বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫

এখানে কেউ থাকে না এখন

কবিতার প্রতি আমি নিষ্ঠুর অবহেলা দেখিয়েছি।


ঘটনাটা কীভাবে ঘটলো বলি। আমি কবিতার প্রেমে পড়েছিলাম। দিনরাত কবিতা পড়তাম। নতুন কবিতা। পুরাতন কবিতা। চর্যাপদের বিলুপ্ত বাংলায় লেখা কবিতা। ইংরেজি মিডিয়াম বিদেশি শব্দ ভারাক্রান্ত কবিতা। ভেবেছিলাম এত এত কবিতা পড়তে থাকলে প্রেম উড়ে চলে যাবে। বিরক্তি ধরে যাবে কবিতার ওপর। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম চব্বিশ ঘন্টা ধরে এলোমেলো উড়ো পঙক্তি মগজে ঘুরে বেড়াচ্ছে... জোনাকপোকার মতো জ্বলছে... নিভছে...


কবিতার প্রতি এই অদ্ভুত ভালোবাসা লুকিয়ে রাখতাম। আমাদের জনপদে কবিতা হাসিঠাট্টা আর মকারির বিষয়। কবিতা হোপলেসরা লেখে। কবিতা লুজাররা পড়ে। তাই আমি এই প্রেম লুকিয়ে রাখলাম। অমন প্রবল প্রেম এসব কথায় কমে নাই।


কীভাবে অবহেলার শুরু হলো তা ঠাহর করতে পারি না। এমন নয় যে কোনো এক সকালে উঠে কবিতাকে ঠেলে বিছানা থেকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছি। এমনও ঘটে নি কখনো, কবিতা এসে মগজে ঘাই মেরেছে আর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। হয়তো হিংসুটে সময় আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছিল, কিংবা বারবার কবিতা নিয়ে সবার মিথ্যে কথাগুলো শুনতে শুনতে শুনতে আমিও বিষিয়ে গিয়েছি। হেমলকের পাত্রের কোষেও তো কিছু বিষ চুঁইয়ে চুঁইয়ে মিশে ছিল হয়তো...


অথবা হতে পারে এগুলো মিথ্যে অজুহাত, হতে পারে আমি নিজেই ভেঙে চুরে দুমড়ে ছুঁড়ে দিয়েছি কবিতাকে। কবিতার অনেক দাবি। সময় দাবি করে সে, দাবি করে মনোযোগ, তার হাতে লম্বা বাজারের ফর্দ থাকে প্রায়ই, মাঝে মাঝে সে চিৎকার করে ওঠে রাগে... তাই আমি নিজেই সরে গেছি দূরে! কাপুরুষ সাহস করে বিদায়টাও নিতে জানে না।


তারপর কেটে গেছে দিনরাত কবিতাবিহীন উন্মাদনাহীন হীন-দীন দিনযাপনের ফাঁকে টের পাই না কবিতার অনুপস্থিতি। মনের ভুলে দুয়েকটা পঙক্তি মাথায় সেঁধিয়ে যেতো, হুট করে চোখে পড়ে যেতো কারো লেখা কোন অপূর্ব কথামালা, অজান্তেই তাকিয়ে থাকতাম কোন ছন্দোমত্ত স্তবকে...


...শিহরণ!


পুরনো প্রেম কাছে টানে পুরনো কিছুই আর সেরকম নাই যদিও। বদলে গেছি আমি বদলে গেছে কবিতা, তাও সে কাছে ডাকে দুঃসময়ে আর নিরুপায় আত্মসমর্পণ ছাড়া কোন পথ খোলা থাকে না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন