রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০১০

অ-প্রাকৃতিক

[যা ভাবি, যা দেখি, তারে নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছা করে। এর সাথে বালক বয়সের খেলনা নিয়ে অবিমৃশ্যতার মিল আছে। খেলনা ভেঙে গেলে কান্না পেতো, কিছু করার থাকতো না। এখনও মাঝে মাঝে নাড়াচাড়ার ইচ্ছাবশে চারপাশের দৃশ্য ও ঘটনা ভেঙে যায়। দেখি কিছুই নির্মিত হয় না। আবার বাতাসের মতো অবয়বহীনতার এই জগতে কোনটা নির্মাণ কোনটা বিনির্মাণ সে ধন্দও ব্যাপক!]




মাঝে মাঝে জোনাকদের আলোচনায় হুটহাট কবিতা উঠে আসে। এই ঘটনা আপেলপতনের মতো কুটিল হতে পারে, তবুও সেটা ঘটে যায় অনিবার্যতায়।


তো, জোনাকদের আলোচনায় চা-সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কবিতা উঠে আসে।
এমন না যে কবিতা কোন অবয়বহীন ধারণা, জোনাকদের কাছে তা পুরোপুরি মিশ্ররূপীঃ নারীর মদির নাভির মতোই আকর্ষণীয়, (এবং ক্ষমাহীন সেই মেদাঞ্চল এতো অযুত যোজন দূরে বলে) অদ্ভুত কষ্টকর। যুগপৎ আকর্ষণ ও যাতনা আদায়ের কবিতা জায়গা করে নেয়- তুচ্ছ জোনাকেরা সেই কৃষকের মতো শক্তিশালীও নয় আর সর্বগ্রাসী নদীভাঙনে কৃষকের কিছুই করার থাকে না।


মাঝে মাঝে হুট করে আসা কবিতা আবার হুট করেই চলে যায়, তখন মিটমিটে আলোর সলতে আর কয়েলের লাল চোখ মিশে যেতে থাকে।


দেখা যাক, ঠিক সেই সময় আমরা একটি মুহূর্তকে বাছাই করি দৈবচয়ন পদ্ধতিতে। তারপরে বিশ্ব-চরাচর থামিয়ে দিয়ে সেই মুহূর্তের ভেতরে ঢুকে যাই। আসুন, মুহূর্তটিকে ভালোবাসার চেষ্টা করি, নিদেনপক্ষে তার সাথে কিছুটা যোগাযোগ, কিছুটা ছল- অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ঢং করি।


মুহূর্তের মাঝখানে কয়েকটি মশা উড়ছে। এই এক মুহূর্তেই তারা কয়েকশ’ বার পাখা ঝাপটে ফেলছে, ঠোঁট চাটছে, পুঞ্জাক্ষি জুড়ে আলোকস্বল্পতা মাপছে।


মুহূর্তেই চায়ের কাপ থেকে দুই জুল তাপ উড়ে গেলো জোনাকদের মাথার ওপর দিয়ে, যাবার সময় কারো কারো চুলে হালকা ছোঁয়াচ…


মুহূর্তের মধ্যেই চায়ের দোকানের লোকটির ঘুম ঘুম চোখ প্রায় মুদে এলো শ্রান্তিতে, “আজকের উৎকট খদ্দেরগুলো সাপ্তাহিক নিয়মে ফিরে ফিরে আসছে, মাত্র একশ তিরিশ টাকায় দুটো বেঞ্চ আর কয়েকশ একর জমি আটকে রাখছে পুরা একবিংশ শতক” -এমন টুকরো টুকরো মৌলিকচিন্তা তার নিউরনে খেলছে বিদ্যুচ্চমকের মতোন।
মুহূর্তের মধ্যেই রাস্তার ঘোলা আলোর উৎসটি জোনাকদের পেরিয়ে গেলো। আলোটি আসার আগে বা পরে তারা কেউ খেয়াল করে নি। তবু অনেক ওপর থেকে কিছু অয়ন বায়ু গুমোট গ্রীষ্মকে পাত্তা না দিয়ে দেখলো তার শরীরে কয়েল ও চা-সিগারেটের তকমা মাখা কিছু ধোঁয়া এসে সাঁটিয়ে চুমু খাচ্ছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন