শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

ডু নট ডিসটার্ব মাই সার্কেলস

খ্রিষ্ট জন্মের দুইশ বারো বছর আগে, সাইরাকুস নগরীতে কিছু রোমান সৈন্য ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়, তাদের সেনাপতি ছিলেন মার্কাস ক্লডিয়াস মার্সেলাস। প্রায় দুই বছর অবরোধ করে রাখার পরে রোমান পক্ষ জিতে গেছে, ঢুকে পড়েছে সাইরাকুস নগরীর ভেতরে।


এক বৃদ্ধ কিছু গাণিতিক সরঞ্জাম নিয়ে গভীর মনোযোগে কাজ করছিলেন কোন অজ্ঞাত গাণিতিক সমস্যা নিয়ে। তাঁর চারপাশে ছড়ানো ছিলো বেশ কিছু বৃত্তের আকৃতি। রোমান সৈন্যদল সেগুলো তছনছ করে তার দিকে এগিয়ে এলে তিনি অসহিষ্ণু হয়ে বললেন, "Noli turbare circulos meos" ("Do not disturb my circles")। সৈন্যদের নেতা তাঁকে এই দম্ভোক্তি ও অসম্মানের অপরাধে সেনাপতির কাছে ধরে নিয়ে যেতে চাইলেন। বৃদ্ধ তখনও গাণিতিক সমস্যায় মগ্ন, তিনি যেতে রাজি হলেন না। ক্রোধে মত্ত সৈন্যদলের নেতা তার তীক্ষ্ণ তলোয়ারে মুহূর্তেই মেরে ফেললেন পয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধকে!


বৃদ্ধের নাম ছিলো আর্কিমিডিস। প্রবল প্রতাপশালী রোমান সৈন্যদের চাইতেও যাঁর কাছে নীরিহ বৃত্তগুলো জরুরি ছিলো!




খ্রিষ্টের জন্মের দুই হাজার চার বছর পরে ঢাকা নগরীতেও উন্মত্ত চাপাতির কোপে আক্রান্ত হলেন আরেকজন গবেষক, বিদ্যানুরাগী, কবি। সেই বছরেই, মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস পর তিনি মারা গেছেন। তাঁর কাছেও ধর্মান্ধ, গোঁড়া, প্রতিক্রিয়াশীল হায়েনাদের চেয়ে জরুরি ছিলো রাড়িখাল, ফুল, কবিতা, বাঙলা ভাষা, বাঙলাদেশ*!


আজ বুদ্ধিবৃত্তির বিরুদ্ধে ধর্মান্ধের এই আক্রমণের দিনেআপনাকে স্মরণ করছি, প্রিয় হুমায়ুন আজাদ। আপনি যে বাংলাদেশ দেখে শিউরে উঠেছিলেন, আমরা সেই বাংলাদেশেই স্মৃতিহীন ও বিকারহীন হয়ে বাস করছি।






***




[*হুমায়ুন আজাদের লেখায় বাঙলাদেশ বানানটি অক্ষত রাখা হয়েছে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন