মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১০

নতুন বাজার

মোড়ের কোমরের কাছে বেঁকে গেছে। গাড়ির হর্ন আর রিকশাওলাদের ক্যাচাল। শীত শীত আরাম বাতাস। একটু আগেই রোদ ছিলো, এখন মেঘ ঢেকে আছে। আমি বেশ ভেঙে ভেঙে এখানে পৌঁছেছি। পকেটে ভাংতি ছিলো না বেশি। রিকশাভাড়া হিসেব করে করে এলাম। মাঝের রাস্তায় মোড়ের এক পার থেকে রিকশা নিলে এক রেট, আরেক পারে গেলে পাঁচ টাকা কম। তাই হেঁটে পার হইলাম ওই মোড়টা।

তো, মোড়ের পরে মোড়, কোমরের বাঁকগুলোকে অবহেলায় এড়িয়ে এসে, আমি নতুন বাজারে বসে রইলাম। সকাল দশটা বাজে। অনেকটা ঘুরে ঘুরে এসেছি। পথে শীতের বাতাস শার্টের বোতামে আটকে গেছে। তারপর সেগুলোর জট ছাড়াতে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম মোড়টায়। এখানে রিকশা, সিএনজি আর মিশুকের খ্যাপ-স্টেশন। জন প্রতি দশ টাকা গুলশান দুইয়ের মোড়। সব পক্ষ খুশি থাকে এরকম বন্দোবস্তে। একসাথে গিজগিজ করে সিএনজি-মিশুকে উঠে যাচ্ছে মোটা-শুকনা লোকগুলো। ভাড়া করা সিএনজি দেখে দেখে অভ্যস্ত চোখে একটু খটকা লাগে। এখানেও এক সিএনজি নানাজনকে টেনে নিচ্ছে পেটের ভেতর। কোনো একজন যদি একা একা যেতে চায় বনানী, কিংবা মহাখালি, এরা যাবে না। পলিগ্যামি!! টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না!

আমি একটু হেঁটে শীত আমেজটা কাটিয়ে দিতে চেষ্টা করলাম। কাজ হলো না। এখনও একটু পরপর বাতাস দিচ্ছে। মোড়ের ওপর চায়ের দোকানে ব্যানার দিয়ে আড়াল করা। বাতাস ঠেকাচ্ছে। দেখে পদ্মার নৌকার কথা মনে পড়লো, আরিচা ঘাট থেকে নগরবাড়ি ঘাট। পালতোলা নৌকার মতো ফুলে উঠছে এই ব্যানারটা। ব্যানারে ছাত্রলীগের দেয়া কুরবানির হাটের খবর লেখা। আমি কুরবানির হাটকে পিঠে রেখে বসলাম, "মামা, একটা চা করেন", চায়ের দোকানদারের হাতের চামচ নড়তে থাকে। দোকানদারের নাম কেরামত। গালে থুতনিতে অল্প দু'গাছা দাড়ি। গলায় মাফলার, পরনের কাপড় পুরনো এবং শীত মানবে না আর কয়দিন পরেই। "নতুন লিকার বসাইসি, একটু ধাগ কম হইবো", বললেন তিনি, "এখনই খাবেন নাকি আরেকটু পরে দিমু?" আমি বললাম, "ঠিকাছে মামা, পরেই দেন। দশ মিনিট।"

দশ মিনিট পরে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে সামনের ওভারব্রিজটাকে দেখি। দুপাশ দিয়ে ওপরে ওঠার সিঁড়ি, রাস্তার ওপারেও একই রকমের সিঁড়ি। দেখে হঠাৎ মনে হয় এই নতুন বাজারে একটা শীর্ণ লোক বুকডন দিচ্ছে। দুই পাশের ফুটপাতে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়েছে, আর পিঠ উঁচু করে রেখেছে, যাতে তলা দিয়ে সারসার বাস-ট্রাক-গাড়ি-রিকশা চলে যেতে পারে! নিজের চিন্তায় নিজেই হেসে উঠলাম। পাশে একজন বিড়ি ফুঁকতেছিলাম। হাসতে হাসতে তার বিড়ির দমবন্ধ গন্ধটাও ভালো লাগলো!

চা শেষ হইলো। পাঁচ টাকা হইছে, মামা। এই নেন রাখেন। আমার পকেটে শেষ পাঁচ টাকার কয়েনটাও দিয়ে দিলাম। এখন হালকা লাগছে। কড়কড়ে দুইটা এক হাজার টাকার নোট আছে। এটা এখন আর কেউ ভাঙিয়ে দিবে না। এক হাজার টাকার নোটের মেরুদণ্ড বাংলাদেশের সব চাইতে শক্ত শিশ্নের চাইতেও শক্ত। [অ্যাঅ্যাই! কেউ আমাকে খারাপ ভাববেন না, প্লিজ। আমি বাংলাদেশির মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করছি না বলে দোষ ধইরেন না। ওটা স্পঞ্জের মতো নরম, মুরগির কচি হাড়ের চাইতেও তুলতুলে। ওর সাথে কি 'অভাঙনযোগ্য' হাজার টাকার নোটের তুলনা করা যায়?]

পৌনে বারোটা বাজে। সূর্য বেশ চড়া। এখন আর শীত লাগছে না। ওম ওম উষ্ণতা। কেরামত ভালো থাকুক। ওভারব্রিজটাও ভালো থাকুক। আমি ফিরে চললাম!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন