সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১০

দুঃস্বপ্ন

খুব বাজে দুঃস্বপ্ন দেখাটা একটা অভিশাপের মতো। দুঃস্বপ্ন সন্তর্পণে এসেছে। ঘুমিয়ে ছিলাম, আর ঘুমটাও এমন যে টের পাচ্ছিলাম অনেকক্ষণ ধরে অনেক আরামের ঘুম হচ্ছে। ঘরে এই পড়ো পড়ো শীতে হালকা করে ফ্যান ঘুরছে। গায়ে পাতলা কম্বল গায়ে দিয়েছি। বাতাস টের পাচ্ছি, কিন্তু শীত লাগছে না। এই ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ দুঃস্বপ্নটা আক্রমণ করে বসলো। মনে হলো, কেউ বুকের বাঁ পাশে গনগনে লোহার বর্শা গেঁথে দিয়েছে। ফুসফুসের কুঠুরিতে সেই গরম বর্শার ফলা বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিষে জরজর হয়ে আমি দুঃস্বপ্নটা দেখতে থাকি। সেলুলয়েডের মতো একটানা চোখের যামনে বয়ে চলছে। এ খুব অবাক ব্যাপার, সুখস্বপ্নগুলো এতো ভিভিড হয় না। ছেঁড়া ছেঁড়া, খণ্ডদৃশ্যের মতো হয়। ঘুম ভেঙে সেগুলো ঠিক ঠাক জোড়া দেয়া যায় না। মাঝে মিসিং লিংক থাকে অনেক। কিন্তু দুঃস্বপ্নগুলো একদম ডিটেইল। আমার বুকে জমে থাকা বাতাস ফুরিয়ে যেতে থাকে। আমি ঘুমের মধ্যেই ছটফট করি। নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করি। আর আমার শরীর থেকে প্রাণ বেরিয়ে যাবার জন্য আঁকুপাকু করে। জগদ্দল শরীর। অযথা বেহুদা ক্লেশ। শেষ হয়ে গেলে আমি হালকা হয়ে যেতাম, শালিকের মতো। এই অচকিত ভাবনাটাও গরম তাপে মোমের মতো গলে যায়। দুঃস্বপ্নকে এখন আর স্বপ্ন মনে হচ্ছে না। মনে হতে থাকে এটা বাস্তব। আমার যাপিত জীবন!

আমার চোখ ফেটে জল আসে। আমি বুকের শেষ শ্বাসটুকু ছুঁড়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠি। আমার হাত মুঠো হয়ে ওঠে। আমার গলা ভেঙে যেতে থাকে। আমি চিৎকার করতেই থাকি। কে যেন থাইয়ের কাছে করাত দিয়ে পা কেটে ফেলছে। চিৎকারের শব্দ হারিয়ে যায়। আমার শরীর বেঁকে চুরে যাচ্ছে। চিৎকার দিতে দিতেই আমার ঘুম ভেঙে যায়।

ঘর অন্ধকার।

ফ্যান সরসর সাপের মতো ঘুরছে।

আমার গায়ে পাতলা কম্বল।

আমি খুব জোরে চিৎকার করছিলাম, গলা ভেঙে গেছে।


আমি বেঁচে আছি, কিন্তু আমি মরে গেলেই বেঁচে যেতাম।



এখন এই অবশ্যম্ভাবী দুঃস্বপ্নটা সত্যি হওয়া পর্যন্ত আমি সেটা যাপন করবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন