শুক্রবার, ১ মে, ২০০৯

ভূতবাজি

এইসব রাতে চোখের উপরে ভূত ভর করে। আর ভূতের লিকলিকে পা দিয়ে আমার চুল-গলা জাপটে ধরে। তার পেট ঠেসে থাকে আমার মুখে এবং নাকে। বুঝলেন তো? কী বেমক্কা পজিশন! ধড়ের উপরে সাঁটা জলজ্যান্ত দশাসই ভূত! টেনে ছুটাতে পারি না, হাঁচড়ে-পাচড়ে সেই বাবাজি আঁকড়েই থাকে। খো খো করে হাসে, আমার নড়াচড়ায়, নাকি সে কিঞ্চিৎ সুড়সুড়ি পায়, পেটের চামড়ায়। এদিকে আমার দম বের হয়, হায়! চোখ ফেটে পানি চলে আসে (কিন্তু চোখের উপরেই সাঁটা মর্তমান ভূত, তাই সেই পানি বেরুনোর পথ পায় না)। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, কারণ ভূতটা নিজেও শ্বাসপ্রশ্বাস চালায়। সেই শ্বাসের দমকে আমার নাক বুঁজে যায় ভূতের পেট ওঠানামায়। ও হ্যাঁ, ভূতেরাও আমাদের মতো পেটের মধ্যে বাতাস ভরে হরদম! নাকি আমরা বুকের মাঝে বাতাস নেই? উঁহ! আমার লজিক এলোমেলো হচ্ছে। "এটা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবজনিত উপসর্গ, আর কিছু নয়"- নিজেকে অবোধ দেই।


এইসব রাতে আমার নিজেকে কাঙাল মনে হয়।


আজকের রোদ খুব হুটোপুটি খেলেছে শরীরে। তাদের দুর্দান্ত দৌড়ে আমি বারবার হেরে গ্যাছি, রোদের ট্রুপ আমাকে অনায়াসে টপকে গেছে ট্র্যাকের ওপরে নিঃশব্দ-ঘাম জমা করে। হতাশ। হতমুখ। আমি। শ্বাসাভাবে ভুগি তখন সহসাই। দৌড়ের শেষে ট্রফিল্যাণ্ডে রোদের প্রথম পুরষ্কার নেয়া দেখে হাততালি দেই। আহা! ও তো অনেক ভাল অ্যাথলেট! তাই না? আমি কুলকুল করে ঘামি। চিকন ঘাম গড়িয়ে পড়ে আমার চিবুক বেয়ে। চিবুকের পাশেই একটা বিচ্ছিন্ন পানিবন্দী গ্রামের নাম লেখা হয়। গ্রামের নাম ভূতপাখি। (এই রে! আবার ভূতের কথা চলে এলো। এ দেখি নাছোড়বান্দা।)


ঐ গ্রামে আমার প্রেমিকা বাস করে। প্রেমিকার মুখ মনে ভাসে, ডোবে, আবার ভুস্‌ করে ভেসে ওঠে। প্রেমিকার কথা আমার এই গরমে কেন মনে পড়ে? গ্রীষ্মকালে ভালোবাসা বড্ড বেহিসেবি। রোদপোড়া, তাপস্পর্শী, ধুলোমেশা প্রেম আমার! ভূতপাখি গ্রামে একটা ছনের ঘর বান্ধি আমি। ঘরের মধ্যে রাখি পুরোনো শীতলপাটি। চারপাশে 'যতনে' বান্ধি বেড়া, খয়েরি শুকনো কলাপাতায় ঢাকা পড়ে নিভৃতকোণের ছায়া। সেই ছায়ার ওপর দিয়ে টিপে টিপে পা ফেলে কালোবন্যার পানির মতো ঢেউ আসে। আমি ভিজে যাই। আমাকে উদ্বাস্তু করে পাটির ওপরে ফেলে দেয় শাড়ির ঘন আঁচল। আঁচলের ভিতরেই রোদের জিতে নেয়া ট্রফিটা! আমার চোখ জুলজুল করে ওঠে। লোভ হয়। মনে পড়ে মহাগ্রন্থের নিষেধঃ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।


আমার পাপী হয়ে ওঠার বয়স কয়েক শতাব্দী হবে হয়তো। আমি গত কয়েক শতবর্ষ ধরেই পাপধারণ করছি। যাবতীয় অমানবিক, অসামাজিক, অনৈতিক পাপ একটা একটা করে মনোযোগ দিয়ে পালন করছি। তার মাঝে নিকৃষ্টতম পাপগুলোও রয়েছে। আমি অবলীলায়, নিঃসন্দেহ ক্রূরতায়, অপরাধ ও অন্যায় কাজ করেছি। এবং যতোই সময় গ্যাছে, আমি নির্দয় হয়ে উঠেছি। শাবলের মত নিরীহদর্শন হয়েছি। তো, লোভ নিয়ে বলছিলাম। আঁচলের গোপনে, বুকের নিস্পন্দ ওঠানামার কাঁপনের ভাঁজে আমি ট্রফিটা দেখতে পাই। আমার অজেয় পুরষ্কার, ব্যাটা আজকের বিরক্তিকর রোদ যেটা জিতে নিয়েছিল। ওটার প্রতি আমার খুব লোভ হলো। সেই লোভের একটা শিরা জন্ম নিলো আমার শরীরে। হাত বাড়িয়ে সেই ট্রফিটা একটু স্পর্শ করি, আমার শিহরণ লাগে। প্রেমিকার শরীরের চেয়েও ঐ ট্রফিটা আমার কাছে দামি মনে হয়। চোখ উঠিয়ে দেখি...




ধুরো! কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। সেই কখন থেকে ভূতের শাদা পেটটাই চোখের সামনে থেবড়ে আছে!




**---***

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন