সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০০৮

শীতের শুরুতে আর বছরের শেষে জমে থাকা কথারা কম্বলের ওম পোহাতে চায়

শুরুঃ
শুরু বলে আদৌ কিছু নেই। সেখানে পেছোতে পেছোতে আমরা একেবারে পিছনে গিয়েও একটা আদি সুতো পাই, যার মাথায় আরো অন্য সুতোর লেজ বাঁধা থাকে। এই আপ্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিলে আমরা অনায়াসে হাল ছেড়ে দিতে পারি। তখন বাকি থাকে যেকোনও একটা শুরু বেছে নেয়া। যেকোনভাবে ঠেলা দেয়ার মতো একটা কথা বলতে শুরু করে দিলে পরের কথা গুলো এমনি এমনি চলে আসবে। এদেশে মানুষের অভাব নাই, কথারও অভাব নাই। পথে ঘাটে, রুলারে টানা মার্জিনের মতো ফুটপাতে বসে থাকা কালো ঝর্ণাকলমের ফোঁটার মতো ভিক্ষুকও কথা বলে, ঘুরে ফিরে একই স্বরে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। আমরা সেসব কথা শুনেও না শোনার চেষ্টা করি। এরকম আরো অনেক প্রচেষ্টা চলে আমাদের। বাবা-মায়ের কথা না শোনার, শিক্ষকের কথা না বুঝার, বাড়িওয়ালার কথা তোয়াক্কা না করার, অফিসে বসের কথা গা থেকে ঝেড়ে ফেলার হাজারো নিয়ত প্রচেষ্টা আমাদের ক্লান্ত করার বদলে এহেন কাজে আরো চৌকস করে তোলে। বোকাবাক্স খুলে দেখি না অনেকদিন আমরা, কিংবা সবসময়েই খোলা থাকে ওটা। সেখানে নানারকম রঙিনকথার সাথে শাড়িশিফনমালাদুল মিশিয়ে মিশিয়ে সিদ্দিকা কবীর'স রেসিপির মতো গুলিয়ে ঘুলিয়ে খাওয়ানো হয়। আমরা সেটা খেয়ে ঠোঁটে জিব টেনে শব্দ করি। আহ!! কী চমৎকার স্বাদু রান্না খেলাম! রাঁধুনির হাতে জাদু আছে। এরকম উপ-প্রশংসা শুনে কোনো কোনো রাঁধুনি বড়ো খুশি হয়ে পড়েন, গরমে রেখে দেয়া মাখনের মতো গলতে গলতে তরল হয়ে যান। সেই তরলকেও আমরা মাখিয়ে খেয়ে ফেলতে পারি, ক্রমশঃ। ধীরে ধীরে আমাদের নেতি-অস্তির পথ ঝাপসা হয়ে আসে। ধীর প্রক্রিয়া টের পাওয়া কঠিন হয়, যেরকম ধীরে ধীরে শুয়োরবৎ কিছু পিশাচ আমাদের ঘর-আঙিনা দখল করে নিচ্ছিলো যা আমরা টের পাইনি বা টের পেলেও তোয়াক্কা করি নাই। এখন তাদের অস্তিতে মাথা দুলাই, তাদের নেতিতে ঘাড় নাড়ি। ও হ্যাঁ, আমরা ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা শিখেছিলাম। শিশুর সরলতায় সত্য বলে বকুনি খেয়েছি। চড়, থাপ্পড় দিয়ে দিয়ে বড়োরা শিখিয়েছে সত্য বলতে হয় না। বইয়ে ভুল লেখা ছিল। সদা সত্য কথা 'বলিবে'র জায়গায় 'লুকাইবে' হবে, বুঝেছো সোনামণি? তাই অভ্যাস হয়ে গেছে সত্য মুখের ওপরে না বলার। যেমন এখানে আমরা জামাত-শিবিরকে অপছন্দ করি, বিএনপিকে অপছন্দ করি, আওয়ামীলীগকে অপছন্দ করি, জাপা-এর উঃ, দঃ, এরশাদ-রওশন সব উপদলগুলোকেও অপছন্দ করি। রাজনীতিবিদের প্রশংসা কারো মুখে শুনলে আমাদের জানতে ইচ্ছা করে লোকটি এই রাজনীতিবিদের কাছে কী উপকার উপঢৌকন পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা লোকগুলোকে দেখেও সন্দেহ হইতে থাকে। আটত্রিশ বছর আগে এই মাসে স্বাধীনতা এসেছে সেটা নিয়ে প্রতি শীতেই সকল মিডিয়াপেপার গরম হয়ে ওঠে। দিকে দিকে দিগগজেরা গজিয়ে ওঠেন। কেন? স্মরণ ভালো, শিক্ষা কি তার থেকে জরুরি নয়? সেই স্মরণের কীই বা দরকার যেটা আমাদের পূর্বপিতাদের হত্যার, খুনের প্রতিশোধ নিতে দেয় না। এহেন ক্লীব স্মরণের কোন দরকার নাই। ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চের কোন দরকার নাই। দেশগড়া বলতে সবাই কী বুঝে? দালান ইমারত গায়ে গায়ে লাগায়ে তৈরি করতেছি, অথচ আমরা খেয়াল করি না যে চলাচলকারী মানুষগুলো কত নির্জীব, হতাশ, নষ্ট, ভ্রষ্ট। ভ্রষ্টতার পথ ধরে টাকা এসেছে, নোংরামি এসেছে। বিদেশি যৌনতা এসে বেডরুম, ওয়েবক্যাম, মোবাইল, থ্রিজিপি ফরম্যাট হয়ে যাচ্ছে। তার থেকেও উগ্রতার লেবাসে ধর্মরাজনীতি ছড়িয়ে যাচ্ছে। এইডস নিয়ে আমাদের প্রেজুডিস আর ভয় অনেক বেশি ছিলো। হয়তো সেটাই দরকার। রাজাকার নিয়ে ভয় কম থাকায় এখন আটত্রিশ বছর পরে কী অবস্থা হয়েছে দেখা যাচ্ছে। এরকম আরো আরো আলোচনা আর কথা বার্তা আমরা বলতে থাকি কিন্তু কথার সুতো শেষ হয় না, শেষ করা সম্ভব হয় না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন