রবিবার, ২৪ মে, ২০০৯

বেশ্যানগর

বেশ্যানগরে রাত দশটার পরে বিকটাকার ট্রাক প্রবেশ করে। বলা উচিত ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে ঢোকে। দুর্দান্ত বেগে, সজোরে, এবং নির্ভুল লক্ষ্যে। তার আগে, বিকেল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে গড়িয়ে, ধীরে ধীরে পড়তে থাকে এই গ্রীষ্মে। দমফাটা গরমে ছয়টার কাঁটা ঘড়ি ছেড়ে পারলে বেরিয়ে আসতে চায়। সাড়ে ছয় পেরিয়েও গরম বাতাসের আঁকুপাকু শ্বাস থামে না। তারপরে কালশিটে পড়লে, রাস্তার বুকের ওপরে, কোমল শিথিল সিএনজি বা গাড়ি চলাচল করে। তাদের ধুকপুক গরম ইঞ্জিনের দাগ লেগে থাকে ফ্লাইওভার কিংবা বিলবোর্ডের গায়ে। ক্লান্তচলন ছেড়ে একসময় তারা গৃহস্থের ঘরে ফেরে, গ্যারেজে, গোডাউনে, ছাদের তলায়। তারপরে ক্রমশ শান্ত হবে রাজপথ, ভেবে সকলেই ঘরে ফিরতে চায়। সেসময়ে, এই বেশ্যা নগরে ঠিক কয়েক মুহূর্তের জন্যে হলেও একটা নিঃস্তব্ধতা নেমে আসে।


ফটকের এপাশে ওপাশে পথের চিহ্ন প্রকৃতি আলাদা। ওপাশে কাঁচা ইট, এপাশে ঘন কংক্রীট। তারপরে ধীরে পথ হয়ে ওঠে পিচগলা আলকাতরা-গোলা। ট্রাকের শরীরের ভীড়ে, হেডলাইটের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ে সেই নরোম নালীতে-উপনালীতে-গলিতে-উপগলিতে। পাড়া সজাগ হয়ে যায়। ঘরের বাতি নিভিয়েও ঘামভেজা মিশ্রিত শরীরে উল্কি এঁকে দেয় ট্রাকের শিস। শীৎকারের শব্দ ছাপিয়ে সবাই শুনতে থাকে, সারি সারি ট্রাক নেমে আসছে, জড়ো হচ্ছে! তাদের জমায়েতে অশ্লীল চালক সমবায় সমিতির হলুদ-দেঁতো নেতা হাত তুলে রাখেন। সবাই নীরবে তাঁকে অনুসরণ করে। পথের মাঝে তখনও বিচ্ছিন্ন কয়েকটা সিএনজি ঘুরছে। মালিকের জমা টাকার পরে, নিজের ঘরের জন্য কিছু উপার্জনের আশায়। এখনও বউয়ের কাছে ফিরতে পারেনি, রাতের বাজার সেরে, এমন ঘষটানো চাকুরে বলদগণের বাহন হওয়ার ধান্দায়।


মিরপুর দশের মোড়েই রাত জমে থাকে দশটার পরে। সেখান থেকে কাকলি রেলগেইট, খালি দশ খালি দশ খালি দশ। সিএনজিওলা হাঁকে। সওয়ার চারজন হলেই দে-ছুট। ছুটে ট্রাকের পিছনে পিছনে, ওভারটেকের সাহস নাই। একটু পরে সেটা সামনে থেকে সরে যায়। আরেকটা ট্রাক দেখা যায় রাস্তার মোড়ে আড়াআড়ি খুব শিথিল পড়ে আছে। একবারে সে উল্টো ঘুরতে পারে না, বেশ্যানগরের নালীগুলো অনেক সরু। দু'পাশে প্রচুর ফুটপাত ছাপানো হকারের টং। নীল নিরোধক পলিথিনে মোড়ানো ছাপড়া। সেগুলোকে বাঁচিয়ে শক্ত ট্রাকের উল্টো ঘুরতে দু'বার আগুপিছু হওয়া লাগে। আস্তে আস্তে তার প্রগমণ দ্যাখে নীরব সিএনজি। তারপরে একটু ফাঁকা পেয়েই সেই দানবের পেছনের চিপা আইল্যাণ্ড উপড়ে সে ছুটে। যাত্রীগুলো একটু ঝাকুনিতে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে সামলায়। কম্পাঙ্ক বাড়লে আমরা হয়তো অপরিচিতকেও আপন ভাবি।


দশটার পরে মাইয়্যা, মাগীরাও নামে। ঘোমটা দেয়া সারি সারি মেয়েরা সূর্যের সাথে ওঠে, চাঁদের সাথে ডোবে। সোডিয়াম আলোর উজ্জ্বলতায় তারা ঘরে ফিরে। ভোরে আবার সেই আলোর ম্রিয়মাণ চোখের ওপর দিয়েই তারা কাজে বেরুবে। এই মাইয়্যাগুলার দু'পায়ের ঘন ওঠানামা, হাতের পর্যাবৃত্ত মন্থনের ওপর নির্ভর করছে এই বেশ্যানগর। স্থূলাঙ্গী, শীর্ণাঙ্গী, শাদা, শ্যামলা হাজারো নারীকে সাজিয়ে রাখতে খুপরি খুপরি ঘরে তীব্র আলোতেই তারা সেলাই হয়ে যায়। সেই নীরব ঘটাং ঘটাং সূঁচ তাদের শরীরে কোন দিক দিয়ে ঢোকে আর বের হয় কে জানে? এমন সেলাই, দাগও থাকে না শালার! এই মাইয়্যাগুলা ট্রাকের পথের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে ফিরে। তাদের মাঝ থেকে কেউ কেউ ট্রাকের সাথে মিশে হারিয়ে যায়, পরের দিন সেলাই হওয়ার আগেই।


আরো কেউ কেউ এই শুনশান নগরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। দুগ্ধফেননিভ শয্যায়। শুভ্রকুসুমিত ব্রীড়া শতফুটো চাদরে মাখা থাকে। মলিন লুঙ্গি তুলে তাদের স্বামীরা পাশে শোয়। সারি সারি শরীর, সারি সারি ঘাম, থাম, আলো, চিৎকার, ঘুম, মরণ। এভাবে শহরের রাত বাড়তেই থাকে। চাঁদের কলার সাথে তুলনাবাজির দিন শেষ। এখন ঋতুস্রাবের দিনের সাথে তুলনা খুবই মোক্ষম মিলে যায়। এক মাসে সেটা মিস হলেই সকলে সজাগ হয়। এমআর এমআর বলে কিশোরী-যুবতী ছুটে ছুটে আসে আরো হাজারো সাজানো বিগলিত শুভ্র বিছানায়। সেখানেই তাদের শরীর থেকে মুক্তো বেছে নেয়া হয়। এই শহরের ঝলমলে আলোকসজ্জায় খুব দরকারি সেসব মুক্তো। ঐ মাইয়্যা-মাগীরা কী করে জানবে সেই কথা?


ট্রাকের চালকেরাও একদিন ক্লান্ত হয়। বেশ্যানগরের ফটক বার বার পার হতে হতে, পার হয়ে যেতে যেতে তারা যখন শুনতে পায় খোপ খোপ খোঁয়াড় থেকে গৃহস্থরা বেরিয়ে আসছে। ফুটপাত থেকে উঠে আসতে থাকে মাইয়্যারা, খুপরি থেকে হকারের স্যান্ডলের শব্দও পাওয়া যায়! এভাবে দলে দলে কোটি কোটি মুখ, কোটি কোটি ঘামকণা। তরল আগুনচাষী সূর্যের আলো বেরুনোর আগেই তারা জমায়েত হয়। তাদের জমায়েতের উদ্যান এই বেশ্যানগরে একটাও নাই। তারা ঘরের ব্যালকনিতে জমা হয়। ওভারব্রীজের ওপরে জমা হয়। মরাধ্বজা লেকের পাড়ে জমা হয়। কনস্ট্রাকশন সাইটের বালুতে তাদের বিষণ্ণ ছায়া পড়ে। ছায়া কেঁপে কেঁপে ওঠে। এই বেশ্যানগরে তাদের অনবদ্য ইতিহাস হা, হা করে শ্বাস নিতে নিতে একদিন গুমখুন হয়ে যায়।

শুক্রবার, ২২ মে, ২০০৯

ক্ষুদ্র বার্তা সেবা

একটা চড়াই সকালে এসে বাদামি কাচে টোকা দিল
ইতিউঁতি চাইলো, তারপরে ফুড়ুৎ করে চলে গেল
নীরবে লিখিত হলো চড়াই ও কাচের মিলনাখ্যান


জানালা খুলে দিতেই পর্দার ভাঁজে শায়িত ঝুল
মাকড়-স্মৃতি বুকে নিয়ে উড়ে গেল চেয়ারে
শয়নাঙ্গে জমা হলো সবুজ পাতা, নোট, ফুটনোট


দেয়ালের কোণে ঘুমিয়ে ছিল অজানা পতঙ্গ
জেগে উঠে সে-ও দুদ্দাড়, হারিয়ে গেল কোথায়
পতঙ্গের জীবন- আমার অজানাই থেকে যাবে, হায়!


সবারই দেখা হয়, সরাসরি, বা আড়ালে,
চোখের, ত্বকের, স্পর্শ কিংবা সৌহার্দ্যের
আমারই কেবল তোমার সাথে দেখা হয় না

বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০০৯

ঘ্যাচাং ফু

একটা কবিতা লেখার লিগা
তিনবার ড্রাফট, তিনবারই ঘ্যাচাং ফু
বইসা রইলাম দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট
বিকাল ভাইঙ্গা রাত আইসা বিছনা নিলো


রাইতরে দেখি কাইত হইয়া আছে
জিগাই, কাছে আয়...
আসে না। খালি চায়্যা থাকে
আমি কাছে গেলেই আবারও ঘ্যাচাং ফু


অনেকক্ষণ বইসা রইলাম, ব্যাক্কল হইলাম
সারা রাইত চোক্ষের সামনে পার হইয়া
বড়োলোকের বাড়ি গেল গিয়া
ঐখানে তার লগে কি হইছে আমি কী জানি?


হের পরে হ্যারা ঘুমায় পড়লে
ফির‌্যা আইলো, দ্যাখলাম
ওগো লগে থাইকা ফর্শা হইছে খুব
চেহারা বদলায়্যা ভোর আইসা কয়
শুইতে দে, ঘুম পাইছে

রবিবার, ১৭ মে, ২০০৯

অকালপক্ক!

আমার পিতার মাথার চুল প্রায় শাদা। মধ্য তিরিশেই তাকে দেখতাম মাঝে মাঝে ছুটির দিনে হাতে একটা শণ্‌ (চিমটা) নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল বাছতে। তারপরে একটা সময়ে পাকাচুলের সংখ্যা এত বেড়ে গেল যে সেগুলো বাছার খুব একটা দরকার পড়েনি। বেশ কাঁচাপাকা একটা ধূসরতা তাঁর মাথার ওপরে মেঘের মত বসে যায়। চোখের ওপরে মোটা ফ্রেম আর ভারী কাচের চশমায় তাঁকে ঋষিসুলভ লাগে আমার! সময়ের সাথে সাথে মাথার উপরের সেই মেঘ আরো ফর্সা, আরো সুন্দর হয়েছে।

আমার মাথায় প্রথম পাকাচুলের আভাস পেয়েছিলাম যখন দ্বাদশবর্ষে পড়ি। সেসময়ে ক্লাশ সাসপেন্ড হয়ে গেছে। পরীক্ষার আগে সারাদিন ঘরে বসে পড়াশোনা করি। পড়ার সময়ে নখ খোঁটা, চুল এলোমেলো করা আমার বদভ্যাস। সেই সময়েই একদিন আবিষ্কার করি একটা বেশ লম্বা চকচকে সাদা চুল সামনের দিকে অনেক কালোচুলের ভীড়ে হিহি করে হাসছে! অতি দ্রুততায়, কেউ দেখে ফেলার আগেই ওটাকে উৎপাটন করলাম। তারপরে অনেকক্ষণ চোখের সামনে ধরে রাখলাম। কী আশ্চর্যজনক একটা নতুন জিনিশ। আমার মাথার প্রথম পাকা চুল! তখনই আঁতিপাতি করে খুঁজলাম, আর পাই কী না, কিন্তু না, বাকিরা ইন্সপেকশনের সময়ে বিলকুল কালোচেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

তারপরে অনেকদিন খেয়াল করিনি, দুয়েকবার চোখে পড়েছে শাদা ঝিলিক। কিন্তু প্রথম পাওয়ার সেই উত্তেজনা আর বোধ হয়নি। সব অনুভূতিই খুলে-রাখা-মুড়ির মত পোঁতায় যায়। টের পেতাম যেদিন চুল কাটাতে যেতাম। নরসুন্দরের দোকানে আজকাল ছেলেরাও রূপচর্চা করে। ফেস্যিয়াল, ব্লীচিং, কালারিং ইত্যাদি নানারকম চৌকস রূপায়নবিদ্যার খবর পেয়েছিলাম এক প্রগলভ ও ব্যাকুল নরসুন্দরের কাছে। সে খুব করে চাইছিল আমার মাথাকে রঙে রাঙাতে, বা আমার মুখের অবাঞ্ছিত লোম উৎপাটন করার। আমার খোমাসৌন্দর্য নিয়ে সে বড়োই উদ্বিগ্ন। তখন তার অতিউৎসাহে ভাঁটা দিতে আলোচনা ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সুবাদে জানতে পারলাম মেয়েদের মতো, ছেলেরাও ভ্রূ-প্লাক করে। প্রৌঢ়দল আজকাল কলপ মাখে না, ওটা খ্যাত। এখন মেহেদি দিয়ে চুলকে করে ফেলা হয় আগুন-কমলা রঙ, দৃষ্টি আকর্ষক এবং হাল ফ্যাশান। তারা পাশাপাশি কান ফুটাও করে থাকেন। বলার সময়ে তিনি আমার কানের উপরের চুলে কাঁচি চালাচ্ছিলেন, ভয়ে আমার হাত পা...

পকেটে টাকা নেই এই অজুহাতে সেদিন তার কালার আর ব্লীচের হাত থেকে বেঁচেছিলাম। তারপর থেকে আরো কমদামি, এবং ওপেন-স্পেস সেলুনেই আমার যাতায়াত, সেখানে এত রকমারি বিলাসিতার চাহিদা বা যোগান কোনটাই নেই। তখন থেকেই আমি এটা নিয়ে ভেবেছি। ছেলেদের মাঝে কেন এই সৌন্দর্যসচেতনতা বা রূপ-সজাগবোধ? এটা নিশ্চয়ই স্কুল-কলেজ-পরিবার-বন্ধুমহল থেকেই সবাই শিখছে (যেভাবে আমি নিজের "রূপ-বিমুখতা"(!) শিখেছি)। সেখানে কী অবস্থান থেকে এই বোধ কিশোর বা তরুণদের মনে পৌঁছায় সেটা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি বলেই সেই সব সেলুনে যেতে আমার এত অপারগতা।

তবে চুল কাটলেই আজকাল নাপিত কলপের কথা তুলে। "ভাইজান, সাইড দিয়া চুল তো অনেক পাইকা গ্যাসে। কলপ লাগাইবেন নিহি?" এই চালুপ্রশ্নে আমি আনুভূমিক মাথা দুলিয়ে চলে আসি। কয়েকদিন খোঁচা খোঁচা সাদা ঝিলিক চোখে পড়ে, সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময়ে। তারপরে অন্য চুলের মিছিলে তারা একটু ম্রিয়মাণ হয়ে লুকিয়ে যায়। আমি স্বস্তিতে থাকি। বয়স যতোই বাড়তে থাকে, ততই আমরা তরুণ হতে চাই মনে হয়, অনেকটা ভাঁটার টান ধরলে তাড়াতাড়ি তীরে উঠে আসার তাগিদের মতো।

তবে এখন বেশ অন্যরকম হাল্কা অনুভব হচ্ছে। মাঝে উইক-এণ্ড ছিল বলে দাড়ি কাটিনি কয়েকদিন। আজকে সকালে অফিসে যাবার আগে আয়নার সামনে খুব ভাল করে খেয়াল করলাম। তিন-চারটা শিশুতোষ শাদা রোঁয়া থুতনির কাছে 'হ্যালো! হাউ আর ইউ স্যার?" বলে উঠল! আমি থতমত ভঙ্গিতে তাদেরকে ফিরতি সম্ভাষণ জানালাম। তারপরে ততোধিক শাদা ফেনায় মুখ-চোয়াল ঢেকে নিলাম। ফেনার তলে চোয়াল নিজের অজান্তেই দৃঢ় হয়ে এলো। হাতে উঠে এলো "সচেতন পুরুষের আস্থা" জিলেট রেজর! ঘ্যাচাঘ্যাচ-ঘ্যাচাং টানে শিশুপাকাদাড়িগুলো ফেনায় মুড়ে নামিয়ে ফেললাম।



আআহ! কী শান্তি!


***

শনিবার, ১৬ মে, ২০০৯

আপেক্ষিক আপেক্ষিকতা

আপেক্ষিকতা ১
========
আমার ঘর হইতে দেখা যায়
তিনটা হাইরাইজ, সাদাটে হলুদ,
আর গুইনা গুইনা তেরোটা সবুজ গাছ।
সুবেশী খোঁপাওয়ালি, গাঢ়সুন্দর!
বাকিরা শীর্ণ, ধুলোবালিমাখা দিনমজুর।
চাইরটা থ্রি-ফেইজ ইলেকট্রিক পৌল
আড়াআড়ি চইলা গ্যাছে পাতার ভিতর দিয়া
দূর থেইকাই, মনে হয় মৃদু বাতাসে
পাতাদের দড়িলাফ, খিলখিলে রোদ্দুর।


ঝিকোনো বিকালে সেই খেলার পটভূমিতে
হাইরাইজত্রয়ের খোলামেলা চৌকো বারান্দায়
গৃহিনীসকলের হাসি ল্যাপ্টায় থাকে।
-----


আপেক্ষিকতা ২
========
মেয়েদের ইশকুল পেরোনোর সময়ে, রিকশাচালকের পরিবর্তন সাপেক্ষেও, প্রতিদিন শ্লথ হয়ে পড়ি।
চালকের ঘাড়ঘূর্ণনের সাথে আমি তাকাই না; কারণ শ্রেণিভেদের সংজ্ঞা আমার জানা
অহমে লাগে ঠুক ঠাকঃ "পিছন ফিরে সে দেখে ফেললে কী ভাববে"- সেটা ভাবি


তবে ভাবনা বদলের মতো, ইশকুলের পাশেই 'রূপায়ন বিল্ডার্স'-এর শো-রুম দেখে
প্রকৃতির রসিক-মনের পরিচয়ে আমি আচমকা হেসে ফেলি।


***

বর্ষামাঠের ওপর মেঘের ঘর


এই ঘরে মগ্নতায় আমার অনিদ্রাযাপন, ফ্রিজিয়াম-বিরহ
রাতের বয়স বাড়ছে, ক্রমেই কমেছে জীবনের আয়ু
আমি খুশি হই, অযাচিত আশাবাদে অনায়াস-তত্ত্ব
আবিষ্কার করি, যাবতীয় জীবন সেই তত্ত্বে বিশ্লিষ্ট


এই অবিশ্রাম গলন, ঘড়ির পাশেই রাখা হা-মুখ
শীতল বোতল, টানটান শরীর, (কোঁচকানো র‌্যাপার যদিও পুরাতন)
আর্দ্রতা জমেছে প্রচুর, অসংখ্য; আমার
বিনির্মাণ দ্যাখে ভারি অভিধান, খালি চায়ের কাপ।




২.
জাগে শরীর বড় অসময়ে। এ- জেগে ওঠা স্বতন্ত্র, বিবিক্ত। মূলজ এবং পৃথক। এ- জেগে ওঠা সন্ত্রস্ত; আমায় খুশি করে। মানবের যে সকল মিলিত উদ্যোগের কথা আজকের বাতাস বয়ে নিয়ে যাবে, সম্ভবত আগামিকালই ভুলে যাবে, সেসব আমার মনে পড়ে। মনে পড়ে বলে, দীর্ঘশ্বাস বিছিয়ে দেই রানওয়েতে। গতকালের ঘুম অবহেলায় পড়ে থাকে ঘরের মেঝেতে। ঘাসের ফলার গায়ে লিখে রাখি যাপিত রাতের বাখানি। বাতাসের স্বভাব; বহনের উল্লাসে কোন নিরুদ্দেশ ঘরে সে জমা করে সকল পুলক? যেভাবে পুলক বুনন সম্পন্ন হয় মাটিতে, ঘাম সৃষ্টি হয় জমিনে, সেভাবে অবলীলায় এই মাতাল বাতাস মাতলামি করে। আউড়ে ওঠে প্রাচীন স্তোত্র। জোরালো চিরে যাওয়া ডাকে আমাদের ক্লান্ত-শরীর ম্লান হয়। মাতাল বাতাসের মাতলামি আমাদের স্বভাবে ঢুকে পড়ে।



৩.
এক প্রগাঢ় বর্ষায় আমি ঘোলাপদ্মায় লাশ ভেসে যেতে দেখেছি।
উপুড় মাতৃকায় কালচে রক্তাভ শাড়ি দেখে আমি আমূল কেঁপে গেছি।
আত্মার গহনে সেই কাঁপন আজও ব্যাপিত দুঃখের স্রোত হয়ে মিশে আছে।
ঘোলাপদ্মা নদীর স্রোতের মত,
যে স্রোত বর্ষায় ফুলে ওঠে,
থরোথরো উথলায়,
দুধের হাড়ির মতো বলগ এসে গেলে উপচায়,
সেভাবে আমরাও উদ্বেল হই।
পাশে দুইকূলে বাড়ি ঘর পশু গাছ মাটি ভিজে চুপসে যায়।
সেই প্রকৃতিতে অমর কাব্য লেখা হয়।
প্রকৃতির কিছু যায় আসে না মানব-লাশের ভারবহনে।
সেই সব অক্ষরে আমাদের তাবৎ শিহরণ লিখিত। এবং উন্মুক্ত।
ব্যাখ্যাতীত সৌন্দর্যের পাশেই বিবৃতিপাঠ করে কদাকার বর্ষা, ঝরোজল।
শীতল সিক্ততার আনন্দে আমরা ঘুমিয়ে পড়তে পারি।
এবং গুটিবন্দী পোকার মতো স্বপ্ন দেখতে পারি আসক্ত আর্দ্রতায়।




৪.
এই দুরন্ত রাতের শেষেও আমি জেগেই রবো, বর্ষণাকুল এই রাতে ভিজে যাবে চড়ুইয়ের পালক, সানশেড, ধাতব জালির বাইরে একপোঁচ আঁধার। উদয়পথে মৃত্যু-লাল-রঙ মেখে সূর্য উঠবে এই প্রত্যাশায় আমি চোখ খুলে রাখবো। মেঘের শরীর বা দূরে বিষণ্ণ সবুজের পরিমাপ আমার জানা নেই।

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০০৯

কবি বলেছেন, "ভালোবাসা খুব খ্রাপ"

প্রথমত, ভালোবাসার ব্যাপারে বহুল ব্যবহৃত প্রপঞ্চটি হলো "প্রেমে পড়া"। আমরা স্বভাবতই কারো প্রতি ভালোবাসায় 'পড়ি', কাউকে ভালো লাগে এবং প্রেমের প্রবল তাড়নায় আমরা 'পতিত' হই। এই পতনে লাগে সুখের মতোন ব্যথা. (কবিগুরুর জয় হউক)। এখানে আর কোন ভাল শব্দ নেই ভালোবাসার প্রাথমিক আরম্ভ ব্যাখ্যা করার জন্য। এবং এখানেই সবচেয়ে বড়ো সমস্যা, বা বলা যায় সমস্যার শুরু। আপনি কোন এক জাদুকরের তুকতাক মন্ত্রচালনায় পড়ছেন, পড়ছেন, পড়ছেন। কেউ যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে আপনাকে এই খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। চোখ খোলা আছে, সব দেখে শুনেই আপনি অভিকর্ষজ ত্বরণের চাইতেও দ্রুতবেগে ভালোবাসায় পড়তে থাকেন। এবং সকল জাগতিক পতনের মতো, এই সর্পিল গতিপথেরও একটা নিম্নতল আছে। সেই 'রক বটম'-এ পৌঁছানো মাত্রই যে প্রবল আঘাত, জ্ঞান হারানোর মতো বিমর্ষ-জ্বালা, তা কেনই বা আমাদের সহ্য হবে? তখন কি সকল স্নায়ু, মনন, শরীরে সেই যাতনাই ফুটে উঠবে না?

দ্বিতীয়ত, ভালোবাসা অন্ধ। আমরা যখন ভালোবাসি, প্রেমে পড়ি, অন্ধের মতোই আবেগিক প্রবাহে ভেসে যাই। চোখ মুখ বন্ধ করেই আমরা সেই পথে হাঁটা শুরু করি। এবং ইন্দ্রিয়ের অন্ধত্বহেতু সেই ভালোবাসা আমাদের যেভাবে চালায়, আমরাও সেভাবেই চালিত হই। এটা আপনার পক্ষে বুঝে ওঠাও সম্ভব নয়, যতক্ষণ না সেই পট্টি চোখের উপর থেকে সরছে। আমরা যখন আর ভালোবাসি না, কেবলমাত্র তখনই ধরা পড়ে আমরা কতটা মেষশাবকের ন্যায় ভালোবাসার অলিতে গলিতে ঘুরে মরেছি।

তৃতীয়ত, ভালোবাসা বড়োই যাতনাময় (আবারও কবিগুরুকে স্মরিছে মন)। আপনি যখন প্রেমে পড়বেন, আপনার অনেক অনুভূতিই বিশ্লেষণের বাইরে চলে যাবে, বা বলা যায়, উদ্দিষ্টের অগ্রাহ্যের শিকার হবে। যা কিনা মনের মাঝে এক বিষণ্ণ শুন্যতার সৃষ্টি করে। কেবলই মনে হয়, এই যাতনাভার, এই অনপনেয় দুঃখবোধের যেন সীমা নেই। অনুভূতির প্রত্যুত্তর না পেলে যে অভিমান জমা হয়, তা প্রবল স্রোতের মত কানাগলিতে দাপড়ে বেড়ায়। অনেকের জন্যে (হয়তো সবার জন্যেই) এই অনিচ্ছুক অবহেলা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। "কেন সে আমায় বুঝিলো না, মনের মাঝে উঁকি দিয়া কেন জানিয়া লইলোনা আমি কী ভাবিয়াছি তাহাকে নিয়া দিনমান"- এই প্রবল অভিমানের সময়, আমাদের অন্ধ-আবেগ একবারও এই বোধ পায় না যে আমরা তো নিজেদের কাছেই অচেনা। অপরে (সে যতোই ভালোবাসুক না কেন) কীভাবে জানবে আমার মনের খুঁটিনাটি অপ্রকাশিত কথা?

চতুর্থত, "ভালোবাসা ও যুদ্ধে সকলই জায়েজ", এই আপ্ত-বাক্যের মধ্যেই সকল দুঃখের বীজ লুক্কায়িত। যুদ্ধের মতোই, ভালোবাসা এক নিরন্তর প্রতিযোগিতা। আমাদের মনে তা মানবিক, কিন্তু চিন্তা করে দেখলে, তা আসলে রাজনৈতিক। ভালোবাসার ব্যাপারে আমরা আড়ালে হিংস্র প্রতিযোগী একে অপরের। আমরা বারবার জিততে চাই; আকাংক্ষা করি যাকে, তার ভালোবাসা পেতে চাই। একইভাবে আরো অনেকেই হয়তো প্রার্থিতের সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে আমরা হারাতে চাই একনিষ্ঠতা দিয়ে। আমার অনুভূতি বা একাগ্রতা, আরেকজনের চেয়ে বেশি হবে- এটাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু সম্ভাবনার অঙ্কই বলে যে সেই যুদ্ধে (!) আমাদের হারের হার অনেকখানি। এমনকি জিতে গেলেও, ভালোবাসার মানুষটির সাথেও চলে টানাপোড়েনের দ্বৈতযুদ্ধ, এবং সেখানেও নিলামে ওঠে আমাদের আদি ও অকৃত্রিম ভালোবাসা-ই।

পঞ্চমত, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ভালোবাসার নিক্তিতে মাপলে আপনার ভালোবাসা খুব উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়। আমাদের সকলের অনুভূতির তীব্রতা, প্রেমে পড়ার মুহূর্ত থেকেই মোটামুটি একই রকম থাকে। একই আবেগের দোলাচলে আমরা তাড়িত হই, যদি না কেউ নিজেকে ইরোস বলে দাবি করেন। বিভিন্ন মানুষ আলাদা আলাদাভাবে প্রেমে পড়ার পরেও, সবার ভালোবাসার দাম সমান। সম্পর্কের বাজারে যে জিনিসের দাম সমান, এবং যোগান প্রচুর, তার জন্যে তাহলে আমরা কেনই বা মাথা কুটে মরি? তার জন্যে কেন বেহিসেব বিনিদ্র রজনী যাপন, চাপা দীর্ঘশ্বাস নির্গমন, চোখের কোণে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুদাগ মোচন? ঘুমিয়ে পড়ার পরে স্বপ্নে সেই ভালোবাসা বা ভালোবাসার মানুষকে ক্রমশ হারিয়ে ফেলার দুঃখবোধ আমরা কেন পুষে রাখি?

যাকে উদ্দেশ্য করে আমরা আমাদের যাবতীয় কোমল আবেগ নিবেদন করি, যদি সে মূল্য না দেয়, তাহলে তার আদৌ কোন উপযোগ নাই। আর এই মূল্যসূচক নির্ধারণের জন্যে চোখে আঁটতে হয় ধৈর্যের চশমা, কাঁধে চড়াতে হয় সহনশীলতার চাদর। তারপরে অজস্র দিনরাত, যাপিত-জীবনের সময়কালকে কাগজ ভেবে লিখে রাখতে হয় ভালোবাসার হিসেব। এতকিছু জানার পরেও আমরা ক্রমাগত প্রেমে পড়ি, ভালোবাসি, দয়িতের মুখে সুখ খুঁজি। ভালোবাসায় নিপতিত, আপতিত আর পতনোন্মুখ সকলের জন্যে শুভকামনা রইলো। ওদিকে দেখি একা বসে কবি বলছেন, "ভালোবাসা খুব খ্রাপ"।

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০০৯

এই বাতিঘর, এই খেলা-প্রেম

এই বাতিঘর এই খেলা-প্রেম।
প্রস্তাবনা ছিল আমরা কখনও ভালোবাসবো না, আমাদের মাঝে কোন প্রেম ঘুমাবে না,
এবং অবশ্যই, কতিপয় নিয়ম। প্রথা। চালচলন। বিধীত আইনপাঠ।
সমুদ্রেই বসত করে বাতিঘরের আলো, এই বিশ্বাসে, ঘর বাঁধা বালুর গভীরে
এই মিথ্যা আমাদের অজানাও ছিল না।
সত্য বা মিথ্যা বুননের শিল্পে আমরা পারদর্শী বলে
নিজেদের সাথেই খেলা জমে ওঠে একাগ্র মগ্নতায়
সূত্র অথবা ছক কাটা খোপ নেই, রেফারিবিহীন হাফটাইম
আর ক্রসিঙয়ের হলুদ আলো কেবলই বালুতীর আঁকে। রাত নেমে
নেমে নেমে আসার সময়ে আমার পোস্টাপিসে কড়া নেড়ে বলে গেছে
চিঠির ভিতরে জমানো মুক্তো, প্রেম,ঘৃনা বা বৈরাগ্য।

শুক্রবার, ১ মে, ২০০৯

ভূতবাজি

এইসব রাতে চোখের উপরে ভূত ভর করে। আর ভূতের লিকলিকে পা দিয়ে আমার চুল-গলা জাপটে ধরে। তার পেট ঠেসে থাকে আমার মুখে এবং নাকে। বুঝলেন তো? কী বেমক্কা পজিশন! ধড়ের উপরে সাঁটা জলজ্যান্ত দশাসই ভূত! টেনে ছুটাতে পারি না, হাঁচড়ে-পাচড়ে সেই বাবাজি আঁকড়েই থাকে। খো খো করে হাসে, আমার নড়াচড়ায়, নাকি সে কিঞ্চিৎ সুড়সুড়ি পায়, পেটের চামড়ায়। এদিকে আমার দম বের হয়, হায়! চোখ ফেটে পানি চলে আসে (কিন্তু চোখের উপরেই সাঁটা মর্তমান ভূত, তাই সেই পানি বেরুনোর পথ পায় না)। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, কারণ ভূতটা নিজেও শ্বাসপ্রশ্বাস চালায়। সেই শ্বাসের দমকে আমার নাক বুঁজে যায় ভূতের পেট ওঠানামায়। ও হ্যাঁ, ভূতেরাও আমাদের মতো পেটের মধ্যে বাতাস ভরে হরদম! নাকি আমরা বুকের মাঝে বাতাস নেই? উঁহ! আমার লজিক এলোমেলো হচ্ছে। "এটা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবজনিত উপসর্গ, আর কিছু নয়"- নিজেকে অবোধ দেই।


এইসব রাতে আমার নিজেকে কাঙাল মনে হয়।


আজকের রোদ খুব হুটোপুটি খেলেছে শরীরে। তাদের দুর্দান্ত দৌড়ে আমি বারবার হেরে গ্যাছি, রোদের ট্রুপ আমাকে অনায়াসে টপকে গেছে ট্র্যাকের ওপরে নিঃশব্দ-ঘাম জমা করে। হতাশ। হতমুখ। আমি। শ্বাসাভাবে ভুগি তখন সহসাই। দৌড়ের শেষে ট্রফিল্যাণ্ডে রোদের প্রথম পুরষ্কার নেয়া দেখে হাততালি দেই। আহা! ও তো অনেক ভাল অ্যাথলেট! তাই না? আমি কুলকুল করে ঘামি। চিকন ঘাম গড়িয়ে পড়ে আমার চিবুক বেয়ে। চিবুকের পাশেই একটা বিচ্ছিন্ন পানিবন্দী গ্রামের নাম লেখা হয়। গ্রামের নাম ভূতপাখি। (এই রে! আবার ভূতের কথা চলে এলো। এ দেখি নাছোড়বান্দা।)


ঐ গ্রামে আমার প্রেমিকা বাস করে। প্রেমিকার মুখ মনে ভাসে, ডোবে, আবার ভুস্‌ করে ভেসে ওঠে। প্রেমিকার কথা আমার এই গরমে কেন মনে পড়ে? গ্রীষ্মকালে ভালোবাসা বড্ড বেহিসেবি। রোদপোড়া, তাপস্পর্শী, ধুলোমেশা প্রেম আমার! ভূতপাখি গ্রামে একটা ছনের ঘর বান্ধি আমি। ঘরের মধ্যে রাখি পুরোনো শীতলপাটি। চারপাশে 'যতনে' বান্ধি বেড়া, খয়েরি শুকনো কলাপাতায় ঢাকা পড়ে নিভৃতকোণের ছায়া। সেই ছায়ার ওপর দিয়ে টিপে টিপে পা ফেলে কালোবন্যার পানির মতো ঢেউ আসে। আমি ভিজে যাই। আমাকে উদ্বাস্তু করে পাটির ওপরে ফেলে দেয় শাড়ির ঘন আঁচল। আঁচলের ভিতরেই রোদের জিতে নেয়া ট্রফিটা! আমার চোখ জুলজুল করে ওঠে। লোভ হয়। মনে পড়ে মহাগ্রন্থের নিষেধঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।


আমার পাপী হয়ে ওঠার বয়স কয়েক শতাব্দী হবে হয়তো। আমি গত কয়েক শতবর্ষ ধরেই পাপধারণ করছি। যাবতীয় অমানবিক, অসামাজিক, অনৈতিক পাপ একটা একটা করে মনোযোগ দিয়ে পালন করছি। তার মাঝে নিকৃষ্টতম পাপগুলোও রয়েছে। আমি অবলীলায়, নিঃসন্দেহ ক্রূরতায়, অপরাধ ও অন্যায় কাজ করেছি। এবং যতোই সময় গ্যাছে, আমি নির্দয় হয়ে উঠেছি। শাবলের মত নিরীহদর্শন হয়েছি। তো, লোভ নিয়ে বলছিলাম। আঁচলের গোপনে, বুকের নিস্পন্দ ওঠানামার কাঁপনের ভাঁজে আমি ট্রফিটা দেখতে পাই। আমার অজেয় পুরষ্কার, ব্যাটা আজকের বিরক্তিকর রোদ যেটা জিতে নিয়েছিল। ওটার প্রতি আমার খুব লোভ হলো। সেই লোভের একটা শিরা জন্ম নিলো আমার শরীরে। হাত বাড়িয়ে সেই ট্রফিটা একটু স্পর্শ করি, আমার শিহরণ লাগে। প্রেমিকার শরীরের চেয়েও ঐ ট্রফিটা আমার কাছে দামি মনে হয়। চোখ উঠিয়ে দেখি...




ধুরো! কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। সেই কখন থেকে ভূতের শাদা পেটটাই চোখের সামনে থেবড়ে আছে!




**---***