মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০০৯

Antinoüs

দেখা গেলো প্রচুর রোদ। রোদে সেজে গেছে পাতা ও পথ। পথের পাশে পাথর। এসব ভালো লাগে না। জড়বৎ। এদের কোনো ঘটনা নেই। এবং সে কারণেই দুর্ঘটনাও নেই।
নেই বিপদ, আপদ, ঝঞ্ঝাট বা নিরাপত্তাবোধ। একেবারে বোধহীন শিশুও হয় না। তার চেয়েও অথর্ব এগুলো, চারপাশের উপাদানগুলো।


আমরা কেনো তবে এগুলোকে এতটা মূল্য দেই? এতটা নজর দেই। মানুষের দিকে তাকাই না, মেয়েটার জামা দেখি, জামার ওপরে লাল-নীল ফুল দেখি, জামার নিচে ঘনমেঘ দেখার শখ জাগে। শখের নাম সাধ, যেমন অভিলাষ, যেমন খায়েশ, অথবা যেমন কামনা।


ফুটপাতে হেঁটে গেলে রেলিং দেখি- ওখানে হাতের স্পর্শ করেছিলো কে? কারা যেন ওখানে ঠেশ দিয়েও দাঁড়িয়েছিল প্রতিদিন, বহুক্ষণ! আমাদের জানার আগ্রহ এত কম। তারপরে গাড়িগুলো চলে যাবে আমরা দেখবো হাস্যমুখি টেইল-লাইট। আর ট্র্যাফিকের ময়লা সবুজ পুলিশ। বৃষ্টি নামবে এবং তিনি বর্ষাতি খুলে ছাতার নিচে দাঁড়াবেন। আমরা দেখবো আর ভিজবো।


উপাদান ভুলে এখন বৃষ্টিকে ভালো লাগবে। ভিজে গেলে শব্দটা 'সিক্ত', শুনলে সব শীতল হয়ে আসে। বৃষ্টিও জড়- তবু তাকে নিয়ে কবিতা লেখা চাই। কেন। কেন। চাওয়ার কোনো শেষ নেই বোধহয়। তবে চাইলেই পাওয়া ঠিক নয়। পেলে লোভ বাড়ে। লোভের লেজে করে মেয়েগুলো ফিরে আসে।


এই লেখার মাঝে আমি পুরুষ হয়ে উঠি বারবার। মেয়েদের কথা চলে আসে। কেনো আমি ছেলেদের কথা লিখি না। সুপুরুষ ছেলেরাও সুন্দর, তাদের নিয়েও লেখা যায় তো! আমার লিঙ্গের ছায়া কেন শব্দের গায়ে পড়বে? শিশুদের কথাও তো লিখি বেশ, তারা রোদে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে পুরুষেরা কেন রোদে যাবে না? তারা তো কালোই।


রোদগুলো চেনা গেছে। অন্তর্গত আঁধারের ছায়ায় এতক্ষণ চেনা যাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো ধাঁধাঁনো আলো। আলোতে সব রঙ থাকে বলে ভাবিনি লাল, কি নীল, কি সবুজ বা হলুদ হাসছে! এখন আঁধার সরিয়ে দেখি বিচিত্র বিভিন্ন রঙালো। নারী বা পুরুষ বা শিশু সকলে এসে গেছে আমার চোখের মাঝে। গোল গোল চোখের মাঝে তারা সকলে হাসিমুখে সেঁধিয়ে যাবে গতকাল থেকে আজ বা পরশুতক।


তারপর, অনেকদিন বাদে বৃষ্টি নামবে। নামার পরে আমরা সকলে কেঁদে ফেলবো। লিরিসিস্টগুলো ছাগলের মতো কেন বৃষ্টিকে আকাশের কান্না বলেছিলো? বেকুবি উপমা ছাড়াও তো জড়কে চেনা যায়। আকাশ কেন কাঁদবে। আকাশের কি লিঙ্গ আছে! অ্যামিবা কাঁদে না, এমনকি অণুজীবেরাও হর্ষবোধে ডুবে না। তবে আকাশ কেনো কাঁদার মতো নির্লজ্জ অধিকার পাবে।


বরং আমরা কাঁদি। ভ্রূণপর্ব থেকে কান্নার শুরু জলজ মাতৃকায় হাবুডুবু কেঁদেছি আমরা, জরায়ুঘর থেকে সেই অশ্রু হারিয়ে মায়ের শরীরে মিশে গেছে। তারপরে মায়ের চোখেও পানির ফোঁটাগুলো শিশুর মতো গড়িয়ে নামছিলো। আমাদের মা তখন কেনো কাঁদতেন রাত জেগে?


অদ্ভুত মাতৃকা শুকিয়ে গেলে আমাদের অশ্রুরেখা করতলে জমা হয়। সেখানে অনেক রোদ। না! সেখানে অনেক আঁধার।




***
নোটঃ Antinoüs-এর সম্বন্ধে আরো জানতে এখানে এবং এখানে দেখুন।

1 টি মন্তব্য:

  1. খুবই সুন্দর কবিতা।

    'অদ্ভুত মাতৃকা শুকিয়ে গেলে আমাদের অশ্রুরেখা করতলে জমা হয়। সেখানে অনেক রোদ। না! সেখানে অনেক আঁধার।'

    এই আধারটুকু হয়তো প্রকৃত হয়ে একদিন মিশে যাবে আমাদের দেখা-অদেখার প্রত্যাশার করতলে।

    -ওয়াহিদ সুজন

    উত্তরমুছুন