বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯

অরোরা

শনিবার বিকেলে একরাশ উৎকণ্ঠা আর ক্লান্তি ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠলো অরোরার হার্টবিট। হাতের তালুতে রাখা যায় এমন মাউসের মতো একটা যন্ত্র ছিল আমাদের, ওটা দিয়ে হার্টবিটের আওয়াজ শোনা যেতো। বিছানায় শুনে দীর্ঘ দুই মিনিট ধরে এক, দুই, তিন করে বারবার মাপলাম। সব ঠিক আছে তো? বিকেলের আলো ঢলে পড়তে পড়তে নিশ্চিন্তির বাতাস বইতে শুরু করলো। তখনও আমরা জানতাম না সামনে কী নাটকীয় সব ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

দিন চারেক আগে শেষ চেক-আপের সময় ডাক্তার বলেছিল রবিবারে ব্যাগ বেঁধে ক্লিনিকেই চলে আসতে। রবীন্দ্রনাথকে কাঁচকলা দেখিয়ে কন্যার মা আর সবুর করিতে পারিতেছে না। কন্যার বাপ তো আগে থেকেই রাজি, যেহেতু গর্ভবহনের কায়ক্লেশে তাকে পড়তে হয় নি তাই তার মতামত এই ব্যাপারে নগণ্য। কন্যা ওদিকে ভেতরে বসে জাতীয় খেলা হাডুডু আর বিজাতীয় খেলা ফুটবল ও সাঁতারে দিন দিন অলিম্পিকের সোনা-জয়ী হয়ে উঠছে। তার হুটোপুটিতে আমরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত, ব্রীড়া ও জড়তার মাথা খেয়ে জনে জনে বলে বেড়াচ্ছি আর আগ্রহী অনাগ্রহী নির্বিশেষে সবার হাত ধরে পেটের ওপর রেখে 'কিক' খাওয়াচ্ছি। রবিবারের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দিনগুলো চুইংগামের মতো লম্বা হয়ে গেল। সেই রাতে আবারও হার্টবিট এলোমেলো হয়ে গেল। কেমন একটা শিরশিরে ভয় হচ্ছিলো। আধুনিক মানুষ কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলতে পারি, কিন্তু মারফির সূত্রকে অস্বীকার করি কেমন করে? তাই নিশিরাতে অন্ধকার রাস্তায় নামলাম দুইজনে। বাসা থেকে ক্লিনিক দশ-পনের মিনিটের পথ কিন্তু রাতের অন্ধকারে শুধু দু'টা শাদা হেডলাইটের আলোয় হাইওয়ে দিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিলো অনন্তকালের পথে যাত্রা করছি আমরা। সামনে নিকষ কালো অন্ধকার আর অনিশ্চয়তায় ভালো করে বেশি দূরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। গাড়ির ভেতরে নিস্তব্ধতায় অনিয়মিতভাবে ধুকপুক করছে তিন-তিনটে হৃদপিণ্ড!

রাত তখন সাড়ে দশটা। এতো রাতে সারা ক্লিনিকে কোথাও তেমন শোরগোল নেই, ডাক্তার নার্স বহিরাগতদের আনাগোনা নেই, শুধু শেষমাথায় লাইটবোর্ডে লাল কালিতে এমার্জেন্সি লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। আমাদের চোখে-মুখের উদ্বিগ্নতা দেখে নার্সদের বেশি কিছু বোঝার বাকি নেই। নাম-ধাম লিখে দিতেই যা দেরি, দেখলাম তিনজন নার্স মিলে স্বর্ণাকে একটা বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। মনিটরে শোনা যাচ্ছিলো অরোরার ধুকপুক ধুকপুক হৃদস্পন্দন। ১৩০। ১৩৫। ১৪০। ১৫০। ১২৫। ১২০। একেকটা মিনিট যায় আর আমার মনে হতে থাকে সমুদ্রতীরে বসে অবিরাম স্রোত আছড়ে পড়ার শব্দ শুনছি। শাদা পর্দা দুলে ওঠে। হাসিমুখে স্ক্রাব পরা ডাক্তার এসে বসেন, আমরা তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি, কোন চিন্তা করো না, সবকিছু স্বাভাবিক আছে। পাশে নার্সও স্মিত হাসে, ফার্স্ট টাইম, রাইট?

ফেরার চিরচেনা পথটাও অদ্ভুত অচেনা মনে হচ্ছিল। মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে ততোক্ষণে, রবিবার শুরু হয়ে গেছে। আহ, বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই রবিবার! পুরো রাস্তায় গাড়ির নামগন্ধ নেই। পরদিন সবারই অফিস বলে আমাদের পাড়া-গাঁয়ের সবাই তখন নিশ্চিন্তে ঘুমের কোলে বিশ্রাম নিচ্ছে। শুধু আমরা দুইজন তৃতীয়জনের অপেক্ষায় দম আটকে বসে আছি। সিগন্যালের সবুজ-হলুদ-লাল লাইটগুলো জ্বলে নেভে, একেকটা সিগন্যাল পেরিয়ে অলিগলি ঘুরে বাসায় পৌঁছে যাই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতো। শরীর অবসন্ন দু'জনেরই, তাই শুয়ে পড়ার পরও ঘুম আসে না অনেকক্ষণ। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে হাজারটা চিন্তা চলতে থাকে ঝড়ের গতিতে।


ক্লিনিকটার নাম উইলো ক্রিক। চারপাশে সবুজ টিলার পাদদেশে একটু নিচু সমতলে দো-তলা বিল্ডিং। চারপাশে আরো কয়েকটা ছোটখাটো বিল্ডিংয়ে ফার্মেসি, এডমিন ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গত নয় মাসে বারবার এখানে চেক-আপের জন্য আসতে আসতে দরজা-জানালাগুলোও পরিচিত লাগে এখন। হাইওয়ে থেকে নেমে সোজা রাস্তায় সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে একদম পেছনের দিকে লেবার অ্যান্ড ডেলিভারি। রবিবার বিকেলে বড় একটা ড্যাফেল ব্যাগে তল্পিতল্পা তুলে এনে উঠলাম আমরা। অতি-চিন্তিত মুখে কাগজে সই-সাবুদের কাজ সেরে সব গুছিয়ে বসতে বসতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা বেজে গেলো।

আধো-ঘুমে আধো-জাগরণে ভোর হয়েছিল আমাদের, সকাল জেগে উঠে আড়মোড়া ভাঙার সময় স্বর্ণার কনট্র্যাকশন শুরু হয়ে গেলো। শুরুটা শান্ত পুকুরে ঢিল ছোঁড়া ঢেউয়ের মতো, দুপুর গড়াতেই তা হয়ে গেল প্রমত্তা পদ্মা। সন্ধ্যার দিকে ডাক্তার এসে বলে গেলো এখন থেকে আর কোনো শক্ত খাবার দেয়া যাবে না, শুধু বরফকুচি। ততক্ষণে ব্যথার মাত্রা বেড়ে গেছে।

দুপুরে আপু এসেছিল একগাদা খাবার-দাবার নিয়ে। সেগুলো বাসায় ফ্রিজে পড়ে রইলো। কেবিনে থিতু হয়ে বসে খুচরো গল্পগুলো খোলামকুচির মতো উড়ে উড়ে সঙ্গ দিচ্ছিলো আপু চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। তারপর শুধু আমরা দু'জন এই হলুদাভ আলোয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মনিটরে প্রেশার মেশিনে ক্যানুলায় জড়িয়ে বসে রইলাম। ঘরজুড়ে সশব্দে হৃদস্পন্দন বাজছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো তবুও অনেক ভয় পাচ্ছে। বাম হাতের আঙুলগুলো জড়িয়ে ধরে বসে থাকলাম। কিছু কিছু সময় হয়তো নীরবতাই সোচ্চারে কথা বলে। গত রাতের সেই অন্ধকার হাইওয়েটা আমার কাছে আবার ফিরে এলো নিকষ অন্ধকারের কালি ছড়াতে ছড়াতে। হাতের ভাঁজে সুঁই গাঁথা, সেটা দিয়ে বিন্দু বিন্দু করে আসছে মহৌষধি। ভারিক্কি চেহারার অন-কল ডাক্তার এসেছিলেন একটু আগে, ওর তো প্রি-এক্লামশিয়া হয়ে গেছে। ব্লাড প্রেশার অনেক বেশি ওঠানামা করছে। একটা লাইনে ম্যাগনেশিয়াম স্টার্ট করে দেন, ডাক্তার নার্সের দিকে তাকিয়ে বললেন। তার গলার স্বরে একটু দুশ্চিন্তা ঠাহর করলাম কিনা তা বুঝে ওঠার আগেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এই ম্যাগনেশিয়াম সরাসরি শিরায় দেয়া হবে। বাচ্চার শরীরেও চলে যাবে। বাচ্চা হওয়ার পর যদি দেখেন সে ঘুমে ঢলে পড়ছে তাহলে সেটা এই ওষুধের প্রভাবে। শুনে মনে হলো খারাপ সংবাদকেও কীভাবে মধুমাখা বাক্যে বলা যায় তা এদের কাছ থেকে শেখা দরকার। এ এক অদ্ভুত প্রতিভা। দুরুদুরু বুকে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। বললাম, বরফকুচি খাবে? দিবো? ডাক্তার চলে যাওয়ার পরে ও বললো, একটু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি, খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি ওর হাত ধরে বসে থাকলাম।

উইং জুড়ে নতুন জীবনের অপেক্ষা আর সদ্য বাচ্চাদের খুচরো আওয়াজ কানে আসে। কেবিনের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বসে বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকি। তার চোখ বোঁজা মুখের দিকে দেখি, ডান হাতে লাগানো প্রেশার মেশিনে অসম্ভব সব সংখ্যা দেখায়, বাম হাতে চলা সরল পর্যায়বৃত্ত ড্রিপ - টপটপ করে রক্তে মিশে যাচ্ছে। সন্তর্পণে দরজা খুলে আসে মারিয়া, মধ্যবয়স্ক মেক্সিকান নার্স, পেছনে চুল টেনে শক্ত করে বাঁধা। মারিয়াকে দেখলেই ভরসা লাগে, কী সুন্দর শান্ত গলায় কথা বলে, ঝটপট কাজ করে, এক হাতে টান দিয়ে বিছানা সোজা করে ফেলে শুয়ে থাকা রোগীকে না জাগিয়েই। আমাকে বসে থাকতে দেখে বলে, চিন্তা করো না, সব ঠিকঠাক হবে। কিছু খেয়েছো? আমি হুঁ ঠিক আছে বলে পাশ কাটাই। স্বর্ণা চোখ খুলে বলে, ব্যথা বেড়ে গেছে। তখন মধ্যরাত। ডাকাডাকির পর ডাক্তার বললো, এপিড্যুরাল নিয়ে নাও, কষ্ট কমে যাবে। শোয়া থেকে উঠিয়ে সোজা করে বসিয়ে মেরুদণ্ডদের হাড়ের ফাঁকে একটা ধাতব সুঁই ঢুকে গেলো, মাংস ফুঁড়ে দুই কশেরুকার মাঝের ফাঁক দিয়ে গিয়ে নরম মেরুরজ্জুতে ঢেলে দিলো স্নায়ুবশের ওষুধ। ডাক্তার দেখলেন না, পাশ থেকে আমি দেখলাম ব্যথার তীব্রতায় ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এক হাতে আমাকে আর অন্য হাতে মারিয়াকে শক্ত করে ধরে আছে, অথচ একটা টুঁ শব্দ না করে নিঃশব্দে কাঁদছে। ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভিতরে বালির বিষ, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

আধ ঘণ্টা পরে এপিড্যুরালের সুতোর মতো নলটা পিঠের ঠিক মাঝখানে নিয়ে আবার শুয়ে পড়লো স্বর্ণা। আমি বললাম, ২৫ তারিখ কিন্তু শুরু হয়ে গেছে, এখন সোমবার রাত দুইটা। স্বর্ণা বললো, দেশে কয়টা বাজে? আহা দেশ। পরানের গহীন ভেতরের সবাই যেখানে, অর্ধেক পৃথিবীর ঘুরে জুলাইয়ের উষ্ণ দুপুরের রোদ যেখানে হয়তো সবকিছু তাতিয়ে দিচ্ছে - সেই দেশ চোখ বুঁজলে দেখতে পাই। সে কল্পনা কতটুকু সত্য, কতটুকু আমার উইশফুল থিঙ্কিং - তা কে জানে! একটু কল দাও তো, খুব মন কেমন করছে। উপগ্রহে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে মুহূর্তেই সেই নীরব নিস্তব্ধ দ্বিপ্রহর রাতের কেবিনে উৎকণ্ঠিত দেশ বেজে উঠলো, স্বর্ণা, কেমন আছো? কেমন লাগছে? অনীক, ওর কী অবস্থা? ডাক্তার কী বলেছে? অরোরা কেমন আছে? সবকিছু ঠিক আছে তো! পরিস্থিতি সামলাতে হয়, বাস্তবতায় রঙ চড়িয়ে বলতে হয়। এ যেন এক দুর্ভেদ্য মায়ার ঝিল্লি, যার এপাশ থেকে ওপাশে সব ছবি সব কথা বদলে যেতে থাকে।

এমনকি সবচেয়ে গাঢ় তিমির রাত্রিও একদিন শেষ হয়, তাই আধো ঘুম আধো জাগরণের সেই প্রতীক্ষার রাত শেষ হয়। জানালার পাশে কিছুক্ষণের জন্য পিঠ সোজা করে শুয়েছিলাম। ব্লাইন্ডের ফাঁক গলে নরম নীল আলো এসে জানান দেয় সকাল হয়ে গেছে। মারিয়া এসে কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ঝুলিয়ে বলে, বাচ্চা ঘুরে গেছে, ওকে ধীরে ধীরে সোজা করতে হবে, নইলে নরমাল ডেলিভারি হবে না। স্বর্ণাকে এক কাত করে শুইয়ে কাধ ধরে রাখলাম আমি। অন্যদিকে মারিয়া স্থির হাত বুলিয়ে আশ্চর্য ম্যাজিক শুরু করলো। নিমগ্ন ধ্যানী চোখ প্রায় নিমীলিত, গ্লাভস পরা দশ আঙুলে ছুঁয়ে ধরে আছে আমার অপত্যকে। খেলার ছলে যে ঘুরে গেছে অনেকটাই, এদিকে ওর যে জেগে ওঠার সময় হয়েছে তা খেয়ালই নেই হয়তো। দমবন্ধ দুই মিনিট পর ধীরে ধীরে সরতে শুরু করলো সে, ঘুমের ঘোরে। জাদুমন্ত্রের মতো ভেলকিতে ঘুরে যেতে থাকলো সূর্যঘড়ির ছায়ার মতো, পৃথিবীর ঘূর্ণনের মতো। সে এক নিবিড় সাঁতার জাগরণের দিকে।

ঘড়িতে তখন মধ্যদুপুর ছুঁই-ছুঁই। ডাক্তার ডিউক এসে পড়লেন, লেটস গো। স্বর্ণাকে দেখে মনে হলো যেন ট্র্যাপিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আর নিচ থেকে ওকে সঙ্কেত দিলো কেউ। জগত-সংসারের সকল শক্তি তার ভেতরে জড়ো হলো।

লেটস পুশ!

ওয়ান!

টু!

থ্রি!

ফোর!

ফাইভ!

সিক্স!

সেভেন!

এইট!

নাইন!

টেন!

...

নাউ ব্রিদ!

... ...

এগেইন!




আমার মনে হচ্ছিল উত্তাল ঝড়ের মধ্যে একটা ছোট ডিঙি নৌকায় চড়েছি আমরা। চারিদিকে থই থই পানি - সে পানির রঙ কালচে সবুজ। জন্মনালিকা বেয়ে নেমে এসেছে প্রবল খরস্রোতা সে নদী। সেই নদীর ওপর দুলছি আমরা, ডুবছি, ভেসে উঠছি, ফের ডুবছি। ওর হাত প্রচণ্ড জোরে ধরে রাখি। এই ঝড়ের মুখে এক মুহূর্ত ঢিল দিলে ওকে হারিয়ে ফেলবো। মাঝে দুয়েকবার বরফকুচি দেই ওর শুষ্ক-তপ্ত ঠোঁটে। পুশ এগেইন! আবার নিঃশ্বাস বন্ধ করে ডুব দেই দু'জনে। দশ সেকেন্ড পর ভেসে উঠি। ওর সারা শরীরে ঢেউয়ের মতো অ্যাড্রিনালিন বইতে থাকে। চোখমুখ থেকে হাতে, হাত থেকে পেটে, পেট থেকে পায়ে, আবার উজানে। রক্তের নদীতে জোয়ার ওঠে যেন আর সেই সুউচ্চ পর্বতসম ঢেউয়ের চূড়ায় দেখি চিকচিক করছে কালো চুল। মারিয়া বলে, শি হ্যাজ এ লট অফ হেয়ার! আমার ঘোর লাগে দু'চোখে। দেখি চূড়া থেকে দুর্দান্ত গতিতে নেমে আসছে সে। পুশ! ওয়ান! টু! থ্রি! ফোর! ফাইভ!!! ডাক্তার বলে, শি ইজ হিয়ার!



তীব্র চিৎকারে সেই কেবিনের বাতাস পাতলা কাগজের মতো চিরে যায়। আমার শক্ত করে ধরে রাখা হাতে টান পড়ে। স্বর্ণা আমাকে ডাকে। আমার কোলে রক্ত-মাতৃকাজলে মাখা একজন হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে, হয়তো মায়ের কাছে যাওয়ার জন্যেই। আমি ওর নরম তুলতুলে শরীরটা আস্তে করে স্বর্ণার বুকে তুলে দেই। ডাক্তার হাসিমুখে বলে, কাঁদছো কেন? আজকে তো খুশির দিন! মারিয়া গত রাতে আমাদের কাছে বাংলা শিখেছিল, সে আধো আধো বাংলায় বলে, সোন্দর বেবি!

বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯

সিফিলিজ্‌ড ইয়ার্বল্‌স্‌

ইশকুলে কাঠের চেয়ার-বেঞ্চিতে বসে ইংরেজি ভাষাটা শেখার সময় কুশনের অভাবে আমাদের পাছা ব্যথা করছিল বলে ঠিকমতো শেখা হয় নাই এবং ভিন্‌দেশি শব্দগুলো কানে ঢুকলেও মাথায় ঢোকে নাই তাই কমপ্রিহেনশনে আমরা বরাবরই কাঁচা

আর আঙুল বাঁকা করে ঘি তোলা শিখি নাই বলে জটিল শব্দের গভীর অর্থকে টেনে পিটিয়ে সোজা করে অভ্যেস তাই স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি যেখানে নির্জলা আপ-ডাউন-আপ-ডাউন আল্ট্রাভায়োলেন্সের চাইতে দর্শন বা বিজ্ঞান নিয়ে দীর্ঘ দুই ঘণ্টার আলাপ আড্ডা পরিতৃপ্তি দেয়ার কথা বলে তা এই বেলা বঙ্গজনপদে এসে হইয়া যায় চটুল ইনফোজাহিরের বাহানা কিংবা খোঁচাখুঁচির বিষয়