মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

সমাবর্তন, বন্ধুর বিয়ে ও অন্যান্য

ডায়েরি লেখার ঝক্কি হলো কিছুদিন পর একটু ঢিলেমিতে পেয়ে বসে আমাকে। সাথে দুই চিমটি একঘেঁয়েমি। আমি যেমন জীবন কাটাই, সেটা খুব একটা ঘটনাবহুল না। তাই বলার মতো ঘটনা কম থাকে। যা করতে পারি, চিন্তাগুলো লিখে রাখা যায়। কিন্তু এই অপগণ্ডের চিন্তা পড়তেও অনেকের কিম্ভুত লাগবে ভেবে সেখানেও বাধ দেই। তাই সেই পুরানো আলাপ, আটপৌরে বয়ান। এই একঘেঁয়েমি কাটানোর সোজা উপায় হলো ঘুরতে বেরিয়ে পড়া। সঙ্গীসাথী ভালুক-বিলাই। কিন্তু এই ভালুক আর বিলাইয়েরাও কাছে পিঠে নাই। চারপাশ আটকে গেছি আটকে গেছি লাগে। ভাবনাগুলো কম্বলের তলে চাপা দিয়ে রাখি। 

এখন ডায়েরি বা জর্নালে তাই পিছু ফিরে দেখা। নিজের ভেতরে আয়না দিয়ে তাকানো। যাকে দেখি, সে অতীতের আমি। আয়না দিয়ে তাকালেও একটু পরের ছবিই দেখি আমরা। মুহূর্তের মাঝে পুরানো হয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে শার্ট-প্যান্ট আর চামড়াটাও বদলে যাচ্ছে, কুঁচকে যাচ্ছে। চুলে ঝিলিক লাগছে রুপালি, দেখতে ভালোই লাগে, আবার মাঝে মাঝে বেমক্কা মধ্যবিত্তীয় মৃত্যু চিন্তা পেয়ে বসে বটে!

আগামীকাল সমাবর্তনের মহড়া হবে। সকাল সকাল সেই বুয়েটের মাঠে বোরকার মতো গাউন আর ব্রিটিশ চরিত্রের মতো টুপি পরা লাগবে। পরশু আসল ঘটনা ঘটবে। পাশ করার আড়াই বছর পরে সমাবর্তন পাচ্ছি। একদম অভিনব ব্যাপার। এতো এতো টাকা পায় বুয়েট, অথচ প্রতি বছর কেন এই সমাবর্তন ঘটে না সেটা জাতীয় রহস্য! গাউন আনতে গিয়েও গ্র্যাজুয়েশনের সময়ের মতো ডিফল্টার হলাম। দেখা গেলো, সব এনেছি কিন্তু টুপি আনি নাই। আজকে টের পেলাম, খোঁজ নিয়ে শুনি ওটা আলাদা বিক্রি হচ্ছিলো সামনের গেইটে। আমি তো পিছন দিয়ে গিয়ে কিনে পিছন দিয়েই চলে এসেছি তাই দেখতে পাই নাই। হলের রুমমেটকে বললাম, কিনে রাখো আমার জন্য, মহড়ার আগে নিয়ে নিবো। সকালে জানিয়েছি, বলে গেইটে কেউ নাই, টুপিও নাই। ক্রিকেট ম্যাচের ক্যাপ পরে সমাবর্তন করেন, ইউনিক হবে। আমি ঝাড়ি দিয়ে বললাম লাঞ্চের পরে আসবে মনে হয়, কিনে রাখো মিঞা! অবশেষে বিকালের দিকে পাওয়া গেলো। 

একটু আগে আমার প্রিয় বন্ধুটার বৌভাত খেয়ে আসলাম। অল্পকিছু পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হলো। আলাপ হচ্ছিলো। যথারীতি উষ্ণতর্ক শুরু হলো ডিনারের পর। ভালো খারাপ এথিকস, ধর্মের নৈতিকতা ও সমাজের নৈতিকতা নিয়ে খোঁচাখুঁচি। মজাই লাগছিলো। প্রায় আট-দশ বছর আগে কলেজে থাকতে এগুলো নিয়ে ঘাড় শক্ত করে তর্ক করতাম। তর্ক সরাসরি ঝগড়া ও উত্যপ্ত আলাপে পরিণত হতো। এখন করি না। হাসি হাসি মুখে শুনি, দুয়েকটা কথা বলি। যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করি, উদাহরণ দিলে সেই সীমাবদ্ধ উদাহরণ নিয়েও কথা গড়িয়ে খালে-বিলে চলে যায়। সব শেষে বাসায় ফিরে আসি, যে যার জায়গায়। বন্ধুটা সুখী হোক বিবাহিত জীবনে, এই কামনা করি। নিজের কবে বিয়ে হবে আর তর্কাতর্কি না তুলে ফটাফট ছবি তুলতে পারবো সেটা ভেবে আফসুস খাই। 

কম বয়সে মাথা গরম করলে বড়োরা যেমন স্মিত হাসতো, সেই হাসিটা আজকাল নিজেই দিয়ে ফেললে বুঝি, বড়ো হয়ে গেছি বোধহয়। আবার মাঝে মাঝে ভাঙতে ইচ্ছা করে। চারপাশের সমাজের নোংরামি*, ইতরামি* আর নষ্টামি* দেখি। সবাই খুব কনজারভেটিভ বলে বাংলাদেশের সমাজকে, আমি সেটা খুঁজেই পাই না। সমানে মেলামেশা, অবাধে জীবন, দেখে আশ্বাস পাই যে মানুষ এই দারিদ্র্য আর নিপীড়ন* সহ্য করেও নিজের মতো* থাকতে পারছে। আগের প্রজন্ম যেটা লুকিয়ে করতো, চুরি চুরি করে পালন করতো আর ক্রমাগত পাপবোধে ভুগতো। সমাজ-আরোপিত সেই পাপের ছাপ মুখে পড়ে মুখটাকে বুড়িয়ে দিতো। আমাদের দেশের চল্লিশের গোড়াতেই তাই সবাইকে বুড়োটে লাগতো। এখন তা লাগে না, সবাই কতো ঝকঝকে তকতকে। উপভোগ্যতা মনে হয় মানুষকে সুন্দর করে দেয়। 


***
*সমাজের প্রচলিত অর্থ এগুলো। আমি বা অন্য কেউ এটাকে নিজের মতো করে পাঠ করেন। নিজের চোখে, নিজের জিভে খান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন