মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯

ফ্ল্যাশ ব্যাক

আজকে কেমন ঝটিতি দিন কাটছে!


মনে করেছিলাম আজকে সকাল সকাল উঠে ইউনি যাবো। ইউনিতে অনেক টুকরো টুকরো কাজ জমে আছে। বেশ কিছু খাতা দেখা বাকি, ঈদের আগে মিড নিয়েছিলাম। কয়েকটা নতুন লেকচারও বানাতে হবে। গত কয়েদিন ঠিক বারোটার আগে পরে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বলে সকাল সকাল উঠে কনফিডেন্স বেড়ে গিয়েছিলো! কিন্তু আজকে আবার পুরানো রোগে পেলো  আমায়। ঘুম আর ঘুম। ঘুম কেটে দিতে দুয়েকবার ফোন বেজে উঠেছিলো ডেক্সটারের থিম-এ। আফরীনের ফোন। আমি নাকি ধরেওছিলাম, ঘুমের মধ্যে ফোন ধরলে, কথা বললে আমার মনেই থাকে না! তারপরে সুবোধ বালকের মতো আমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছি কখন। শেষে আবার তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো ফোন আর আমিও ঘুম ভেঙে ধড়মড়িয়ে উঠলাম। ঘুমের মধ্যেও তাহলে দেহঘড়ি চালু থাকে? ঠিকই টের পাওয়া যায় যে অনেক দেরি হয়ে গেছে! আজব কারখানা আর তার মহা-আজব ব্যাপার-স্যাপার।


ঘুম থেকে ঝট করে উঠেই দৌড়াদৌড়ি লেগে গেলো। ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি ফিটফাট, বাবু। বাসা থেকে বের হয়ে তাজ্জব হয়ে গেলাম। কুয়াশা কুয়াশা রোদ!! রোদ কেমন ফিল্টার হয়ে এসে গায়ে পড়ছে। আমার চমৎকার লাগলো। রিকশা করে ইউনি পৌঁছানোর পথে বাবুস্কুল। ফিনফিনে শৈশবের সাথে হুটহাট দেখা হয়ে যায় ওখানে। আমি তৃষিতের মতো চেয়ে থাকি। লাল-সাদা ডোরাকাটা জামা পরে একটা বছর পাঁচেকের ছেলে বোনের হাত ধরে যাচ্ছে। দুরন্তপনায় বার বার বোনের হাত ছুটে যাচ্ছে। আমার সাথে ছেলেটার একবার চোখাচোখি হলো, বড় বড় টলটলে চোখ। মাথার চুলগুলো এলোমেলো, আমার খুব আপন মনে হলো ছেলেটিকে। রিকশা পেরিয়ে যাবারও আরো কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত আমি তার কথা ভাবছিলাম!


অফিসে এসে একদণ্ড শান্তি নেই, ঝড়ের বেগে কাজ করতে করতে ভালই লাগছিলো। দুপুরে একটা ফাস্টফুডের দোকানে খেতে গেলাম, হাতে সময় ১৫ মিনিট। ১৫ মিনিটে খেয়েই অফিসে ফিরতে হবে বলে একটা বার্গার আর ফ্রাইড চিকেন বরাদ্দ হলো। কোনোদিকে না তাকিয়ে কোণের চেয়ারে বসে গপাগপ গিলছি। সামনের টেবিলে একটা ছেলে আর মেয়ে মুখোমুখি বসা, আমি কেবল ছেলেটার মুখ দেখতে পাচ্ছি। একটু পরে মেয়েটার গলার স্বর চেনা চেনা লাগলো, বাঁকা হয়ে চেয়ে দেখি শান্তা! স্কুল থেকে পরিচয়, ম্যাবস-কোচিঙয়ের কালঃ আটানব্বুই-নিরানব্বুই! ও সম্ভবত আমার অফিসের গলিতেই অন্য কোনো খানে চাকরি করে, আগেও একদিন দেখেছিলাম হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিলো। আজকে আমি এতো ব্যস্ত যে কথাই বলতে পারলাম না। বার্গারে মনোযোগ দিলাম। তবে ঘাসপাতা মেশানো মাংশ চিবুতে চিবুতে মনে পড়ছিলো ফার্মগেইট, মোস্তফা, শিশির, রাহুল, ত্রিমিতা, পুষন, আলম…


স্মৃতি বড়ো বেমক্কা! এই তাড়াহুড়ার মাঝে আমাকে স্থবির করে দিলো!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন