বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১২

ভিন্‌

হেনরি নামের যে বুড়ো লোকটা আমাদের শাটলের ড্রাইভার, তাকে আমার বেশ লাগে। মিশুক গল্পবাজ। একদিন সকালের প্রথম ট্রিপে উঠেছি, ঘুম ঘুম লাগছে আর ভাবছি ল্যাবে ঢুকেই কফি খেতে হবে। হেনরি কী মনে করে কৌতুক বলা শুরু করলো।
দুই ভাই, জন আর স্টিভ। দুইজনেই মহা চামার। প্রচুর পয়সা বানিয়েছে মানুষ ঠকিয়ে। একই শহরে বাস করে তারা, এবং তাদের খারাপ স্বভাবের কারণে শহরের কেউই তাদের দুই চোখে দেখতে পারে না। একদিন স্টিভ মারা গেল। সৎকার অনুষ্ঠানের আগে আগে জন পাদ্রিকে বললো, "দেখেন, আমি জানি আমার ভাইয়ের ওপর আপনি আর শহরের বাকিরা ক্ষেপে আছেন। কিন্তু আমি চাই তার এই অনুষ্ঠানটা ভালোমত হোক। আপনি যদি আপনার বক্তব্যের মাঝে (যাকে ইংরেজিতে বলে ইউলজি) ওর প্রশংসা করেন, তাহলে আপনাকে এক লাখ ডলার দেব।" পাদ্রি পড়লেন মহা ফ্যাসাদে। একদিকে এতোগুলো টাকার লোভ, আরেকদিকে চার্চের ভেতরে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলতেও মন সায় দিচ্ছে না, তাও আবার পুরো শহরবাসীর সামনে!
যাই হোক, পরদিন অনুষ্ঠানের সময় ইউলজি পাঠ করতে উঠলেন পাদ্রি সাহেব। বলতে শুরু করলেন, "এই স্টিভের মত খারাপ মানুষ হয় না। সে এই শহরের প্রায় সবাইকেই ঠকিয়েছে, মিথ্যা বলতো হরদম, মানুষের সম্পত্তি জবরদখল করেছে। তার পাপকর্মের ইয়ত্তা নাই!...
...
...
...
... কিন্তু তার ভাই জনের অপকর্মের তুলনায় স্টিভ একেবারে ফেরেশতা!"
হেনরি লোকটা সাদাসিধা, হাসিখুশি মানুষ। প্রতিদিন ল্যাবের কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় দশ-পনের মিনিট তার সাথে কথা বলি, সময়টা উপভোগ করি। দেশের কথা তখন আর মনে পড়ে না। বাসায় ফিরে ফেসবুক খুলে দেখি মানুষের ইনিয়ে-বিনিয়ে কান্না। কখনো ফিলিস্তিন আর কখনো আশুলিয়া। হাসি পায় এমন ছেলেমানুষি দেখে। এগুলো করে কী হবে? কিস্যু না। কান্নাকাটি, চিল্লাচিল্লির কোন দাম নাই। সবই ফাঁপা শব্দমালা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন