শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯

চিরকুট

কোন কোন দিন ভাঙা মার্বেলের মতো - মসৃণ মাটিতে বাঁকা হয়ে পড়ে থাকে আর একটু ঢালু পেলে গড়াতে শুরু করে। কিন্তু সব দিক সুষম গোলকের মতো গোল গোল থাকে না বলে তার চলন হয় বড়ই বেখাপ্পা। যেন কেউ বলে নি গড়িয়ে যাও, সেই দিনটা তবু প্রাণপণে যেতে চাইছে। গরমে, ঘামে, ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে পড়তেও পড়ছে না।
এরকম দিনে সকালে উঠে মনে হয় কেউ সদ্য লাল আটার রুটি ভেজে দিলো, সাথে একটা ডিম পোচ। পাশে এক কাপ ধূমায়িত চা। চুমুক দিতে দিতে রোদ এসে পড়বে পায়ের পাতায়, চড়াক করে একটা চড় কষাবে। এরকম দিনে অনেক কাজ থাকে - জোড়াতালি দিয়ে রিপু করে কাজের শরীরে ধানক্ষেতের মতো চৌকো চৌকো খোপ খোপ তালি বসে, মাঝের আইলে আইলে সেলাইয়ের ফোঁড়। কাজ দাঁড়িয়ে যায়। 

এমন দিনে দুপুরের থমথমে বাতাসে শহরের বাসগুলো রাস্তা দখল করে থাকে, আর গগনবিদারী আহ্বানে ক্ষুধার্ত স্নান করা পরিপাটি বেশভূষা নিয়ে সকলে ভিড় করে উপাসনালয়ে। সেখানে কেউ বলে না কীভাবে মাত্র পৌনে দুই সপ্তাহে ধর্ষণ হয়েছে দুই কুড়ি। তিন লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার শিশু ঘরে ও বাইরে কাজ করতে গিয়ে ঠাশ ঠাশ চড় থাপ্পড় কিল ঘুষি লাথি খেয়েছে। স্বচ্ছ কাচের মত নিষ্প্রাণ চোখে পাশ ফিরে উপুড় হয়ে মুখ ফিরিয়ে নীরবে ব্যবহৃত হয়েছে আড়াই কোটি নারী - যাদের ফার্স্ট নেম মিসেস লাস্ট নেম আহমেদ কিংবা ইসলাম কিংবা রহমান কিংবা চৌধুরি। গত অগ্রহায়ণে মরে যাওয়া কিশোরকে কেউ মনে রাখে না, তার অর্ধভগ্ন মা ছাড়া। কোনো কোনো দিন হুট করে তাদের কথা মনে পড়ে বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার আগে। 

সেসব দিনে ভাঙা মার্বেলটির মতো গড়িয়ে কোন্‌ অতলে পড়ে যাচ্ছিলাম আমি? সমতল ব্যস্ততা পেলে ভালো হতো। হয়ও। শ'য়ে শ'য়ে ব্যস্ততা ঘিরে ধরে ধারালো ছনের মতো, ঘাসের মতো। পড়ে থাকি তথৈবচ। পড়ে থেকে দেখি শোরগোল, হইচই। ভুলে যাই আমি ভাঙা মার্বেল, সকালের চড়চড়ে রোদ। সন্ধ্যে নামার আগে দেখি কেউ বরফশীতল পানির বোতল কিনে পাঁচিলের নিচে বসে অপেক্ষা করছে। আমার একইসাথে তৃষ্ণা পায় আর চামড়া জ্বলতে থাকে। আপুকে মনে পড়ে। শ্মশানের মতো ধু ধু প্রান্তরে একটা কাকতাড়ুয়া লাগাই। এখন আপুকে আসতে দেয়া যাবে না। একটা ফোন এসে বাঁচিয়ে দেয়। কংক্রিটে গড়াচ্ছি ভাঙা মার্বেলের মতো ঘড়্‌ঘড়্‌ ঘড়্‌ঘড়্‌, যন্ত্রের মতো জরুরি মাপা মাপা কথা বলি। গ্রীবা উঁচিয়ে লোকটা পানি খায়। ওর বাড়ি নেই। আমি বাড়ি ফিরে চলি। রাতে খুব ঝড় আসে। 

আর কোনোদিন খুঁজে না পাওয়ার নিশ্চয়তায় ভাঙা মার্বেল হারিয়ে যায়।

শনিবার, ১১ মে, ২০১৯

শেয়ার

একে একে সবই তবে নিভৃতে যাপন করতে হবে। সব দুঃখ, সব হর্ষ, সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ চাপাতে চাপাতে একদম ভেতরে কুঠুরিতে ঠেলে দিতে হবে।

বাইরে এনো না কিছুই। এনেছো, কি মরেছো। কেউ বলবে আদিখ্যেতা, কেউ বলবে 'আহা খ্যাতা, আমি আছি তোর চেয়ে কষ্টে’, কেউ এসে হাহা দিবে, কেউ এসে ঝামা দিবে স্পষ্টে।

এর চেয়ে চেপে রাখো মনের দেয়ালে মাখো গাঢ় রঙ শোকের ও বিষাদের। সেসবের মূল্য কেবল তোমার কাছেই অমূল্য বিনিময় প্রথা আর চালু নেই।