বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১০

ভালো কাজ

বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে "মনের মানুষ" ছবিটা দেখে আসছি। গৌতম ঘোষ পরিচালক, দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার ছবি। অনেক আগে গৌতম ঘোষ পদ্মা নদীর মাঝি বানিয়েছিলেন। দেখে হতাশ হয়েছিলাম। কোন উপন্যাসের লাইন বাই লাইন দৃশ্য রচনা করে জুড়ে দিলেই সেটা চলচ্চিত্র হয়ে যায় না। এইটা গৌতম ঘোষ জানলেও, মানেন না। এদিকে "মনের মানুষ" বইটা পড়া হয় নাই (সুনীল গাঙ্গুলির লেখা), তাই ভাবলাম ছবিটাই দেখে ফেলি। কুষ্টিয়ার ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন নিয়ে বানানো ছবি।

লালনের ভূমিকায় প্রসেনজিৎ, লালনের গুরুর ভূমিকায় রাইসুল ইসলাম আসাদ। এখানে গিয়েই বিপত্তি বাঁধলো। এরই মধ্যে লালন হিসেবে আসাদের চেহারা ও অভিনয় মাথায় গেঁথে গিয়েছিলো। সেখানে প্রসেনজিৎকে বসানো খুব কঠিন। আর যেহেতু ওপারের পরিচালক (এবং লেখক) সেহেতু গল্প শুরু হলো লালনের পোর্ট্রেট করছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর - এই দৃশ্য থেকে। সেখান থেকে ফ্ল্যাশব্যাক। লালনের তরুণ জীবন। বিবাহিত ও সুখী লালন, সরলসোজা, গান গায়, বৈষয়িক তাড়না নাই, গাঁয়ের মোড়ল বা কর্তার ঘোড়ার দেখভালের দায়িত্ব পেলো। দৃশ্যধারণের এই খাপছাড়াভাব দেখে সুনীলের বইটা পড়ার শখ হলো। এখানে কেন এরকম? 'সেইসময়' উপন্যাসে যেমন সুনীল জাম্প-কাট করতেন, সেরকম ভাবে এই বইটাও কি লিখেছেন নাকি? গৌতম ঘোষ কেন এভাবে শুরু করলেন।

ভাবতে ভাবতেই লালনের অসুখ। জলবসন্ত, চিকিৎসাহীন ও নিরাময়হীন। তাই সবাই মিলে গঙ্গায় (পদ্মায়) ভাসিয়ে দিলো। বাঁশের ভেলার ওপর মশারি, শাদা চাদর গায়ে মুমূর্ষু লালনের দেহখানা ভেসে চলছে। ঢেউ ছাড়া চরাচরে কোন শব্দ নাই। এইখানে দৃশ্যের সাথে শব্দের যে মিল, সেটা চমকে দিলো। এখানেই বলে রাখি কারিগরি দিক থেকে ছবিটি দারুণ লেগেছে। লালনের ছবিতে যদি শব্দধারণ ভালো না হতো, তাহলে ভালো লাগতো না। চিত্রগ্রহণের ব্যাপারেও একই কথা, ভোরের কুয়াশামাখা নদীর পাড়, অথবা রাতের চন্দ্রালোকিত কুটির - সবই অদ্ভুত আলো-ছায়া-রহস্যমাখা মনে হয়েছে! লালনের নাম ও জীবনের সাথে যে রহস্যময়তা, সেটা এখানেই ফুটে উঠেছে!

ইন্টারভ্যাল পর্যন্ত জমজমাট ছবি। গান, সুর, অভিনয়। আসাদ-চঞ্চল-পাওলী দাম, তিনজনের চরিত্র খুব চমৎকার লেগেছে। লালনের স্ত্রীর চরিত্রের অভিনেত্রী এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরিত্রও টেনে নিয়ে গেছেন। ডুবিয়ে দিয়েছেন লালনের মায়ের চরিত্রে চম্পা (তার একটা খুব ক্রুশিয়াল দৃশ্যের অতি-অভিনয়ে হলের ভেতরেই লোকজন হাসতে শুরু করলো, অথচ দৃশ্যটা খুবই সিরিয়াস ছিলো), এবং পরে লালনের সেবাদাসী হিসেবে এক অভিনেত্রী। বিশেষ করে পরের জনকে কেন কাস্ট করা হয়েছে তা বুঝলাম না। একেবারেই অভিব্যক্তি নাই!

গৌতম ঘোষের মূল দূর্বলতার জায়গা দেখলাম ক্লাইম্যাক্স এবং ফিনিশিংয়ে। ছবির আমেজ অনেকটাই কেটে গেলো শেষে এসে। তবু কিছু ছবি দেখে এসে যেমন সেই ছবির ভেতরের জীবনধারা নিয়ে আগ্রহ লাগে, একটু গুগল করতে ইচ্ছা করে, একটু জানতে আর পড়তে ইচ্ছা করে, এই ছবিটাও সে'রকমই। গানের মাঝে সবগুলোই ভালো লেগেছে। দুয়েকটা গান শেষে গিয়ে একই থিমের কারণে একটু ধরে আসলেও অসুবিধা নাই। উপরি পাওনা, চঞ্চলের কমেডি। ধীরে ধীরে বাংলা সিনেমার এই ধরনের রোলগুলো তিনি কব্জা করে নিচ্ছেন!

এখন লালনের গানগুলো শুনছি। কিছু কিছু জিনিস অনেকদিন পর শুনলে মন ধুয়ে মুছে যায়। মাঝে হয়তো মনে অনেক শ্রান্তি আর ক্লেশ জমে গেছিলো। সব কেটে যাচ্ছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন