বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০১০

নিরর্থকাব্য

সকালে যখন আবছা ময়লাটে নীল পর্দার পেছনে রোদের হাট বসে একটা তুমুল সিনেমা শুরু হয়, তখন এই ঘরে তেমন একটা আলো এসে পৌঁছায় না। নীল নীল আবছা ঘুম জমে থাকে এখানে। আর আমি পাশ ফিরে শুয়ে উল্টে যাই, পাল্টে যাই একটু, মাত্র এক অথবা দুই ইঞ্চি। তারপরে জানালায় নিবিড় হয়ে মিশে থাকা সবুজ পাতার ডাল নড়ে ওঠে, আর আমিও ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠি। তারও কয়েক মুহূর্ত পরে সমূহ অর্কেস্ট্রা ঝিলমিল বেজে ওঠে, ধাতবের সাথে সবুজের অসম প্রহার!


এ'সময়ে এই ঘরে এক দামাল হাওয়া কিশোরের শরীরে সশব্দে ঢুকে পড়ে, দরোজার মুখ খুলে যায়। দরোজার বাইরে যে, দরোজার ভেতরেও সে, সেখানে সকল সম্ভাবনা। অচেতন-চেতন ঘুমে আমার শরীরকে তুলে ধরে, টেনে ধরে কিশোর দুটো হাত, "ওঠো!" "ওঠো তো!" তার হাতের 'পরে আমি মহাকর্ষে আটকে থাকা পৃথিবী ছেড়ে দেই। কিশোর দামাল হাওয়া সাঁ করে পৃথিবীটাকে ছুঁড়ে দিলো গোবেচারা নীল গ্রহটা পাঁই পাঁই করে ঘুরতেই থাকলো খ্যাক খ্যাক করতে থাকা সূর্যের চারপাশে। আমি আরেকটু দূর থেকে ঘুম-অঘুমের মাঝে সূর্যের খ্যাক খ্যাক শুনি।




এই যে দেখছি একটা সাইকেল চলে গেলো
অনুষঙ্গে কিছু নেই, আরোহী নেই, নেই রোদ
চাকার ভেতরে সেলুলয়েড এবং এক বিভ্রান্তি
বিড়ালটি কেবল ঐ কাঁটার সাথেই যুদ্ধ করে
তার কৃষ্ণতর চোখে স্বৈরাচারী ট্রাক ও রাজা
আমাদের দর্শকমনের ভিতরে অনাদায়ী ঘুম!




চোখের পাতায় মাঝে মাঝে সকল ক্লান্তি এসে জড়ো হয়, আমি তখন মনে মনে চোখ বুঁজে দেখতে পাই অনেককিছু। দেখতে চাইলে তুমিও পারবে, চেষ্টা করেই দেখো না! দেখবে অমল ধবল পৃথিবী নীল নীল চেহারা নিয়ে নির্বিকার ঘুরছে, বন বন করে। তার চারপাশে কালো কালো অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্য অথচ সে নিজের শরীরে গেঁথে রেখেছে কিছু দামাল বাতাস আর সশব্দ জল- সশব্দ পাহাড়- সশব্দ গিরিখাত- সশব্দ সবুজ- সশব্দ মানুষ! শব্দের যে কোন অর্থ নেই সেটা সবাই জানে, শুধু নিরর্থক মানুষ জানে না।


দামাল হাওয়া অনেকক্ষণ আমার চোখের ঘুম-অঘুম কাটানোর চেষ্টা করে হতাশ হয়ে নীল পর্দার পেছনে সবুজ পাতাগুলোর সাথে ফ্লার্ট করতে উঠে গেলো!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন