রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

মুখোশের মুখ্য বৈশিষ্ট্য

তার ভেতরে অচেনা কেউ একজন বসবাস করে
মাঝে মাঝে আয়নায় তার মুখ দেখে সে, তার মুখ ফুঁড়ে
আবার হঠাৎই হারিয়ে যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই।

থেকে থেকে মনে পড়ে ফকির লালন এরকম
কিছু একটা বলেছিল, তোমার ঘরে বাস করে কারা
ও মন জানো না। সে জানে না অজানা কেউ তার
ঘরে কীভাবে এলো তাকে চেনে না সে, বাড়ছে
এখন সদাভয় সদাসন্ত্রস্ততা ও তটস্থ সংশয়!

তারপর সকালে ঘুম ভেঙে গেলে সে টের পেল
আরেকজন কথা বলছে কণ্ঠ চুরি হয়ে গেছে
পথে দেখা হলো কারো কারো সাথে, তারা
হাত মেলালো, হাসিমুখে কিঞ্চিৎ বাতচিত
করা শেষে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপহীন চলে গেল।

বাসে ঝুলে অফিসে যাচ্ছে সে, আচমকা ব্রেক
কারো গায়ে হুমড়ি খেলে স্যরি বললো আরেকজন,
লোকটা তার দিকে কিড়মিড় করে তাকালো,
সে বাস থেকে তড়িঘড়ি নেমে ফুটপাতে উঠে দেখে
আরেকজন হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে তার দেহটা নিয়ে।

সারাদিন আরেকজন তার হয়ে কথা বলে, তার হয়ে
খ্যাক খ্যাক করে হাসে কলিগের অশ্লীল রসিকতায়
ভরাট রিসেপশনিস্টের দিকে আড়চোখে তাকায়
লাঞ্চে কামড়ে কামড়ে খায় চিকেন তন্দুরি, আর
তার হয়ে মোড় থেকে চা সিগারেট খায়।

লিফটের আয়নায় সে দেখে আরেকজনের চেহারা
সেই ভাঁজে ভাঁজে সে নিজেকে আর দেখতে পায় না,
কাজের ফাঁকে বাথরুম পেলে ইউরিন্যালে আরেকজন
নিচে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে, দৃষ্টি সরাতে গেলে
সে টের পায় আরেকজন তার চোখের দখল নিয়ে নিলো।

বাসায় ফেরে সে আরেকজনের মতো, দুঃস্বপ্ন মনে হয়
তার কাছে। দেখে দরজায় ক্লিপে সাঁটা ভাড়ার নোটিস
আরেকজন ভেতরে ফিক ফিক করে হাসে, টের পায়,
স্বয়ংক্রিয়ের মতো আরেকজন ভাত খায়, খাবারের স্বাদ
নিয়ে নেয় আরেকজন, সে ভাবে সে খড় চিবাচ্ছে।

শোবার আগে দাঁত মাজতে গিয়ে সে একইসাথে শোনার
ও ছোঁয়ার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, অথচ এবার যেন
ভাবান্তরহীন আরেকজন তার বিছানায় শুয়ে পড়ে।
এর পরে সে শুধু মনে করতে পারে চোখ বোঁজার আগে
প্রাণপণে ছাদের ফাটল দিয়ে অজস্র মাকড়শা নেমে আসছিল। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন