আমাদের চারপাশের মানুষগুলো কেমন?
আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমি আজকে এখন পৃথিবীতে না থাকলে কেমন হতো? একেবারে সাধারণ ভাবনায়, শুরুতেই ধরে নেয়া যায় যে এই লেখাটা লেখা হতো না। আমি জানি আমার ভেতরে যে কথাগুলো জন্ম নিচ্ছে সেগুলো আর কেউ কোনোদিন বলে গেছে; তবে আমার মতো করে বলে নি। আর আমার মতো জীবন ঠিক আমার মতো করেও কেউ কাটায় নি। আমি যাদের সাথে মিশে মিশে, যাদের ভালোবেসে এতোটা পথ পেরুলাম তারা আমার সাথেই কেবল তেমনভাবে মিশেছে। “আর কেউ আমার জায়গা নিতে পারবে না”- পদার্থবিজ্ঞানে এই মত জানা আছে আমার। তবে কিনা, পৃথিবী ও মানুষ, তার আবেগ ও ভাবনা সবসময়ে বিজ্ঞানের কথা শোনে না। বড়ো খারাপ ও দুর্বিষহ আচরণ করে তারা অনেকেই। তাই বিজ্ঞান জানিয়ে রাখলেও আমার সন্দেহ হয়, হয়তো আমি না থাকলেও কেউ না কেউ আমার জায়গা নিয়ে নিতো!
এই ভয় থেকেই আমি হয়তো নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা করি। ভয় তো খুব তীব্র মোটিভেটর, তাই না? আমি তাই উর্ধ্বশ্বাসে পালাই আমার হারিয়ে যাবার ভয় থেকে। আমার বিলুপ্তির খাদের কিনার থেকে আমি উলটো দৌড় দিই। আমার ফুসফুসে তেমন জোর নেই বলে সেই দৌড়ের পথে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি বটে। তারপরে হাঁপাতে হাঁপাতেই আমি চেষ্টা করি। নিজের প্রতি কেন এতো প্রেম হায়! নার্সিসাসের জীন, বহন করছি রন্ধ্রে রন্ধ্রে! চারপাশের মানুষগুলো খুব করে আশা করছে, আমি তাদের দিকে তাকাবো, মুখে হাসি হেসে সকল ছল মুছে আমি তাদের কাছে আসবো। কিন্তু আমি কেবল নিজেকে নিয়েই ভাবছি!
আর আমিও তাদের মতো সাধারণ। তাই আমিও চাই সকলে আমাকে খুব খুব গুরুত্ব দিক, খুব মেনে নিক আমার সকল কথা। আমাকে ভক্তি করুক, আমার কথা আর চৌকস কৃতিত্বে তারা ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে এক একটা জ্বলন্ত কাঠ হয়ে যাক। আমি তাহলে এমনই নিষ্ঠুর নাকি! হয়তো তারাও এমনই নিঠুর, আমার মতোই?
আজকে খুব বাখ শুনছি। দ্য ওয়েল টেম্পার্ড ক্ল্যাভিয়ের। পিয়ানোর সুরটা খুব সাধারণ, এলিমেন্টারি। কিন্তু ওই যে বলে না, সহজ কথাই প্রাণে বাজে সবচেয়ে জোরে! রেকর্ডিঙ্গটা খুব ভালো, মনে হয় কেউ কানের কাছে প্রাণের পাশে বসেই বাজাচ্ছে। আলতো আলতো আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুর বের হয়ে আসছে। আমি বাকি সব স্তব্ধতার মাঝেও টের পাচ্ছি হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি। শীতে চারিদিক নিঃস্তব্ধ। আমি, বাখের ক্ল্যাভিয়ের, আমার হৃদয়ের স্পন্দন। আর কেউ নেই, কোথাও নেই!
ধুর, চোখে কেনো অযথাই পানি আসে?
***
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন