[এই পোস্টটি অনেকক্ষণ ভেবে দিচ্ছি। একান্তই নিজস্ব ভাবনা। লিপিবদ্ধ করে
রাখা দরকার মনে করি, আর অন্যদের এই বিষয়ে ভাবনা জানারও আগ্রহ হচ্ছে
কিছুটা।]
প্রথমেই রায়হান আবীর মনে করিয়ে দিল স্ট্যাটাসে যে, “আমরা যা, তা-ই
আমাদের সংস্কৃতি” (তথ্যসূত্র/কপিরাইটঃ সামাজিক বিজ্ঞান বই)। এই সুযোগে ওকে
ধন্যবাদ দিয়ে নিতে চাই। ডামাডোলে ভুলে যাই এসব সহজ সংজ্ঞা। ছোটবেলায় কত
দ্রুত এসব মুখস্ত করতাম, এখন জীবনের পথ চলতে গিয়ে পদে পদে এসব সংজ্ঞার
পুনঃপাঠে উপকৃত হই। ভাবি, ভাগ্যিস ছোটবেলাতেই শিখেছিলাম! নয়তো এখন বিভিন্ন
জটিল মতামতের তোড়ে খাবি খেতে হতো।
প্রথমে একটু ভূমিকা দেই। দশক বিচারে বাংলাদেশের তরুণদের চরিত্র নিয়ে
ভাবছিলাম। আশির দশকে বিশ্ববেহায়া আর্মির চোরটার কারণে যে দমন পীড়ন নেমে
এসেছিল, তার প্রতিবাদে তরুণ সমাজের ভেতর একটা চাপা বিদ্রোহ সূচিত হয়েছিল।
মাঝে মাঝে সেই বিদ্রোহ ক্ষোভের মতো বেরিয়েও আসতো। রাজনীতি নিয়ে সচেতনতা
কতোটা ছিল জানি না, কিন্তু এটা জানি যে বুদ্ধিজীবী সমাজের পা-চাটা কিংবা
ভয়ে ভীত হবার স্বভাব তরুণদের মধ্যে ছিল না। তৎকালীন লীগ কিংবা বিএনপির
নেতারা কতোটা সক্রিয় ছিলেন, তার কথা জানি না, তবে তরুণদের সাথে তাদের একটা
দূরত্ব হয়তো তখন থেকেই তৈরি হয়েছিল। এ কারণে চোর স্বৈরাচারটার বিরুদ্ধের
আন্দোলনে সর্বাগ্রে সক্রিয় ছিল ছাত্রসমাজ, রাজনীতিবিদেরা নন।
নব্বুইয়ের দশক সে তুলনায় বড়ই হতাশার। স্বৈরাচার গেছে, আমলারা এসেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক দূর্নীতি আর অরাজকতা চেপে বসেছে। ডানপন্থা ধীরে সামরিক উর্দি
খুলে ব্লাডি সিভিলিয়ানের পোশাক পরে ভিড়ে মিশে গেছে। জামাত চলে এসেছে
সংসদে। শিবির ছড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে। সম্ভবত এই দশক তরুণদের অবক্ষয়ের
দশক। সম্মুখে কোন প্রকাশ্য শত্রু নেই। ঘাড়ে হাত দিয়ে যে ছেলে-মেয়ে বসে আছে,
গোপনে সে-ই শত্রুশিবিরে নাম লিখিয়েছে। আশির দশকের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে
মূলধারার রাজনীতিবিদেরা। তরুণদের সাথে যেহেতু তাদের দুর্নীতিপরায়ণ চরিত্র
মেলে না, তাই তরুণদেরকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতিতে শেখাতে ছাত্র
সংগঠনগুলো বটগাছের মতো শেকড় ছড়িয়ে দিল। পলিটিক্স তাই হয়ে গেল খারাপ,
রাজনীতিসচেতনতা চলে গেল ক্রায়োজেনিক চেম্বারে।
শূন্য দশকের শুরুতেই আমরা বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদের উত্থান ও প্রসার
দেখেছি, তার পেছনে তরুণদের রাজনীতিমনস্কতার অভাব অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
এক দশকের অজ্ঞান প্রজন্ম তৈরি করেছে শূন্যস্থান, আর সেই শূন্যস্থানে জায়গা
করে নিয়েছে জামাত, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, শিবির, বাংলা ভাই, আবদুর রহমান
শায়খরা। বোমার পর বোমা ফেটেছে বাংলাদেশে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান থেকে শুরু
করে সিনেমা হল অবধি; প্রতিটি জেলায়। এই পুরো সময়টায় স্বৈরাচারী চোরটার
মতোই একটা দানবের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে। পার্থক্য হলো, স্বৈরাচার চোরটা সামনে
ছিল, আর জঙ্গিরা ছিল আড়ালে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাই হয়তো তরুণদের এক দশক
দেরি হয়েছে। শূন্য দশকের শেষ দিকে এসে যে সামরিক শাসন ফিরে এলো ব্লাডি
সিভিলিয়ানের পোশাকে, সেটা দেখেই বোধহয় তাদের টনক নড়েছে। ২০০৮ এর নির্বাচনে
তরুণরা তাই চালকের ভূমিকা নিয়েছে আবার। চিন্তা করুন, মাত্র ছয় বছর আগেও যদি
কেউ বলতো, বাংলাদেশের মাটিতে জামাতের লিডারকে ফাঁসি দেয়া হবে বিচারের পর,
সেটা কি কেউ বিশ্বাস করতো? আপনি নিজেও কি করতেন? আমি অন্তত করতাম না।
কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে তরুণদের কারণেই।
গত তিরিশ বছরের সমাজে তরুণদের এই প্রভাবকে তাই উপেক্ষা করার উপায় নেই।
গত বছর শাহবাগ দেখে যেমন আমরা বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছি সেটাও তো তরুণদেরই
আন্দোলন। কিন্তু এখন, প্রায় এক বছর পরে এসে পেছনে ফিরলে মনে হয় এই আন্দোলনও
এক দিনের নয়। কোন একটা আদর্শের রূপরেখা আমাদের তরুণ সমাজের ভেতর চলনশীল
রয়েছে। এক দশকের তরুণরা মধ্যবিত্ত সংসারী হওয়ার সময় সেই আদর্শটিকে পরের
দশকের তরুণদের হাতে তুলে দিয়ে যায়। যে নবতরুণ কৈশোরে দর্শক ছিল, তারাই
দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। এই চক্র বাংলাদেশে চলমান।
২
আমরা প্রথম দশকের প্রায় মাঝামাঝি চলে এসেছি। ‘৮০, ‘৯০, ‘০০ এর চাইতে ‘১০ একটু আলাদা হয়ে উঠেছে। হয়তো শাহবাগের কারণেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি ধীরে ধীরে তরুণদের হৃত রাজনৈতিক চেতনা আবার ফিরে আসছে। তারা সচেতন হয়ে উঠছেন একদম তৃণমূলের রাজনীতি নিয়েও। কোথাকার কোন এমপি কোন এক অনুষ্ঠানে সিগারেট খেয়েছেন, সেই ছবিটি কেমন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল। ক্ষোভের আঁচে তাকে সর্বসমক্ষে মাফ চাইতে হলো। ঘটনাটি অভূতপূর্ব। আমার জানামতে আমাদের পূর্ববর্তী কোন তরুণ এই পর্যায়ের জবাবদিহিতা আদায় করতে পারে নি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইন্টারনেট সবাইকে একটি কণ্ঠ দিয়েছে, এর সুবিধা তরুণরা সবচেয়ে বেশি গ্রহণ এবং কার্যকরভাবে করতে পারছে। রাজনীতিবিদেরাও দ্রুত অনুধাবন করছেন যে তাদের প্রাইভেট লাইফটি আর প্রাইভেট নেই। এটা পাবলিক হয়ে গেছে। এখন আমরা যেমন খালেদা জিয়ার লুপ্ত প্রাসাদের ছবি গুগল করলেই দেখতে পাই, তেমন হাসিনা পোলাও রান্না করছে সেটাও দেখতে পাই। এমন সহজলভ্যতা আসলে রাজনীতিবিদদের মিথ থেকে মানুষে পরিণত করছে। আমার অনুমান আর দশ বছরের মধ্যেই আমরা এখনকার তরুণদের অনেককে সক্রিয়ভাবে দেখতে পাবো। তাদের ফেসবুক ফলোয়াররাই মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করবে! (একটু বেশি বলে ফেললাম নাকি?)
আমরা প্রথম দশকের প্রায় মাঝামাঝি চলে এসেছি। ‘৮০, ‘৯০, ‘০০ এর চাইতে ‘১০ একটু আলাদা হয়ে উঠেছে। হয়তো শাহবাগের কারণেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি ধীরে ধীরে তরুণদের হৃত রাজনৈতিক চেতনা আবার ফিরে আসছে। তারা সচেতন হয়ে উঠছেন একদম তৃণমূলের রাজনীতি নিয়েও। কোথাকার কোন এমপি কোন এক অনুষ্ঠানে সিগারেট খেয়েছেন, সেই ছবিটি কেমন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল। ক্ষোভের আঁচে তাকে সর্বসমক্ষে মাফ চাইতে হলো। ঘটনাটি অভূতপূর্ব। আমার জানামতে আমাদের পূর্ববর্তী কোন তরুণ এই পর্যায়ের জবাবদিহিতা আদায় করতে পারে নি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইন্টারনেট সবাইকে একটি কণ্ঠ দিয়েছে, এর সুবিধা তরুণরা সবচেয়ে বেশি গ্রহণ এবং কার্যকরভাবে করতে পারছে। রাজনীতিবিদেরাও দ্রুত অনুধাবন করছেন যে তাদের প্রাইভেট লাইফটি আর প্রাইভেট নেই। এটা পাবলিক হয়ে গেছে। এখন আমরা যেমন খালেদা জিয়ার লুপ্ত প্রাসাদের ছবি গুগল করলেই দেখতে পাই, তেমন হাসিনা পোলাও রান্না করছে সেটাও দেখতে পাই। এমন সহজলভ্যতা আসলে রাজনীতিবিদদের মিথ থেকে মানুষে পরিণত করছে। আমার অনুমান আর দশ বছরের মধ্যেই আমরা এখনকার তরুণদের অনেককে সক্রিয়ভাবে দেখতে পাবো। তাদের ফেসবুক ফলোয়াররাই মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করবে! (একটু বেশি বলে ফেললাম নাকি?)
শাহবাগের কারণে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। সেটা হলো বাংলাদেশি বনাম বাঙালি
জাতীয়তাবাদের মেরুকরণের তীব্রতা। “জামাত-বিএনপি” মতবাদের বিশ্বাসীরা
ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। শাহবাগকে বিভ্রান্ত করতে তাদের
সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার ছিল ধর্ম। তারা সেটা সফলভাবে কাজে লাগিয়েছে। অশিক্ষিতের
মতো শাহবাগের পক্ষ-বিপক্ষ সবাই নিজেদের দাড়ির দৈর্ঘ্য এবং পাজামার গিঁটের
টাইটনেস মাপতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে আওয়ামী লীগ শাহবাগের
নন-পার্টিজান চেহারাকে ভয় পেতো, কিন্তু জামাত-বিএনপির আঘাতের পরে তাদের
জন্য এটাকে নিজেদের আন্দোলন বানানো সহজ হয়ে পড়ে। টুপিপরা শাহবাগ তাই হয়ে
যায় হাসিনার শাহবাগ। দুর্ভাগ্য যে তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা এখনো ততোটা
পোক্ত হতে পারে নি, তাই শাহবাগের নন-পার্টিজান অবয়ব তারা টিকিয়ে রাখতে
পারলো না। মাঠে এটা হয়ে দাঁড়ালো লীগ বনাম জামাত-বিএনপির দাবাখেলা। এই
খেলাটা বুঝতে পেরে যারা সেই খেলার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরকে কল্লা কাটা
হলো, জেলে পোরা হলো। যেহেতু এই বুঝদারদের কোন রাজনৈতিক মামা নেই, সেহেতু
অসহায়ের মতো এই মৃত্যু আর বন্দিত্ব দেখা ছাড়া আমাদের (হ্যাঁ, আমি নিজেকে
নিষ্ক্রিয়ভাবে হলেও, এই অংশের একজন মনে করি।) কিচ্ছু করার ছিল না। ব্লগে
ব্লগে প্রতিবাদ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু আসলে
কোন লাভ হয়েছে বলে আমার নজরে পড়ে না। সরকার বাহাদুরের যেদিন ইচ্ছা হয়েছে,
সেদিন ব্লগারদের ছেড়েছে। যেদিন ইচ্ছা হয়েছে, শাহবাগের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে।
জামাত-বিএনপি তাদের নিজেদের নেতাদের বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে গেছে…
কথায় কথায় প্রসঙ্গ থেকে সরে গেছি। বাংলাদেশি বনাম বাঙালি জাতীয়তাবাদের
মেরুকরণ নিয়ে বলছিলাম। আমাদের তরুণ সমাজের ভেতরে (অন্তত ইন্টারনেটে সচল
অংশে) স্পষ্টতই একটা দূরত্বের জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের
সপক্ষের চিন্তা, আরেকদিকে প্রতিক্রিয়াশীল জামাতি চিন্তা। এবার একটু ভেঙে
চুরে দেখি।
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের চিন্তা মানে আওয়ামী লীগের চিন্তা না।
তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাণিজ্য করে। এই বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে ‘০৮-’১৩
সরকারের আমলে। রীতিমত কর্পোরেট বাণিজ্য কোম্পানিগুলো যেমন ভাষা আন্দোলন,
শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ, ও বিজয় দিবস নিয়ে বাণিজ্য করে,
ঠিক তেমনি বাণিজ্য করে আওয়ামী লীগ। যে শেখ মুজিব পুরো জাতির অংশ, সেই
মুজিবকে তারা নিজেদের পকেটে পুরে রাখতে চায়। স্পষ্টতই তাদের অন্য কোন
অনুকরণীয় নেতা নাই। শেখ মুজিবকে সপরিবারে এবং চার নেতাকে জেলে হত্যা করার
মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করেছি যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতা জন্মাতে পারবে না।
আওয়ামী লীগে যা আছে, তা হলো রাজনৈতিক বেনিয়া, যাদের কাজ বাণিজ্য করা। আর
তাদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যের দোসর হলো ভারত। কারো কারো জন্য
চীন। আর এই বাণিজ্যে তরুণদের অধিকাংশেরই কোন ভাগবাটোয়ারা নেই।
প্রতিক্রিয়াশীল জামাত চিন্তা মানে কেবল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা না।
এর সাথেও যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য। বাণিজ্যটি ধর্ম ও গোঁড়ামোর। বিএনপি এবং
জামাত উভয়েই জানে যে এখনকার স্মার্ট তরুণ “সাইফুর রহমান” (কাল্পনিক) খুব
বেশি নীতিবাক্য কিংবা ধর্মীয় নৈতিকতা শুনতে চায় না। প্রতি ওয়াক্তে নামাজ
পড়তে বললে বিরক্ত হয়। কিংবা ভোগবিলাস ছেড়ে সমাজ ও দেশের কাজ করতে বললে,
বিদেশ না গিয়ে দেশে সরকারি চাকুরি করতে বললে সে উল্টে দৌড় দিবে। এখনকার
স্মার্ট তরুণ “সাইফুর” স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং তার আছে ইন্টারনেটে
ফেসবুক। তাই জামাত ও বিএনপি তাকে ধর্মীয় রস দিয়ে কাছে টানে। ওড়না পেইজ দিয়ে
কাছে টানে। মুসলমানিত্ব
দিয়ে কাছে টানে। কোরানের দুইটা আয়াতের পাশাপাশি সে নারীর পর্দা নিয়ে তিনটা
ভুয়া হাদিস শেয়ার দেয়। শাহবাগে মদ গাঞ্জা খাওয়া হয় – এই শেয়ারের পাশাপাশি
ইন্ডিয়ার বিএসএফ-এর অত্যাচারের ছবিও শেয়ার দেয়। এই ফেসবুক জীবন
জামাত-বিএনপির কাজ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে।
আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের চিন্তা বলতে যে অংশটির চিন্তাকে চিহ্নিত
করছি, যারা আওয়ামী লীগের এই বাণিজ্যের খেলার বিরোধিতা করে এবং
জামাত-বিএনপির ধর্মের মুলার সাথে বাংলাদেশি মুসলমানিত্বের বাণিজ্যের
বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধ ‘সময়ের প্রয়োজনে হয়েছিল’, কিংবা
‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হয়েছিল’ এবং জনপ্রিয় মতবাদের সাথে
আমি একমত না। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার
বিরুদ্ধে বাংলাদেশ গড়ার আকুতি থেকে। প্রত্যক্ষ কারণ ছিল পাকিস্তানের
আর্মির গণহত্যা, যুদ্ধের আগে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ। কিন্তু
অন্তর্নিহিত আকুতিটি ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার, যেখানে
সংখ্যালঘু বলে কোন জাতিগোষ্ঠী বা নাগরিককে নির্যাতিত হতে হবে না। বুঝতেই
পারি, সেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে, আর বাস্তব হয়ে উঠেছে
রাজনৈতিক হত্যা, অ্যাসাসিনেশন, জেলহত্যা, সামরিক শাসন, আমলাতন্ত্র ও রহমান
ডাইনেস্টিদ্বয়ের শাসন। এই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নকালে বাংলাদেশের
ধর্মনিরপেক্ষতাকে ফিরে আসতে হবে। আর এজন্যই শাহবাগ জরুরি। শাহবাগ সেই
কণ্ঠস্বরটিকে স্থান দিয়েছে। সূচনা হয়েছে জামাত-বিএনপির বাংলাদেশি মুসলমান
তত্ত্বের বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্বের। জামাত-বিএনপির তত্ত্ব ছড়াতে
সময় লেগেছে প্রায় ২৪ বছর বা দুই যুগ। আশা করি, ধর্মনিরপেক্ষতার জয় আর দুই
যুগের আগেই হবে!
জয় বাংলা!
[পরিশিষ্টঃ লিখতে বসেছিলাম এক বাণিজ্য (ক্রিকেট ও সঙ্গীত) নিয়ে, লিখে
ফেললাম আরেক বাণিজ্যের (রাজনীতি) কথা। পারপেচুয়াল আউট অফ টপিক অভ্যাস হয়ে
যাচ্ছে মনে হয়!]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন