বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

ঘুলঘুলি

গতকালের বৃষ্টির পর আজ আবার গুমোট গরম। সকালের হালকা ভেজা ভেজা আমেজ শেষ হয়ে গেল, সূর্য তেতে উঠতে সময় লাগলো না। সেই ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে সারাদিন কেটে গেল এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। ওয়েটিং রুমের অপেক্ষার দীর্ঘ শ্লথ মুহূর্তগুলোয় আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কথা মনে পড়ে। সময়ের গতি আসলে নির্দিষ্ট কিছু না। এটা সময়ভেদে বাড়ে-কমে। অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হলে সময় প্রলম্বিত হয়ে যায়। আর ব্যস্ততার মাঝে থাকলে ঘটে উল্টোঘটনা। আজ আরেকটা নতুন জিনিস খেয়াল করলাম। ওয়েটিং রুমের সামনেই রিসেপশন ছিল। সেখানে যারা আসছিল, তাদেরকে প্রথম সম্ভাষণে খুব উচ্ছ্বাসমাখা কণ্ঠে আপ্যায়ন করছিল রিসেপশনিস্টগণ। যেন বহুকালের পুরনো বন্ধু, অনেকদিন পর দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে। এই সুরটা এতো আপন যে এর মেকিত্বটুকু প্রথমে ধরা পড়ে না। অনেকবার শুনতে শুনতে গলার স্বরের সূক্ষ্ণ যান্ত্রিক টানটুকু চট করে কানে এসে বাজে। আজকে অনেকবার শুনতে শুনতে মনে হলো এই মেকি আপন ভাবটা কি আসলে ভাল, না খারাপ? সবসময় জেনে এসেছি যে মেকি যে কোনোকিছুই খুব একটা ভাল কিছু না- মেকি কথা, মেকি স্বভাব, মেকি প্রতিজ্ঞা - এসবই তো মিথ্যার আরেক রূপ। কিন্তু আজ মনে হলো এই খানে এমন মেকিত্ব শুধু দরকারিই না, আবশ্যিকও বটে। এখানে যারাই আসছে, তাদের সকলেরই নিশ্চয়ই অনেক দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ কেটে যায় রিসেপশনিস্টদের সাথে কথা বলার পর। তারা এই 'আহ্লাদ'টুকু হয়তো উপভোগই করেন। এই মেকিত্ব বাদ দিয়ে রিসেপশনিস্টরা যদি তাদের ক্লান্তি, অবহেলা, দুশ্চিন্তা, কিংবা স্রেফ অন্য কোনো কারণে মেজাজ খারাপ হয়ে থাকলে সেটার বিরক্তি প্রকাশ করে দিতো, তাতে তো কেউই খুশি হতো না। বিকেলে একটা ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে গেলাম। বিশাল সুপারস্টোরের ভেতরে এক কোণে ফার্মেসি- সেখানেও কয়েক মিনিটের অপেক্ষাপর্ব। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ওপরে তাকিয়ে দেখি হালকা ঘিয়েরঙা করুগেটেড ছাত, মানে ঢেউটিনের মতন অনেকটা। কেমন যেন ওয়্যারহাউজ ওয়্যারহাউজ মনে হয়। স্টোরের ভেতরে সারি সারি সারিবদ্ধ জিনিস। সারির সংখ্যাই একশ'র ওপর। তাহলে জিনিস কত আছে মোটমাট? তাও সবাই মিলে কিনে-কেটে আমরা শেষ করে দিচ্ছি হরদম। কী এক দক্ষযজ্ঞ! আর এসবের ওপরে নিশ্চুপ ঢেউটিন। সেই বিস্তৃত ঢেউটিনের মাঝে বেশ দূরে দূরে কিছু অংশ বর্গাকারে কেটে সেখানে কাচ লাগানো আছে। সেই বর্গের ভেতর দিকে আকাশ দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যের আগে কনে-দেখা-আলোয় আকাশ প্রায় কমলালেবুর রঙ ধারণ করেছে। ফ্লুরোসেন্ট লাইটে আলোকিত দোকানটির ভেতরে সেই অল্প চারকোনা প্রাকৃতিক আলো যেন পথ ভুলে ঢুকে পড়ছে। এখানে সে আলো অপাংক্তেয় খুব। তাই লজ্জায় রাঙা হয়ে যাচ্ছে সে। সেই লজ্জাকে কিছুটা আড়াল দিতেই হয়তো চোখ সরিয়ে নিলাম। থরে থরে সাজানো অজস্র ভোগ্যপণ্য আর আহারাদি দেখতে থাকলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন