শনিবার, ২৮ জুন, ২০০৮

বর্তমান

ঘুম
শরীর জুড়ে
কোষে কোষে;


ঘুন
মগজ জুড়ে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে;


দিন
জ্বলজ্বলে
স্যাঁতস্যাঁতে;


কাক
কলরব
ডালে ডালে;


চোখ
জড়িয়ে পড়ে
পাতাদুটো নিনির্মিষ;


ধুপ্‌-ঢং-সর্‌সর্‌।






------
*লেখাটা লিখেছিলাম কক্সবাজারে একটা ঝটিকা সফরশেষে ফিরে দারুন ক্লান্তিমাখা এক ভোরে।

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০০৮

বৃক্ষের জীবন/আমার জীবন

আমি কিছুটা
বৃক্ষের মতই যাপন করি
দিন-রাত-অহ্ন-সমূহ,
বোধির শুরু থেকেই
মনে হয়েছে দুটি সবুজে পাতা
শিরে নিয়ে,
হালকা তরুণ শরীরে
যেন চারাগাছ হয়ে আছি।
একদিন আলোড়নে ভুলে গেছি
সেইটুকু, অযথাই
তারপর যোগালেরা এসে লম্বা করাতে
কেটে নিয়ে গেলে
ডাল পালা হাত পা, তাকিয়ে
দেখি- পড়ে থাকা শিকড়,
কাণ্ডমূল, মূলস্ত্রাণ জুড়ে
কালো কাঠকয়লার ভস্ম যাবতীয়।
পড়ে পড়ে চাপে আঘাতে
কবেই বদলে গেছি,
বৃক্ষের মতই।

রবিবার, ১৫ জুন, ২০০৮

পিতা ও পুত্রের মঞ্চাভিনয়

দু’জনের এক নাটক যেন, মঞ্চ তৈরি, সময় বিকেল।
সফোক্লিসের মত একচোখে চেয়ে আছে পিতা,
রোদ-মিশে-জ্বলজ্বলে চুলে তাঁর প্রবল আলোড়ন
“চুলগুলো পেকে গেছে,” ভাবে পিতার দূর্দান্ত
যুবক পুত্র, নিপাট পোশাক পরে বিন্যস্ত।
“বাবাকে নতুন একটা জামা পাঠাতে হবে এবার।”
পুকুরের জলে চারা ছুঁড়ে ব্যাঙলাফ খেলার মত,
এরকম টুকরা-টাকরা এক লাইনের বক্তব্য খেলে যায়
পুত্রের মাথায়। পিতা কেশে বলেন, “তাহলে যাচ্ছ তবে,
আজকেই? আর ক’টা দিন থেকে যেতে পারতে--”
অল্প থেমে বলেন, “খেয়াল নিও নিজের, সাবধানে থেকো--”
আরো কি কি বলতে চান পিতা, কথা সরে না মুখে, যেন
গলা টিপে ধরে সিন্দাবাদের বুড়ো! ছেলেকে তাঁর মনে হতে থাকে
হারুন-অর-রশিদ, বাগদাদের রাজাধিরাজ, দরবারে বসে
দেখছেন নাজেহাল সিন্দাবাদ, কাঁধে নিয়ে বুড়োকে, দাঁড়িয়ে।
“ঠিক আছে বাবা, দোয়া কোরো। আসি।” হারুন-অর-রশিদ
রাস্তায় নেমে পড়েন, খাঁ খাঁ উঠোন কিংবা দরবারে
দাঁড়িয়ে থাকে বুড়ো-কাঁধে সিন্দাবাদ।

সোমবার, ২ জুন, ২০০৮

সেলিমের বউ

টিনের ঘরে বাস করে সেলিমের বউ, চারপাশে চোখ মেলে
দেখে ঢেউখেলানো ধূসরতা। টিনগুলো ঘিরে থাকে তাকে
রাত্রিদিন, অথবা অহোরাত্র, যেভাবে দেখা যায় বিষয়টিকে।
সেলিম গাড়ি চালায়, মধ্যবিত্ত সংসারের প্রিয় বাহন
চলে তার হস্তপদের চকিৎ চালনায়
ডানে বামে দেখে শুনে গাড়ি চলে, সেলিম সজাগ,
পাশে কর্তাপুত্র ধুপধুপ শব্দে শোনে স্টেরিওতে গান।
পেছনে বসে কখনও বেগম কিংবা কর্তা স্বয়ং, গাড়ি
চলে মসৃণ, মাঝে মাঝে বদলাতে হয় মবিল কিংবা ফুয়েল।
সেলিমের ক্লান্তি নেই প্যাডেলে, গরমশীতবর্ষা পেরিয়ে।
রাতে ঘরে ফেরে সেলিমের শরীর, তেলচিটে শার্ট খুলে
গোসল করে বা সরাসরি খেয়ে নেয় খাবলা খাবলা ভাত।


সেলিমের বউ পরে স্টোভ নিভিয়ে শেষ করে কাজ,দৈনন্দিন,
পাশে শুয়ে সেলিমের হা-মুখ দেখে কী ভাবে সে?
মোগলীয় নাম তার স্বামীর, নিজেকে ভাবতেই পারে সে
দিল্লি ভারতের সম্রাজ্ঞীর মত অসাধারণ!
সহসাই ভুল ভাঙে, অন্ধকারে, ফ্যানের ভনভনানিতে
সেলিমের পা চলে স্বতঃস্ফূর্ত-
ব্রেক ক্লাচ আর এক্সেলেটর,
সেলিমের বউয়ের পাশে ঘুমায় তার ড্রাইভার স্বামী।