শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১১

ঘোলাপানি...

ফ্যাঁৎ!
  শীত চলে যেতে যেতে আবার ফিরে এলো। দরজা খোলা, আরেকটু অপেক্ষা করলেই বেরিয়ে চলে যেতো, টা-টা দিচ্ছিলো। কিন্তু কী মনে করে আবার ফিরে এলো। এবং একটু অপ্রস্তুত ছিলাম, তাই আবারও ঠাণ্ডা আঁকড়ে ধরলো আমায়। এই ঋতুতে তিন তিন বার সর্দি-কাশিতে জেরবার হলাম। বুঝতেছি না আমার রোগ-প্রতিরোধ কমেছে নাকি নিত্যনতুন ভাইরাসের প্রাচুর্য বেড়েছে। তবে হাঁচতেকাশতেফ্যাঁৎফ্যাঁতাতে আমার কাহিল দশা।

***

ভবিষ্যত!

এরই মাঝে বছর শেষ হয়ে গেলো। এই গত দশক খুব সজাগ কাটিয়েছি। মানে এই দশ বছরে দিন দুনিয়া চিনলাম। দশকের শুরুতে কৈশোর শেষ হচ্ছিলো, আর এখন সামনে তিরিশ হাতছানি দিয়ে হা করে আছে। তিরিশ ছুঁয়ে ফেললে মনে হয় আরো একটু বুড়ো হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে। ধীরে ধীরে নখদন্তশ্বাপদ থেকে ভোঁতা হতে শুরু করবো। পুঁচকেদের হিংসা করতে শুরু করবো। খিটখিটে হয়ে যাবো জীবন-যাপনের থাবড়া খেয়ে খেয়ে। আজ যা কিছু আমার নতুন, আমার পরাণ, সেগুলো অতিব্যবহৃত ছোবড়ায় পরিণত হবে। তিরিশ তাই মনে ত্রাসের সৃষ্টি করছে। ভাবছি তিরিশের পর বয়েস গোনা উল্টে দিবো। পরের বছর উনত্রিশ হবো, তার পরের বছর আটাশ, ফের ঘুরপাক মধ্যগগণে! সবাই মানবে না, তাতে কী, আমি কি কাউরে ব'লে ক'য়ে পৃথিবীতে আসছি, না কারো কথায় গুডবাই জানাবো?

***
 
সেলসমাচার!

খালি বিদায়ের কথা বলতেছি। এখন একটু আগমনীবাতচিত করি। গত পরশু নতুন সেলফোন কিনতে গেলাম। বাজারে সবসময় থরে থরে সেট সাজানো দেখি, ঠাটবাট দেখে ভেতো বাঙালি, তাহাদিগকে সম্মান করি। শীতল ধাতব শরীরে চকমকে সেটগুলো আমার কুর্নিশে হালকা মাথা নাড়াতো। সেদিন কিনতে যাবার আগে ভাবলাম খালি বাইরের রূপে ভুলিবো না, ভিতরে কি আছে জেনে যাই। মানুষের ভরসা নাই, তাই ইন্টারনেটে বসে ঘাঁটলাম। আমার ছোটবোন বয়সে ছোট আর মননে বড়ো হওয়ার কারণে এই ব্যাপারে মোটামুটি ডিগ্রিধারী। সেলফোন নিয়ে কয়েকটা সাইট ঘুরে-টুরে বুঝলাম কোনো সেট হাতে নিয়ে "এই ফোনে কী কী আছে?" জিজ্ঞাসা করার চাইতে "এই ফোনে কোন ফিচারটা নাই?" প্রশ্নটা সহজ। দোকানির বলতে কম সময় লাগবে। আমার ভোঁতা-হতে-চলা মগজে যা বুঝ আসলো, এখন সেলফোন সেট একটা ছোটখাটো কম্পিউটার। ওএস আছে - সিম্বিয়ান, উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড। এগুলোর মাঝে শেষেরটা সবচে ভালু মনে হয়। তারপরে আছে লুক-এর ব্যাপার, এখন টাচস্ক্রিনের যুগ। ওএস কতো র‍্যামে চলছে এটাও জরুরি। এটা দিয়ে টাচস্ক্রিনের দ্রুততাও হিসাব-যাচাই করে নিতে হবে। তারপরে আসে ওয়াই-ফাই এর হিসাব। ওয়াইফ হইলো না এখনু তাই ওয়াই-ফাই-ই সই। এটা না হলে চলছে না। এখন এই ওএস আর ওয়াই-ফাই আসলেই সেটের দাম আমার বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে!
এতোসব ঘোরাঘুরির মধ্যে মনে হচ্ছিলো নতুন যারা এখন বিশের কোঠা পেরুচ্ছে, তারা এই নতুন প্রযুক্তিগুলোতে বেশ মানিয়ে নিচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করতে করতেই তারা হয়তো নতুন কিছু তৈরি করবে। কেউ কেউ মাথাপাগল জিনিয়াস নতুন ওএস বানিয়ে ফেলবে। আশাবাদী হইলে দিন ভালো কাটে আমার।

***

বইমেলা যাও!

বইমেলা আসতেছে সামনেই, আর দিন আটেক বাকি। প্রতি বইমেলার মাসটা আমার কাছে খুব আনন্দের। কতো কতো নতুন-পুরাতন বই, সেই বাংলা একাডেমীর মাঠ, বিল্ডিংয়ের দোতলার বারান্দা, স্টলের সামনে মানুষের ভীড়! আর পরিচিত আধাপরিচিত মানুষদের সাথে আড্ডা আর সাথে চা। আহ! সারা বছরের সব ঝুটঝামেলা আর কলুষ এক মাসে ধুয়ে যায়। আর বছর দুই ধরে ব্লগারদের সাথে আড্ডা বাড়ছে বইমেলাতে। এক কোণ ফাঁকা পেলেই তিন চার জন মিলে দিকবিদিক ভুলে সন্ধ্যা-রাত অবধি খোশগল্প চলে। রাত জমাট হইলে শেষ চা খেয়ে বাসায় ফিরি। আর শেষ দশ দিনে বেশি বই কিনি, লিস্ট করা শুরু করছি মনে মনে। গতবারের কেনা কিছু কিছু বই এখনো পড়া শেষ হয় নি, সেগুলোও তাক থেকে নামালাম পরশু। এই ধুমে পড়ে ফেলতে হবে!

***

তারপর!

মাঝে মাঝে কারো কারো কথায় হার্ট হই। ভার্চুয়াল জগতে কতো মানুষকে দেখলাম, কতো নটীর নাটক। এইসব দেখে এবং ঠেকে শিখেছি যে টেক্সটকে বেশি ভ্যালু দিতে নাই। ছোটবেলায় শিখেছিলাম ছাপার অক্ষরে ভুল থাকে না। পাঠ্যবইয়ে অঙ্কের ভুল উত্তর লেখা থাকলে সেটা মিলাতে গিয়ে মাথার চুলও ছিঁড়েছি কম না। সেই বেদবাক্যতুল্য অক্ষরকে ভালোবাসতেবাসতে আর সম্মান করতে করতে মজ্জাগত হয়ে গেছিলো। এখন ব্লগে যোগাযোগের অক্ষরগুলোকে তাই আলাদা মূল্যায়ন করা শিখলাম। বুঝে নিয়েছি যে মানুষ সামনাসামনি যেমন সামাজিক ভড়ং, ভণ্ডামি ও দ্বিমুখিতা দেখায়, ঠিক সেরকমই এই ভার্চুয়াল-পীঠ। ভালো খারাপ তকমা দেই না, এগুলো ঠিক যেমন, সেভাবে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করি। তারপরেও ভুলভাল হয়। মনের কাজ প্রজেকশন, নিজে নিজে ধইরা নেয় অনেক কিছু। স্টেরিওটাইপিং করে, গোষ্ঠিবাদ করে, ভুল বুইঝা চুপ যায়, ঠিক বুঝলে তেড়ে যায়। এইসব ভ্রান্ত-আচরণের চিপায় পড়ে (পড়ুন, পড়তে) ভালো লাগে না। তারপর মানায় নিতে হয়।
আজকে হঠাৎ মনে হলো, আকাশ ভাইয়ের সিনেস্থেশিয়া নিয়ে দুর্দান্ত পোস্টটা পড়তে পড়তে, যদি আমাদের মুখের অভিব্যক্তিগুলো টেক্সটের মধ্যে দিয়ে বুঝা যাইতো, তাইলে যেমন অনেকের গোমর ফাঁস হয়ে যেতো, তেমনি অনেকের কথার অবমূল্যায়নও বন্ধ হইতো। আমি বুড়োটে হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু হয়তো সদ্য-বিশে পা রাখা কেউ এরকম একটা কিছু আবিষ্কার করেই ফেলবে। তখন এই ব্লগ যারা পড়বে তারা কেমন মজা পাবে ভেবে একটু মুচকি মুচকি হাসলাম!

***

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন