মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০০৯

অশিরোনাম গ্রন্থনা

...তাকিয়ে থাকার মাঝে এক নিপুণ শিল্প অনেকটাই বিমূর্ত হয়ে লুকিয়ে থাকে। শুধুমাত্র দু'চোখ মেলে তোমার দিকে চেয়ে থাকা যায়। সেই নিস্তরঙ্গ চোখে জল-কাদা-রোদ লেগে ঝাঁঝরা রাতের ঝাঁঝ জমে, আর সেভাবেই তাকিয়ে থাকায় ক্লান্ত না হয়ে খুশি হই আমি।...


...সকালে চোখ মেলতেই বুকের ওপর থেকে জোড়া পায়রা উড়ে গেল! ধবল জোড়া কবুতরে থাকে অদ্ভুত শিহরণ, পায়রার বুকে এমন শুভ্রতা বিকিরিত হয়; এবং আমি বুঝে উঠি এই সকল প্রেম, ভালোবাসা, হাসি, কান্না, ঝগড়ার রীদম। পায়রার ডানায় শিশির জমে নতুন ভোরের, বিগত স্মৃতির।...


...হেসে ফেলা রাগী চোখে আমি সরাসরি তাকিয়ে ডানা ধুকপুক পায়রা ধরে আনি। এভাবে একে একে কয়েক অমূল্য মুহূর্ত কাটে, সেখানেও আমি এক দুই তিন চার করে গুনতে থাকি সেকেন্ডের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা। ত্রিমাত্রিক পরিমাপ শেষ হলে বিশুদ্ধ জ্যামিতিক খাঁচা আবিষ্কার করি।...


...অতঃপর আটকা পড়ে কতিপয় বিচ্ছিন্ন ভাবালুতামাখা মুহূর্ত। শেকলে বাঁধা সেকেন্ডের সারিবদ্ধ বন্দীরা একে একে মাথা নিচু করে খাঁচায় ঢুকে পড়ে। নিষ্পলকে খুব ক্রূর ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি, যেহেতু আমি জানি সেখানে কতো বিচিত্র অপরাধী সেকেন্ড আটকা পড়েছে।...


...তোমার চোখেও কেন ভালোবাসার মাঝে এমন বিষাদ, এমন গ্লানি আর এতসব অনুশোচনা জন্ম নিচ্ছে আজ? একটু আগেই শেষরাতের বিচারক রায় জানিয়েছেন। ফাঁসির আদেশে বিমর্ষ হয়েছে আসামীপক্ষ।...


...তাদের জন্যে আমার সমবেদনা তৈরি হতে থাকে। আমি ধীরে ধীরে অবিশেষ কাতরতা, সাধারণ উদ্বিগ্নতা বোধ করি। আমাদের স্মৃতিতে অনেক ভাল সময় জমে ছিল।...


...এইসকল একরকম মোহন প্যারাডক্স! কীভাবে এক মুহূর্তের মাঝে আদ্যন্ত সেঁধিয়ে যায় হা হা করে তাবৎ অতীতকাল? পাশাপাশি কাটিয়ে দেয়া সময়ে আমরা ভাবিনি যে ভালোবাসা জমেছিল ঘাড়ের ওপর, চুলের জড়োমেঘের ভেতর, বাহুযুগল-যুগলের বেষ্টনীর ভেতর, কোমর বুক নাভি জঙ্ঘা কনিষ্ঠায়। জমাট রিক্ততাতেও আমরা অপেক্ষা করিনি। সেই পলেক স্মৃতি কোষান্তর চলাচলে ক্ষয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে, ফুরিয়ে গেছে। জীবন পেরিয়ে যাওয়ার আগে হিসেব মেলেনা, আর যখন তা মেলে, আমাদের জীবনের বাকি থাকে না কিছুই।...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন