রবিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৯

রাজভোগ

মিষ্টি বিলানো হচ্ছে।

সচরাচর এমন দৃশ্য দেখা যায় না। উপলক্ষ্য জরুরি না। কেউ কিছুতে পাশ করেছে কিংবা উতরে গেছে, নয়তো চাকরি বা পদোন্নতি পেয়েছে। এক হাতে প্রাপ্তি ছাড়া কেউ তো অন্য হাত খুলে মিষ্টি বিলায় নি কোনোকালেও। রাস্তার পাশে ফুটপাত আর দোকানের মাঝে কিছুটা জায়গা ছিল। সেখানেই একজন টেবিলে মিষ্টি রেখে ডাকছে, ওরে! আয় মিষ্টি খেয়ে যা! তার পাশে ছুঁচো চেহারার এক চ্যালাবিশেষ মাছি তাড়াচ্ছে। চারপাশে ভনভন ভনভন। অতি-উৎসাহী কয়েকজন গিয়েই খাবলা মেরে দুই হাতে মিষ্টি তুলে মুখে সেঁধিয়ে দিলো। সাথে সাথে বিলানেওয়ালার হুঙ্কার, বুঝেশুনে খা! নইলে সরে যা! সরে যা!

হুঙ্কারে কাজ হলো না। সেই কয়েকজনের দেখাদেখি বাকিরাও এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, গুড়ের সন্দেশ, ছানার সন্দেশ, পান্তুয়া, আমৃতি, গোলাপজাম, কালোজাম, লাড্ডু, জিলাপি, ছানামুখী, চমচম, মণ্ডা, মোহনভোগ, রাজভোগ, রসমালাই - যে যেটা পাচ্ছে হাতে নিয়ে মুখে দ্রুত চালান করে দিচ্ছে। একটা কোনোমতে কোঁৎ করে গিলেই পরেরটা ঢুকছে। হাতাহাতির চোটে সব মিষ্টির রস মিশে টেবিল জামা হাত মুখ সব একাকার।

বেশিক্ষণ লাগলো না এই লুটতরাজে। ফুটপাতে ভিড় করে বাকিরা দেখলো। কেউ কেউ তালি দিলো, অন্যের ভোগেও বুঝি নিজের কিছুমিছু আনন্দ হয়। মুখ হা করে ডাঙায় তোলা মাছের মতো খাবি খেলো কেউ কেউ, অন্যদের মুখে ঝোল ঝোল মিষ্টি ঢোকার দৃশ্য বুঝি স্লো-মোশনে দেখছিলো তারা। শ্যাডো-অ্যাক্টিংয়ের মহড়া। কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে হনহন করে হেঁটে পার হলেন। এবারে অবাক হলাম। এ যুগে এখনও কেউ কেউ আছে, যারা এসবে বিরক্ত হন! প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরকে চরে বেড়াতে দেখলাম যেন! তীব্র ভ্রূকূটি। হিলহিলে শরীর। পরিমিত খাওয়া-দাওয়া আর নো ফাস্ট ফুড। শরীর দেখলেই বোঝা যায়। হাতে খড়খড়ে ব্যাগ ধরা, ভার নিশ্চয়ই, কব্জির নিচে তালুর উল্টোপিঠের রগগুলো ফুলে ফুলে আছে। মহিলাকে দেখে মায়া লাগলো। ভুল যুগে চলে এসেছেন ম্যাডাম।

এখানে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে লুঠ হয়ে যায় মিষ্টান্ন। কয়েকজন খায়, বাকিরা দেখে। দুয়েকজন ছবিটবি তুলে বাকিদের জানায়, কী দেখলাম রে বাবা আজকে! সেই খাওনদাওন! ওয়াও! আমার মতো দুয়েকজন উদাস হয়ে দেখে, নিরাসক্ত। লোভও হচ্ছে না, ভিড়ে ভিড়তে ইচ্ছেও করছে না, আবার আপনার মতো বিরক্তও হতে পারছি না খুব একটা। দেখতে দেখতে সয়ে গেছে ম্যাডাম। আপনিও একদিন এমন হবেন, আমাদের কাতারে এসে দাঁড়াবেন। এ'যুগের আধুনিক ডাইনোসরকেও অভিযোজিত হতে হয়, কারণ ইতিহাসে পড়া আছে পাল্টে না গেলে বিলুপ্তি নিশ্চিত।

বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৯

চব্বিশে অক্টোবর

মাঝে মাঝে আমি হিসাব করি
প্রতিদিন কতোবার তোমার কথা মনে পড়ে
কতোবার থেমে যায় নিঃশ্বাস -
প্রশ্বাস মেপে মেপে দম নেই।

ছাড়ি।

হুট করে হৃৎপিণ্ড ধুকপুক ধুকপুক
সচেতন স্বচ্ছন্দ স্পন্দন

চলছে ঘড়ির মতো নিয়মে অনিয়মে
মাঝে মাঝে তবু থমকে যাই
সময় কতো গেল জানি না
আজ কতো তারিখ জানি না
এখন কয়টা বাজে জানি না

হাতে ঘড়ি নেই বহু দিন
এইসব বেহিসাব হিসাবে
আরো সময় চলে গেলো
তারপর মনে পড়ে তোমার কথা

মহাখালী পার হই
বনানী পার হই
কাফরুল পার হই
মাঠ মসজিদ রেল ক্রসিং ফ্লাই ওভার হাইওয়ে
সব দুমড়ে মুচড়ে হারানো ঘড়ির কাঁটা হয়ে
ঘোরে... ঘোরে... ঘোরে...