মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০০৯

এসিড

অবিশ্রাম, অবিরাম কোলাহল সমূহ খুব কোমল ফুলের মতো রন্ধ্রবাসী হয়েছে আমার, তারপরে আমি ভুলে গেছি কবে যেনো সেই ফুলগুলো গজিয়ে গেছে শরীরে, ত্বকের বদলে আমি কিছু কোলাহল-ফুল নিয়ে ঘুরি। আমি পথে বেরুলেই সকলে এসে হাসিমুখে ফুলগুলো তুলে নিয়ে যায়, সেসব ফুলের সৌরভ, কোলাহল-সুর, চিৎকার ও তীক্ষ্ণ ক্রন্দন আমার চারপাশে ঘুরতে থাকে, নাচতে থাকে। আমাকে ছেড়ে যেতে তাদের অনেক কষ্ট হয় বোধহয়। আমি খালি আমাকে নিয়েই ভাবি, এই ফুলগুলোর কষ্ট বুঝে ওঠার কোনো চেষ্টা করি না। মাঝে মাঝে, যখন রাত হয়ে আসে চরাচরে, সেখানে আলো থাকে না, ছায়ার মাঝে অজানা মানুষেরা লুকিয়ে থাকে-- পাগল ও উদভ্রান্ত মানুষের সারি সারি স্রোত দেখা যায়, সেইসব রূপকথা-কালে, আমি বাইরে বেরুলে সেই ফুলগুলো হারিয়ে ফেলি। পথের ঠিকানা জানি না সেই পথের। তাই ফিরে গিয়ে প্রিয় সরব ফুলের মৃতশরীর কবর দেয়া হয় না আমার। তারা অনেক দূরের সেই গুপ্তপথে একা একা শুয়ে থাকে; আমি জানি।


তারপরে আবারও অসময়ে নতুন ত্বকে জন্মায় অজস্র কাঁটাহীন পুষ্প, অপরূপ বিষধর আপেল। হলুদ আপেলে লেখা থাকে প্রণয় ও পাপের ইতিহাস, সেখানে আমার নামও দেখি, চোখে পড়ে। দীর্ঘতালিকায় এই নামটিই জ্বলজ্বলে! তারপরে তালিকা থেকে সারি সারি অক্ষরগুলো গড়িয়ে পড়ে... ভারি বিউটেন! খবরে দেখায়, ভূগর্ভের যোনি থেকে তেল ওঠাতে লকলক করছে তাদের জিব। জোরালো জিবে তারা ক্রমাগত খুঁড়ছে, পুলক হবেই জানি আমরা, নিস্পৃহচোখে দেখছি প্রকাণ্ড ব্লো-জব। ভূখণ্ড জুড়ে অজস্র বেতার শীৎকার ভালো লাগে আমার। এই ঐতিহাসিক সময়ে আমি আর তুমি আর বাকি তোমরা সকলে বেঁচে আছি -- এই অস্বাভাবিক চিন্তা আমারকে সেই আকাঙ্ক্ষিত পুলকটি পাইয়ে দেয়!


তারপরেও গল্প চলে, সূর্যহীন দুপুর যেমন মেঘমাখা ঘুম নিয়ে আসে, অন্ধকার নিভৃত নিদ্রায় ঢলে পড়ার আগে পুরনো স্মৃতি ফিরে আসে। ক্যাওস ও এনার্কি হাত ধরাধরি করে চলুক, আমাদের কাঁথার বুননের বাইরে ফুটে থাক কোলাহল-ফুলের দুরন্ত বিস্তৃত বাগান। সেখানে রূপকথা-পুরুষেরা নিষ্কাম জড়িয়ে ধরেছে সাপের শরীর, প্যাঁচানো সাপের মতো শরীর নিয়ে সুকন্যারা রূপকথার পৃষ্ঠায় ছাপা হয়ে গেছে। তারপরে অক্ষরের গ্রীবায় তাদের কাহিনী পড়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, এমনি এমনি। এই সকল কোলাহল ধ্রুবক জেনে আমরা জেগে উঠি- ঠুঁটো জগন্নাথের মতোন!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন