয়ের ভার আমার বড়ো ভারি লাগে!)


***
দৃশ্যের আগে পরে
 
সন্ধ্যা ধীরে ধীরে নেমে আসে না, অন্ধকার দ্রুত জমাট বাঁধে। সেই জটাজাল কাটাতে গাড়ির হেডলাইট জ্বলে ওঠে নিঃশব্দে। আলো চিরে দেয় ভরাট আঁধারের পেট আর ফুটপাতের পাশে দোকানগুলোতেও জোরে জোরে জ্বলে ওঠে তারাবাতি। অধুনা তারাবাতিতেও তীব্র ঝলক। ঝল্‌কে ঝল্‌কে ওঠে আলো, লাল। নীল। হলুদ। ভেসে যেতে থাকে ছিন্নমূল হকারের বসাতি। হকার এড়িয়ে হনহনিয়ে চলা টবের মতো মানুষ। টবগুলো থপথপিয়ে চলে ফুটপাতে - ফুটপাত থকথক করে। সেখানে সন্ধ্যার পর অনেকটা রাত নেমে এলে একটা মেয়ে এলোমেলো হাঁটে। চুল কাঁধ ছাপিয়ে একটু দূর নেমে এলোমেলো, হাঁটার কারণে আরো এলোমেলো হতে থাকে। পরনের পোশাকে খেয়াল নেই তার, দৃষ্টি উদভ্রান্ত, উন্মুখ। ফুটপাতের খোপ খোপ ট্রাপিজিয়াম পাথরে সে একটু হড়কে হড়কে হাঁটে। 
 
আমরা কেবল দৃশ্য দেখি, আর দৃশ্যের আগে পরে জুড়ে দেই অন্যান্য দৃশ্য। ভেবে নেই আপাত অনুমান। অনুবাদ করি পরিচলনের ইতিহাস। মেয়েটির হেঁটে চলে যাওয়ার দৃশ্যে আমরা তার সঙ্গী খুঁজি, একা এতো রাতে মানুষের ভীড়ে কেন নেমেছে মেয়েটি? কোথায় যাচ্ছে সে? উত্তর কার কার জানা আছে? আমার তো লিখে দেওয়ার কথা, মেয়েটির যাত্রা ও গন্তব্যের ইতিহাস। আমি জানি সে কোনো এক বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। আবার কোনো এক বাড়িতে পৌঁছাতে চাইছে। এই তথ্যে আমাদের কোনো লাভ হলো না। জানা গেলো না মেয়েটি ঠিক কেমন, কী ঘটছে তার জীবনে।

ঠিক তবে, তার চোখের মাঝে দোকানের ওই আলোগুলো পিছলে যাচ্ছে। পিছলে যাচ্ছে শরীরেও। চারপাশে ভীড় করা টবের মতো মানুষ। টবের সাথে ধাক্কা, হেলে যাওয়া টব, পড়ো পড়ো টব, সচকিত টব, বেখেয়াল টব, বেলেল্লা টব। টবগুলোকে হঠাৎই মেয়েটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে চায়। একটা টব এসে তাকে চেপে ধরে।

তখন পাশে তীব্র পেটচেরা আলো মুখে গাড়িটা এসে থাকে। টায়ার চমকে ওঠে, সেই সাথে টবগুলোও। সরে ছিটকে যায় এদিক-সেদিক। গাড়ির সামনের দরজা খটাশ খুলে দিয়ে ভেতর থেকে মেয়েটাকে ডাকে একজন। ছেলেটার খোঁচা খোঁচা চুল - হাত কাঁপছে তিরতির, স্টিয়ারিঙে। খসখসে গলায় সে মেয়েটাকে ডাকে, "উঠে আসো", মেয়েটা আরো দু'পা এগিয়ে মুখ ফিরিয়ে থাকে।

এই দৃশ্যের পরে দুই যুগ কেটে গেলে, চারপাশের আলো একটু একটু কমে আসবে। তারপর মেয়েটি গাড়িতে উঠে বসবে। এবং দরজা বন্ধ করে দেবে। তারপর তারা সাঁ করে চলে যাবে। সেই বাতাসে মেয়েটার অবিন্যস্ত কাঁধ ছাপানো চুল আর এলোমেলো হবে না। ছেলেটারও তিরতির হাতে স্টিয়ারিং কাঁপবে না। স্থির ভ্রমণের পর তারা নিশ্চয়ই সুখীই হবে। নাকি?

***


যা ঘটে গেছে
 
মাঝে মাঝে এই শহরে আমি বন্ধুহীন হয়ে পড়ি
দু'কোটি মানুষ আর সাথে তেরো হাজার সিএনজি
এর মাঝে আমার কোন বন্ধু নাই, নাই। নাই এফেনেফ
কম রেটে কথা বলার সাগ্রহ আবেদনময়ী অপারেটর
আমার বন্ধুহীনতায় ক্রমেই দেউলিয়া হয়, আর দেখা
যায় সে'সব মানুষ ও সিএনজির সাথে বেশ ঢলাঢলি করে।
***

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন